নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩৮ পিএম, ৩ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:০৯ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না। আগামী ১০ তারিখের ঢাকায় মহাসমাবেশের একটায় উদ্দেশ্য শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে বাধ্য করা। আর এজন্য সবাইকে জেগে উঠতে হবে ঢাকার মহাসমাবেশকে সফল করতে।
তিনি আরো বলেন, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে নরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন জরুরি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। আর গণতন্ত্র মুক্তি পেলেই তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জননন্দিত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন এবং দেশনায়ক তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, হত্যা-নির্যাতন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে বিভাগীয় মহাসমাবেশের অংশ হিসাবে আজ শনিবার রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে আয়োজিত মহাসমাবেশে তিনি একথা বলেন।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. এরশাদ আলী ইশার সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক রাষ্ট্রদূত বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম খান, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহামুদ টুকু।
এতে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক মেয়র ও এমপি মিজানুর রহমান মিনু, উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল লতিফ খান, বিএনপি চেয়াপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাড. শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, আওয়ামী লীগ এখন কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি লুটেরাদের দলে পরিণত হয়েছে। কয়েকদিন আগে ঈশ্বরদীতে অর্থ মামলায় ২৫ জন তৃণমূল কৃষককে জেলে দেয়া হয়েছে অথচ আওয়ামী লীগের লোকজন দেশে লুটপাট চালিয়ে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। দেশ এখন তলানীতে চলে গেছে। ব্যাংক, শেয়ার মার্কেট, বিদ্যুৎ, জ্বালানি সব সেক্টর লুট করে নিয়েছে। গত এগার বছরে ১৯ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আর দশ বছরে ৮৬ লক্ষ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এটি আমার কথা নয় এটি গবেষণার তথ্য।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে কিন্তু এরা ক্ষমতায় এসে এই আইন পাল্টে দিয়েছে। কারণ তারা জানে কোনো নির্বাচনে বিজয় হতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে এত জুলুম নির্যাতন গুম খুন করেছে তারপরেও বিএনপির নেতাকর্মীর সংখ্যা বাড়ছেই।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আওয়ামী লীগ পুলিশের বন্দুক পিস্তল দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। ৯টি বিভাগীয় শহরে শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ করেছে বিএনপি। মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে বিএনপির সমাবেশে স্রোতের মতো আসছে। এতে সরকার দিশেহারা হয়ে গেছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ। এখন তাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এখন ভয় পাচ্ছে। এই বুঝি তাদের ক্ষমতা গেল! ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের ভয়ের শেষ নেই। কারণ তারা এই দেশে এমন কিছু কাজ করেছে যে, নিজেদের (আওয়ামী লীগের) ওপর কোনো আস্থা নেই।
নয়া পল্টনের গণসমাবেশ প্রসঙ্গ ফখরুল বলেন, আমরা নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। কিন্তু তারা তাদের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ঘুম হারাম করে ফেলেছে। তারা আতঙ্কে ভুগছে। আমরা তো নয়া পল্টনে অসংখ্য সমাবেশ করেছি, যেখানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন। তখন কোনো সমস্যা হয়নি। এখন তারা জঙ্গি নাটক শুরু করেছে। নিজেদের প্রয়োজনে জঙ্গি বানায়। নিজেরাই বাস পুড়িয়ে অগ্নিসন্ত্রাস করে। আর দোষ চাপায় বিএনপির ওপর। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।
তিনি বলেন, রাজশাহীর এই সমাবেশকে সফল করতে ক’দিন আগে থেকেই রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করে। তারা মাদ্রাসা ময়দানে প্রবেশ না করতে পেরে পাশের ঈদগাহ ময়দানে কয়েক দিন ধরে অবস্থান করেন। এজন্য এ সকল ত্যাগী নেতাকর্মীদের তিনি ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, পুলিশ এ সময় চরম নির্দয় ব্যবহার করেছে। তাদের জন্য নির্মিত দেড় শতাধিক টয়লেট ভেঙ্গে দেয়। এমনকি, রান্না-বান্নার চুলা বাসনপত্র ফেলে দেয়। তিনি পুলিশ বাহিনীকে এসব আচারণ থেকে বিরত থাকতে হুঁশিয়ারি দেন। তিনি তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমানসহ ৩৫ লক্ষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ সকল কারা বন্দির মুক্তির দাবি করেন। এর আগে দুপুর ১টা ২২ মিনিটে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সভামঞ্চে এসে উপস্থিত হলে উপস্থিত জনতা স্লোগান আর করতালী দিয়ে তাদের স্বাগত জানান।
