মানুষের রায় দিয়েছে তারা, এই সরকারকে আর ক্ষমতায় চায় না : ড. খন্দকার মোশাররফ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৯ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৪৮ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, দেশের মানুষের রায় হচ্ছে এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই ১০ দফা আমাদের যে দাবি তা পূরণ করতে হবে। এই স্বৈরাচারী সরকার আপোসে তা মেনে নিবে না তাই আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন ফয়সালা হবে রাজপথে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা কি রাজপথে ফয়াসালা করার জন্য প্রস্তুত?
আমি আনন্দিত, বীর চট্টলার মানুষ ফয়সালা রাজপথে করার জন্য প্রস্তুত। এই কর্মসূচিকে অনুসরণ করে সারা বাংলাদেশ রাস্তায় নেমে পড়বে এবং এই সরকারকে বিদায় করে দিয়ে রাস্তা থেকে ফিরে যাবে। আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। তারেক রহমানের দেশে ফিরে রাজনীতি করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। নেতাদের মুক্তির পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। এই স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের দাবি শুনবে না। তাই তাদের ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার গঠনে বাধ্য করতে হবে। এই বাধ্য করার আন্দোলনের সূচনা হচ্ছে গণমিছিল। এই সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে না পারলে দেশের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাবে। তাই দেশ ও জনগণকে রক্ষা করতে হলে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে।
তিনি বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গতকাল শনিবার দুপুর ২টায় চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে কেন্দ্র ঘোষিত গণমিছিল নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ সংলগ্ন ওয়াসা মোড় মিছিল-পূর্ব এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ কথা বলেন।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব আবুল হাসেম বক্করের পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপাসেনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবে রহমান শামীম, এ এম নাজিম উদ্দীন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন, সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, আবু সুফিয়ান, আলহাজ এম এ আজিজ,এম এ হালিম, এরশাদ উল্লাহ, এনামুল হক এনাম, নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, নুরুল আমিন, নুর মোহাম্মদ, মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, নাজিমুর রহমান, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আবদুল মন্নান, কাজী সালাউদ্দীন, মোশারফ হোসেন দিপ্তী, মোহাম্মদ সাহেদ, বেলায়েত হোসেন বুলু, সাইফুল আলম, শরিফুল ইসলাম তুহিনসহ নেতারা বক্তব্য রাখেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, এই সরকার জনগণের সরকার নয়, জনগণের ভোট দিয়ে নির্বাচিত নয়। তাই এই সরকারের দেশের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। সে জন্য আজকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে, গণতন্ত্র, অর্থনীতি, বিচার ব্যবস্থা এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে ধ্বংস করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে আমরা ১০ দফা দিয়েছি। বিভাগীয় সমাবেশ থেকে জনগণ আমাদের রায় দিয়েছে। যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে তারা এদেশে গণতন্ত্র আসতে দিবে না। অর্থনীতি মেরামত করতে পারবে না, তারা বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে পারবে না। অতএব আমরা এদেশের মানুষের ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছি। এই দাবি উত্থাপন করার পর, যারা সরকারকে পছন্দ করে না, যারা গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক, সকল