শত বাধা উপেক্ষা করে রাজশাহীর সমাবেশে লক্ষ লক্ষ জনতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫১ পিএম, ৩ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৫৭ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ প্রচন্ড রকম বাড়াবাড়ি করেছে। তিন দিন আগে থেকেই জনগন সমাবেশের মূল মাঠে আসার জন্য চেষ্টা করলেও পুলিশ তাদেরকে ঢুকতে দেয়নি এবং প্রচন্ড রকমের হয়রানী করেছে। প্রশাসন ও সরকারী দলের নির্দেশেই গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়ার পর বন্ধ করতে বাধ্য করা হয় তিনচাকার পরিবহনও।
পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন-‘দাবী-টাবি কিছুই না, বিএনপি’র সমাবেশ বন্ধ করতেই গরীবের পেটে লাথি মারা।’ এর মধ্যেও কিছু কিছু সিএনজি চালক ও অটো চালক তাদের গাড়ী বের করলে তাদেরকে প্রচন্ড রকম হয়রানি ও মারধর করেছে পুলিশ। সকল বাধা, হামলা-মামলা ভেদ করে রাজশাহীর সমাবেশে যোগ দিয়েছে লক্ষ লক্ষ জনতা। পদ্মাবিধৌত রাজশাহী ছিল জনসমাগমে পূর্ণ। এক তারা গতকাল পর্যন্ত সমাবেশ মাঠে ঢুকতে না পারলেও পাশের ঈদগাহ মাঠ, পাশের রাস্তাসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়ে চাল-ডাল-মুড়ি-চিড়া-গুড় সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়েছে সমাবেশ ময়দানে। খিচুড়ি রান্না করে মানুষের মাঝে বিতরণ করতে দেখা গেছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এ এক বিস্ময়কর অভূতপূর্ব দৃশ্য-যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। সমাবেশের আগের দিন গোটা রাজশাহী ছিল মিছিলের নগরী।
আজ রাজশাহীর ভোর ছিল জনমানুষের কোলাহলে এব অনন্য ভোর। রাজশাহীর মানুষ কতটা অতিথিপরায়ণ তা তারা প্রমাণ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আশপাশের জেলাগুলো থেকে ট্রেনে-মটরসাইকেল ও ট্রলারে করে দলে দলে মিছিলসহ যোগ দেয় সমাবেশে। সমাবেশে আসার পথে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নাটোরে জনতার ওপর সহিংস আক্রমণ করা হয়। বিএনপি নেতাকর্মীসহ জনগণের ওপর। বিভিন্ন স্থানে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে পুলিশ সড়ক আটকিয়ে দিলেও কিংবা মিছিলে বাধা দিয়ে ও হামলা করেও জনতার স্রোত রোধ করা যায়নি।
এদিকে সকাল ৫টা থেকে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকায় একত্রিত হতে থাকে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার বিএনপির নেতা কর্মিরা। সকাল ৮টা থেকে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বিএনপির নেতা কর্মিরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে মিছিল নিয়ে মাদ্রাসা মাঠের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। রাজশাহী নগরী পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। রাজশাহীর রাজিব চত্বরে কথা হয় গোদাগাড়ী উপজেলা থেকে আসা আশরাফুল আলমের সাথে।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য এ গণসমাবেশে এসেছি। এ জালিম সরকারের পতন হবে ইনশাল্লাহ। মোজাম্মেল হক বলেন, ফজরের নামাজ পড়ে গণসমাবেশের উদ্দেশ্য অটোতে রওনা দিই। আসার পথে দুইবার পুলিশের বাধায় পড়ি। পুলিশ বাধা দিলে হাঁটতে শুরু করি। পায়ে হেঁটে এসেছি।
এদিকে রাজশাহী মহানগরীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ আজ শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় পবিত্র কোনআন তেলাওয়াতের পর জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এখন চলছে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নেতৃত্বে দেশাত্মবোধক গান ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য।
এর আগে সকালে মাদ্রাসা মাঠের দুটি গেটের তালা খুলে দিলে বিএনপির নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন। সমাবেশস্থল থেকে আশপাশের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাগানো হয়েছে দেড় শতাধিক মাইক।
সমাবেশ প্রস্তুতির মিডিয়া উপ-কমিটির আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসেন তপু বলেন, ঢাকা থেকে জাসাসের কেন্দ্রীয় নেতারা এসেছেন। এছাড়া বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে জাসাসের শিল্পীরা কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হুমকি-বাধা, লাঠি নিয়ে সড়কে অবস্থান ও যানবাহন থেকে নামিয়ে দেয়ার পরও রাজশাহীর গণসমাবেশস্থলে জড়ো হয়েছেন তারা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনাকীর্ণ হয়ে উঠছে সমাবেশস্থল। স্লোগান আর মিছিলে মিছিলে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।
সমাবেশস্থলে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিএনপি কর্মী সেকেন্দার আলী বলেন, আমাদের ইউনিয়ন থেকে প্রায় হাজার খানেক লোক এসেছে। মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশির কারণে আমরা পদ্মা নদী দিয়ে ট্রলারে করে গণসমাবেশে এসেছি। তারপরও পথে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিজয় বশাক বলেন, সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে দুপুর ২টা থেকে। তবে তারা এখনই শুরু করেছে। আমাদের অতিরিক্ত দেড় হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি, জ্বালানি তেল ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে বিএনপি তাদের দশটি বিভাগে সমাবেশ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীতে আজ সমাবেশ করছে। দুপুর ২টার দিকে নগরের ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে এ সমাবেশের মূল পর্ব শুরু হওয়ার কথা।
সমাবেশে প্রধান অতিথি রয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত তিনদিন থেকে বিভিন্ন জেলার লক্ষ লক্ষ নেতা কর্মী সমাবেশ স্থলের চারপাশে অবস্থান করছিল। মাদ্রাসা মাঠের গেট খোলার সাথে সাথে মাদ্রাসা মাঠ ভর্তি হয়ে যায়। সমাবেশ স্থলের আশেপাশের রাস্তা ও পদ্মাপাড় প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
শরিফুল ইসলাম/সেলিম সানোয়ার পলাশ, রাজশাহী থেকে।