স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে সরকারকে সহযোগিতা করবে বিএনপি : গয়েশ্বর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪৬ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:১৭ পিএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
জঙ্গিবাদের তকমায় ‘বিদেশীদের আর ভুলানো যাবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
আজ বুধবার সকালে এক মানববন্ধনে তিনি এই মন্তব্য করেন। জাতীয় প্র্রেসক্লাবের সামনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে এই মানববন্ধন হয়।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিদেশীদের তকমা দিয়েছেন জঙ্গিবাদের আর মৌলবাদের। বিদেশীদের চোখ পরিস্কার হয়ে গেছে। এগুলো শুধু নাটক আর নাটক। আজকে এসব তকমা চলে না, চলে না। একটা তকমা চলে-গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসুন। সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের জন্য আপনি(প্রধানমন্ত্রী) জাতিকে সহযোগিতা করুন এবং বিএনপি বলে নাই আপনি নামেন আমি ক্ষমতায় যাবো। আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, ভোট আমাকে না-ই বা দিলেন, আপনার ভোটের অধিকারের জন্য আন্দোলন করছি, আমাকে সমর্থন করুন।
‘স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে আন্দোলন নয় বলে জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের ১০ দফা-বহু কথা। আপনি মেনে নিয়ে আপনাকে আমরা পতন ঘটাতে চাই তার আগে আপনি যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুনুরজ্জীবিত করেন তাহলে আমাদের পতনের আন্দোলন করার দরকার নাই। আর যদি না করেন তখন আমাদের পিঠ দেয়ালেই ঠেকা। আমাদের পিছনে হটার সময় নেই। সামনে আমরা গুলি খেতে পারি আপনার পতন রোধ করার শক্তি বাংলাদেশে নাই, বিদেশেও নাই।
তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই, জনগণের দাবির কাছে যদি আপনি নতি স্বীকার করে পদত্যাগ করেন, গণতন্ত্রের পরিবেশ সৃষ্টি করেন অবশ্যই বিএনপি একটি সহনশীল দল, বেগম খালেদা জিয়া একজন অত্যন্ত মহানুভব, তিনি ক্ষমা জানেন, তিনি মানুষের ওপর অত্যাচার করবেন না এবং জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন ক্ষমাশীল ব্যক্তি। সুতরাং সেই দলের নেতাকর্মীরা অবশ্যই আপনাদের নিরাপদ জীবনের জন্য ভবিষ্যতে সহযোগিতা করবে শুধুমাত্র গণতন্ত্রের বন্ধ দুয়ারে খোলার জন্য। রক্তপাত ঘটাবেন না, কথায় কথায় গুলি করবেন না। পুলিশকে জনগণের শত্রু বানাবেন না।’
বিদেশীরা শুধু নয়, জনগণও সেনশন দিয়েছে বলে জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজকে সেনশনের কথা বলছেন। আর বিদেশীরা সেনশন আর কত দেবে। জনগণ সেনশন দিয়ে বসে আছে। সুতরাং জনগণের সেনশন মোকাবিলা করা কঠিন কাজ -এটা কখনো কেউ পারে নাই। সেজন্য আবার বলছি, এনাফ ইজ এনাফ। ১৫ বছরে বহু লুট করেছেন. বহু মায়ের বুক খালি করেছেন, অনেক গুম করেছেন। বাকী সময়টা নিরাপদে শান্তিতে আল্লাহতালা যে ক‘দিন হায়াত দিয়েছে ততদিন বেঁচে থাকুন দোয়া করি। জনগণের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেন। স্বেচ্ছায় যদি আপনি পদত্যাগ করে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেন জনগণ আপনাকে ক্ষমা করলে করতেও তো পারে। কিন্তু সর্বশেষ পর্যন্ত আপনি যদি আপনার ইগো নিয়ে থাকেন, আপনি ওমুকের কন্যা, আমি ওমুক এসব বলে থাকেন তাহলে ক্ষমা তো দূরের কথা অনেক কিছু ভাগ্যে জুটবে না।
১০ ডিসেম্বরের ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ বানচাল করতেই সরকার দলের মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার করাকে ‘অন্তসার শূণ্য’ অভিহিত করে গয়েশ্বর বলেন, এসব করে ১০ তারিখের সমাবেশ সরকার বন্ধ করতে পারেননি। অবিলম্বে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ নেতাকর্মীদের অনতিবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান তিনি। ৭ তারিখে বিএনপি পার্টি অফিসে যে বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে তা ৭১ সালের ২৫ মার্চ তারিখের পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর অপারেশন সার্চলাইটের মতই বলে মন্তব্য করেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