গোষ্ঠী, ব্যক্তি এই ১০ দফার পক্ষ নিয়ে সেগুলোকে সমর্থন করেছে। আজকে যুগপৎ আন্দোলনের জন্য তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। আমরা এই যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফা দাবি আদায়ের জন্য প্রথম কর্মসূচি পালন করছি গণমিছিল। এর আগে দুপুর ১টা থেকে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা থেকে মিছিলে যোগ দেন বিএনপি ও অঙ্গসংগনের নেতারা। বিএনপির গণমিছিলটি সমাবেশ শেষে চট্টগ্রামের ওয়াসা মোড়, আলম্স, কাজির দেউড়ী, নুর আহম্মদ সড়ক, লাভলেইন, এনায়েতবাজার হয়ে তিনপুলের মাথায় গিয়ে শেষ হয়। দীর্ঘ এক যুগ পর এত লোকের মিছিল দেখলো চট্টগ্রামের জনগণ। রাস্তার দুই পাশে সাধারণ মানুষ তালি দিয়ে মিছিলকে উৎসাহিত করতে দেখা যায়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ আরো বলেন, এই সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল এবং নির্দলীয় তত্ত্ববধায়ক সরকারের মাধ্যমে এই দেশে নির্বাচন, খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নেতাদের মুক্তির দাবিতে আমরা ১০ দফা প্রদান করেছি। এই ১০ দফা দাবি আদায়ের জন্য সারাদেশে প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল। আপনারা যেভাবে বিভাগীয় গণসমাবেশ চট্টগ্রাম থেকে সফলভাবে শুরু করেছিলেন, তেমনিভাবে এই গণমিছিল গণসমুদ্রে রূপান্তর করেছেন চট্টগ্রামবাসী। বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ১০টি গণসমাবেশ নানা বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে জনগণ সফল করেছিল। সমাবেশগুলো থেকে জনগণ আওয়াজ তুলেছিল, যারা গায়ের জোরে সরকারে আছে, সেই স্বৈরাচার, ভোট ডাকাত, দুর্নীতিবাজ সরকারকে আর এই দেশের মানুষ দেখতে চায় না। এই গায়ের জোরের ফ্যাসিবাদী সরকার, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। এই দেশের মানুষের ভোটের অধিকার তারা ছিনতাই করেছে।
তিনি বলেন, এই সরকার লুটেরা সরকার, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি এবং দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই সরকার কারণে আজকে অর্থনীতির এমন অবস্থা হয়েছে যে, আমনিকরাকরা এলসি খুলতে পারছে না। তার জন্য আজকে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ অবস্থা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে গরিব মানুষ না খেয়ে থাকছে, মধ্যবিত্ত মানুষ আরো গরিব হয়ে গেছে। আগে যেখানে দারিদ্র্যের সীমা ২০ শতাংশের নিচে ছিল, এই সরকারের দুর্নীতি ও অর্থনীতি ধ্বংস করার কারণে সেই দারিদ্র্যের সীমা ৪০ শতাংশে উঠে গেছে। সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করে ধ্বংস করে দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, কিছুদিনের মধ্যে একটা হুইসেল দিবে। সেই হুইসেল মানে সরকার পতনের হুইসেল। তখন লাখ লাখ মানুষের রাজপথ দখল করতে হবে।
মীর নাসির আরো বলেন, ওবায়দুল কাদের বলে নির্বাচন নাকি করতে দিবে না। আমরা নির্বাচন করব, সেই নির্বাচনে জয়ী হব। সেই ভয়ে আজকে সরকারের হৃদকম্পন শুরু হয়ে গেছে। আগামী হুইসেলের জন্য অপেক্ষা করেন, দেখবেন সকালে উঠে তারা সবাই পালিয়ে গেছে। আবার জনতা ক্ষমতায় আসবে।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবে রহমান শামীম বলেন, একটি স্বাধীন দেশে রাজনীতিকদের রাজনীতি করার স্বাধীনতা নেই। কোনো অনুষ্ঠান সফল হতে গেলে সেটিকে ব্যর্থ করার জন্য নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। বাংলাদেশ এই অবস্থায় এসে পৌঁছাবে, সেটা মুক্তিযোদ্ধারা কোনোদিন আশা করেননি।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই স্বৈরাচারী সরকাকে সরাতে হবে। সরকার জনগণকে ভয় পাচ্ছে। ভয় পাচ্ছে বিরোধী কন্ঠস্বরকে। নিজেদের অপকর্মের জন্য তারা ভয়ে ভীত। তা না হলে একটি গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে এত কান্ডকারখানা, এত বর্বরোচিত আচরণ কেন করতে হবে? বর্তমান সরকারের আমলে নির্বাচন আর কেউ বিশ্বাসযোগ্য মনে করে না।