বিজয় দিবসে বিএনপির বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা
জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে মিথ্যাচার করেছেন প্রধানমন্ত্রী : ড. খন্দকার মোশাররফ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৩৯ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:১৩ এএম, ৫ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
স্বাধীনতার ৫১তম বার্ষিকীতে আজ শুক্রবার বিকালে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য বিজয় র্যালি করেছে বিএনপি। রঙ-বেরঙের ব্যানার-ফ্যাষ্টুন আর লাল-সবুজ-হলুদ টুপি মাথায় দেয়া নেতা-কর্মীদের হাতে হাতে ছিলো লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা। নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিকাল তিনটায় শুরু হওয়া র্যালি কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়ে ঘুরে আবার নয়া পল্টনে কার্যালয় সামনে এসে শেষ হয় মাগরিবের নামাজের আগেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন উল্লেখ্য করে বলেন, গতকাল জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিথ্যাচার করেছেন।
তিনি বলেন, ‘‘আপনারা সকলে জানেন যে, সরকারের বাধা-বিপত্তি সত্বেও আমাদের ১০টি বিভাগী গণসমাবেশে সফলভাবে হয়েছে। এই সমাবেশগুলো জনগণের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সফল হয়েছে। আজকে যখন দেশের মানুষ এই সমাবেশগুলোর মাধ্যমে বার্তা দিয়েছে তাদেরকে মানুষ আর চায় না। তখন তারা কিংকর্তব্যবিমুঢ়, দিশেহারা হয়ে নানা রকমের কথা বলছে।”
‘‘আমাদের ১০টি সমাবেশে প্রমাণ করেছি, আমরা শান্তিপূর্ণ রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। এই ১০টি সমাবেশের কোনো জায়গায় কোনো অরাজগতা, কোনো ভালোলেন্স, কোনো বিশৃঙ্খলা হয় নাই। অথচ কালকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা নাকী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য সমাবেশ করি।”
ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘‘এই সরকার আজকে তাদের যখন দেখছে- দিন শেষ। দেশে-বিদেশে মানুষকে প্রতারণা করার জন্য তারা বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে, আমাদের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে।”
‘‘আপনারা দেখেছেন, এই সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজকে পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসকে বিকৃত করে তারা এদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে। তারা বলেন, আমরা নাকী ভায়োলেন্স করতে চাই। ভায়োলেন্স যদি এদেশে করে থাকে তাহলে সেটা আওয়ামী লীগ করেছে।”
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, ‘‘আমি গায়ের জোরের প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, কালকে অনেক কথা আপনি বলেছেন। আপনার সব কথার জবাব আমরা দেবো না। শুধু মনে করিয়ে দিতে চাই, এই আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পরে যখন ক্ষমতায় ছিলো তারা এদেশে গণতন্ত্র হত্যা করে আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দল বাতিল করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলো,এই আওয়ামী লীগ রক্ষী বাহিনী দিয়ে ২০ হাজারের বেশি মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছিলো।”
‘‘এই আওয়ামী লীগ গুম-বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড সেই সময়ে রক্ষীবাহিনী দিয়ে শুরু করেছিলো, এই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে সমাতান্ত্রিক অর্থনীতির নামে লুটপাট করে এই দেশে ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছে। এই দেশে এই আওয়ামী লীগ এই দেশে সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে মতপ্রকাশের কন্ঠ রোধ করেছে। আর আজকে নাকী বলে বিএনপি নাকী এই দেশে অন্যায় করেছে। আজকে তারা নিজেদের অন্যায়কে ধামাচাপা দেয়ার জন্য জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়।”
গত ১৪ বছরের সরকারের অপশাসন-দুর্নীতি-অর্থপাচার-লুটপাটের চিত্র তুলে ধরেন খন্দকার মোশাররফ।
‘‘আজকে তাদের(সরকার) লুটপাটের কারণে অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত, দেশে একটা দুর্ভিক্ষ অবস্থা বিরাজমান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ খেতে পাচ্ছে না, মানুষ দিশেহারা। দেশ এক চরম সংকটে পড়েছে।”
