দেশজুরে বিএনপির ১৮০ নেতাকর্মী গ্রেফতার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৩৭ পিএম, ৮ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৩৪ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
পুলিশের বিশেষ অভিযানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আরও ১৮০ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে যশোরে ১০০, মানিকগঞ্জে ৩৪, মাগুরায় ২০, মুন্সীগঞ্জে ৬, পিরোজপুরে ৫, চট্টগ্রাম ও রাজবাড়ীতে চারজন করে, টাঙ্গাইলে ৩, নেত্রকোনায় ২ এবং নারায়ণগঞ্জ ও পটুয়াখালীতে একজন করে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বিএনপি নেতারা বলছেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ ঠেকাতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সাজানো মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা প্রত্যাহার ও নেতাকর্মীর মুক্তির দাবি জানান তাঁরা।
যশোরে বিশেষ অভিযানের নামে পুলিশ অন্তত ১০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে দাবি বিএনপির। দলটির নেতারা বলছেন, ১ ডিসেম্বর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় দুই শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাবেরুল হক সাবুসহ কয়েকজনকে ধরতে তাঁদের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ।
সাবেরুল হক সাবু বলেন, 'ঢাকার গণসমাবেশ বানচালে পুলিশ গায়েবি মামলা ও নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করছে। এসব করে আন্দোলন ঠেকানো যাবে না। সব বাধা উপেক্ষা করে ঢাকার সমাবেশ সফল করা হবে।'
তবে কোতোয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, 'সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা বিএনপির নেতাকর্মী কিনা তা জানি না।'
চট্টগ্রামে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ছাত্রদলের তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে কোতোয়ালি থানার কাজির দেউড়ি থেকে ইরফানুল হাসান রকি, আরিফুর রহমান ও নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে সকালে এ ঘটনায় মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়কসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন গাড়ির মালিক মানস দেব।
কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবির জানান, সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ দিকে বুধবার রাতে মিরসরাইয়ের মঘাদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আসিফ নুর খানকে মারধর করে পুলিশে দিয়েছে ছাত্রলীগ। পরে একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবিকে না পেয়ে বাড়ি থেকে তাঁর কলেজ পড়ূয়া ছেলে রোবায়েত আশফাককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান। তবে মনিরুল দাবি করেন, রাত ১টার দিকে অভিযানের নামে ডিবি পুলিশের শতাধিক সদস্য বাড়িতে ঢুকে সব তছনছ করেন। পরে আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে যান।
পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় বিস্ফোরক আইনে বিএনপির ৯৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাতে মামলা করেন দুলাল কাজী। ওসি মো. আসিকুজ্জমান জানান, পুলিশ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাহফুজুল ইাসলাম উজ্জ্বলসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদিকে ইন্দুরকানীতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফরিদ আহমেদ ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব জুয়েল রানাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মাগুরার চারটি থানা এলাকা থেকে বিএনপির ২০ নেতাকর্মীকে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে শালিথায় ৯, সদরে ৫, শ্রীপুরে ৩ ও মহম্মদপুর থানায় তিনজন রয়েছেন। সবাইকে নিয়মিত মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান থানাগুলোর ওসি।
পটুয়াখালীর গলাচিপায় বুধবার রাতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বিএনপিকর্মী মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওসি শোনিত কুমার গায়েন এ তথ্য জানান। তবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের দাবি, রাজনৈতিক কারণে মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাজবাড়ীর পাংশায় বিস্ফোরক মামলায় বুধবার রাতে বিএনপির চার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওসি মাসুদুর রহমান জানান, বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আকরাম হোসেন সুমন, তৌহিদুর রহমান, এনামুল হক ও মতিন বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিস্ফোরক মামলায় বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বাচ্চুসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। থানার এসআই আবদুল করিম জানান, গত ৩০ নভেম্বর ৫৩৮ জনের নামে পুলিশের মামলায় গ্রেপ্তাররা এজাহারভুক্ত আসামি।
নেত্রকোনা শহরের কুরপাড় এলাকায় বৃহস্পতিবার বিএনপির মিছিল থেকে দু'জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন- শরিফুল আলম সবুজ ও রাজন আহমেদ। নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি খন্দকার শাকের আহমেদ এ তথ্য জানান।
মানিকগঞ্জের সাতটি থানায় বিস্ফোরক আইনের নয়টি মামলায় বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর, শ্রীনগর ও গজারিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিএনপির ছয় নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে গত ছয় দিনে জেলায় দলটির অন্তত ৪৭ জন গ্রেপ্তার হলেন।
এদিকে বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের গুলিতে বিএনপি কর্মী মকবুল হোসেন নিহত ও সারাদেশে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ, জয়পুরহাট, বগুড়া, গাইবান্ধা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেন দলটির নেতাকর্মীরা। তবে সুনামগঞ্জ ও বগুড়ায় পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুরে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং নৈরাজ্য প্রতিহতে বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার সকালে রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীকের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল হয়। আর সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিল শেষে লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকায় পথসভা করে আওয়ামী লীগ। এতে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী এমপি।