এ সময় তিনি মঞ্চের চারদিকে ঘুরে জনতার উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে তাদের প্রতিউত্তর দেন। সভায় রাজশাহীর সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ছোটভাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অবঃ) শরিফউদ্দিন মহাসচিবের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন। এ সময় মঞ্চে প্রবীণ রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী অ্যাড. কবীর হোসেন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বগুড়া সদরের এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, সাবেক মন্ত্রী ও রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাড. রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাবেক বিএনপির কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ সম্পাদক সাবেক মেয়র ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, রাজশহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পুঠিয়া দুর্গাপুরের সাবেক এমপি অ্যাড. নাদিম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় বিএনপির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শামসুজ্জোহা খান, জাতীয়তাবদী মহিলাদলের সভানেত্রী মিসেস আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, সাবেক এমপি আসিফা আসরাফি পাপিয়া, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শফিকুল হক মিলন, বিএনপির কেন্দ্রীয়সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চন্দন, নওগাঁর সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হক, বগুড়া কৃষক দলের নেতা সাবেক এমপি মোশারোফ হোসেন, ময়মনসিং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাসান জাকির তুহিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আহমেদ উলফাত, শ্রমিক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন, তাঁতী দলের সভাপতি সাইদ মাহামুদ জুয়েল, জাসাসের সভাপতি হেলাল খান, জিয়া পরিষদের সভাপতি প্রফেসর এন্তাজ হোসেন, জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সভাপতি মাও. রেজাউল হকসহ রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত একশ নেতা বক্তৃতা করেন।
সকাল পৌনে ১১টায় কোরআন তেলাওয়াত ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানের সুস্থতা কামনা করে দোয়ার মাধ্যমে সভার কাজ শুরু হয়। এর আগে মাদ্রাসা মাঠে সমবেত জনতার বিনোদন এবং উজ্জীবিত রাখার জন্য জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালনায় পাশেই তৈরি বিশাল মঞ্চ থেকে গণসংগীত পরিবেশন করে জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্পীবৃন্দ। আবেগঘন সংগীতে সংগীতে মাদ্রাসা ময়দানে সমবেত বিএনপির নেতাকর্মী সমর্থকরা উজ্জীবিত থাকে।
সমাবেশে নজরুল ইসলাম খান প্রধান বক্তার বক্তৃতায় বলেন, এই বিভাগীয় সমাবেশ বানচাল করতে পুলিশ বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছে সরকার। আগের দিন নেতাকর্মীদের রান্না-বান্নার চুলা হাঁড়ি পাতিল ফেলে দিয়েছে। দেড় শতাধিক নির্মিত টয়লেট ভেঙ্গে ফেলেছে। আপনারা পুলিশকে দিয়ে যেমন আগের দিন রাতে ভোটের বাক্স ভর্তি করেছেন তেমন পুলিশকে দিয়ে এইসব অপকর্ম করাচ্ছেন। এইসব আমাদের কথা নয় আন্তর্জাতিক মিডিয়ার। ক’দিন আগেও জাপানের রাষ্ট্রদূত এই রাতের নির্বাচনের কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, গত কয়বছরে ১২ হাজার মানুষ কোটিপতি হয়েছে। আর করোনাকালে সাড়ে ৩ কোটি মানুষ গরীব হয়েছে। হালাল উপার্জন করে এইসব মানুষ কষ্টে আছে। এজন্যই মানুষ পরিবর্তন চায়।
তিনি আরো বলেন, আজকের পত্রিকায় আছে ৮ হাজার কেজি চালসহ আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার হয়েছে। ফরিদপুরের এক ছাত্রলীগ নেতা ২ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। আপনারা কখনো জীবনে শুনেছেন বিদেশে সেকেন্ড হোম, বেগমপাড়া আছে। এই সরকারেরই সব সৃষ্টি। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। গণতন্ত্র ফিরে এলেই আমাদের গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। তারেক রহমান মুক্তি পাবেন।
আতিকুর রহমান রুমন/আব্দুস সবুর/কালাম আজাদ, রাজশাহী থেকে।