সরকার আবার ক্ষমতায় থাকার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ করে এর বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান বিএনপির এই নেতা।
ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য আমরা ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছি। এটা শুধু আমাদের দাবি নয়, এটা জনগণের দাবি। আমরা এই দাবির সমর্থনে এই সরকারকে বিদায় করার লক্ষ্যে যেসকল দল তারা কাজ করবে তাদেরকে আমাদের সাথে যুগপৎ আন্দোলনের আহবান জানিয়েছি।”
‘‘আজকে আবার আমরা আহবান জানাতে চাই, এদেশের দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী এবং গণতন্ত্রমনা সকল ব্যক্তি, সংগঠন, দলের প্রতি-আসুন আমরা সকলে ইস্পাত কঠিন গণঐক্য সৃষ্টি করে এই সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচাই, আমাদের গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পূর্ণ মুক্ত করি, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরে এসে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেই। আপনারা অতীতে প্রমাণ করেছেন-আমরা পারি। অতীতে পেরেছি, ইনশাল্লাহ আগামীতে পারব। সরকারের হুমকি-ধমকি, রক্তচক্ষুকে আমরা কোনো রকমের পাত্তা না দিয়ে সেটাকে জয় করে ইনশাল্লাহ এদেশে জনগণের আকাঙ্খা আমরা পুরণ করবো-এটাই হোক আজকের বিজয় র্যালির শপথ।”
ফকিরেরপুল বাজার থেকে শুরু করে নাইটেঙ্গল রেঁস্তোরা মোড় পর্যন্ত নয়া পল্টনের সড়কে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতি বিজয় র্যালি সমাবেশে রুপ নেয়। জুম্মার নামাজের পরপরই ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ড থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল মিছিল নিয়ে নয়া পল্টনের সড়কে সমবেত হয়।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ছিলো নেতা-কর্মীদের হাতে। তারা ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও সালাম’, ‘এক জিয়া লোকান্তরে, লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে’, ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে’ ইত্যাদি শ্লোগানে সরব-সোচ্চার ছিলো।
জিয়াউর রহমান-বেগম খালেদা জিয়া-ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো ছোট ছোট ট্রাকে একাত্তর সালের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত ‘জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা’র ভাষণ এবং একাত্তরে রচিত দেশাত্মকবোধক গানগুলো বাজানো হয়। পুরনো ঢাকার ঘোড়া গাড়ি এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজকারদের আত্মসমর্পনের দৃশ্যও জাসাসের কর্মীরা অভিনয় করে দেখায়।
বিএনপির র্যালির প্রথমে ছিলো জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতা-কর্মীরা। এরপর ছিলো মহিলা দল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, জাসাস, মতস্যজীবী দল, তাঁতী দল, শ্রমিক দল, যুব দল ও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, শাহাজাদা মিয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতারা কর্মীদের সাথে হেটে র্যালিতে অংশ নেন।
মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খান, মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, যুব দলের মামুন হাসান, মোনায়েম মুন্না, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, রাজিব আহসান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, জাসাসের হেলাল খান, জাকির হোসেন রোকন, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, বিএনপি চেয়ারপার্সন প্রেস উইং ও বিএনপি মিডিয়া সেল সদস্য শায়রুল কবির খানসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে র্যালিতে অংশ নেন।
বিএনপির বিজয় র্যালি ঘিরে নয়া পল্টন, কাকরাইল, বিজয়নগর সড়ক, শান্তিনগর, মালিবাগের সড়কে ব্যাপক পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। মালিবাগের মোড়ে পুলিশ কাটাতার বসিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে।
দুপুর থেকে র্যালি কারণে নয়া পল্টনের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে পুলিশ। ফলে কাকরাইল, মালিবাগ, বিজয়নগর সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।