তিনি বলেন, ‘কিছু উচ্ছিষ্ট দল ব্যতীত সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি বিএনপিসহ দেশের আপামর জনসাধারণের। বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোতে আগে অনুমতি দিলেও ঢাকাতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ১১ দিন আগে ২৬টি শর্ত যুক্ত করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়া হয় যদিও আমরা পল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে করার অনুমতি চেয়েছিলাম। আমরা সরকার পতনের জন্য নয়, আমাদের নেত্রীর মুক্তি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে অন্যান্য গণসমাবেশের মতো ঢাকার সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকারের কিছু গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে ভুল তথ্য দিয়ে ভিন্ন পথে পরিচালিত করে। অথচ এর আগে পার্টি অফিসের সামনে শত শত কর্মসূচি আমরা পালন করেছি। ১০ তারিখের সমাবেশ বানচাল করার উদ্দেশ্য না থাকলে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে কেন বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করলেন? ৭ তারিখে বিএনপি পার্টি অফিসে যে বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে তা ৭১ সালের ২৫ মার্চ তারিখের পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর অপারেশন সার্চলাইটের মতই।
তিনি বলেন, ‘দেখা গেল সকল গ্রেপ্তারই অন্তঃসারশূন্য। নয়াপল্টনের ঘটনায় যে মামলা করা হয়, সেখানে ফখরুল ইসলাম এবং আব্বাসের নাম ছিল না কিন্তু তাদেরকে অজ্ঞাত নামার মধ্যে ঢুকিয়ে গ্রেপ্তার করলেন। ফখরুল, আব্বাস তো দেশে অজ্ঞাত না এদেরকে সবাই চেনেন। সীমা লংঘনকারীদের ঈশ্বরও ক্ষমা করেন না। বিএনপি আন্দোলন না করলেও আপনাদের যেতেই হবে, আমি বলতে চাই এনাফ ইজ এনাফ। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আজকের এই প্রতিবাদ সভায় আগত প্রধান অতিথিসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ৭ ডিসেম্বর বিএনপির পার্টি অফিসে যে বর্বরোচিত হামলা হয়েছে, বোমা নাটক সাজানো হয়েছে সাংবাদিকদের মাধ্যমে তা সারা বিশ্বের লোক দেখেছে। প্রেসক্লাব থেকে আমাদের পেশাজীবী নেতা ফখরুল আলমকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের চব্বিশ হাজার নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে। জনগণের ঢেউ দেখে এখন তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই, এজন্য তারা আইন আদালতের কোন তোয়াক্কা না করে জুলুম অত্যাচার শুরু করেছে। আবার আদালতের মাধ্যমে তৃণমূল বিএনপিকে অনুমোদন দিয়ে নতুন পায়তারা শুরু করেছে। খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল সবাই জেলে থাকলেও একজনের পর আরেকজন নেতা দাঁড়িয়ে যাবে, সরকারের পতন হবেই হবে।
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘এখনও সময় আছে আমাদের আটক নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিন। তা না হলে আমরা পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দিব। খুনের মামলার আসামিরা মুক্তি পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ আমাদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এখনও মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। যতই হামলা মামলা গ্রেপ্তার হোক না কেন আমরা আন্দোলন থেকে পিছপা হবো না।
ড্যাবের সভাপতি ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যখন জেগে উঠেছিল তখন ৭ তারিখ বিএনপির পার্টি অফিসে হানা দিয়ে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাসহ শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। স্বৈরাচার সরকার তাদের দালাল দিয়ে টিকে থাকতে চাচ্ছে তাই তৃণমূল বিএনপিকে আদালতের মাধ্যমে নিবন্ধের ব্যবস্থা করেছে। আমরা দুর্বার আন্দোলন করে আমাদের নেতা কর্মীদের মুক্ত করে ছাড়বো।
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, ইন্জিনিয়ার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যব) সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ইন্জিনিয়ার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যব)-এর সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ মোস্তফা কামাল মজুমদার, অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, অধ্যাপক রফিকুল কবির লাবু, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, অধ্যাপক আনিসুর রহমান, রফিকুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান চুন্নু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক, বিপ্লব-উজ জামান বিপ্লব, মির্জা লিটন, সাখাওয়াত হোসেন, এবিএম রুহুল আমিন, জহিরুল ইসলাম, মাহবুব আলম, আবু জাফর খানসহ বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।