বন্দুক পিস্তল নিয়ে ক্ষমতায় বসে থাকাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য : মির্জা ফখরুল
শরিফুল হাসান, দিনকাল
প্রকাশ: ০৭:২৭ পিএম, ৩ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৪৪ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গত তিন দিন ধরে পদ্মার ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে হু হু করে লেগেছে। তারপরও আপনারা এখান থেকে এক বিন্দুও সরেননি। কীসের ভালোবাসায়, কীসের তাগিদে আপনারা তিন ধরে এখানে কাটালেন? একটি মাত্র কারণ, আপনারা মুক্তি চান। ভয়াবহ দানবের হাত থেকে আপনারা মুক্তি চান। কিন্তু বন্দুক পিস্তল নিয়ে ক্ষমতায় বসে থাকাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য।
আজ শনিবার (০৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর এতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে আয়োজিত বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ফেসবুকে যদি কেউ কোনো ইঙ্গিতে প্রধানমন্ত্রী কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে তাহলে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হবে। জামিন নাই। কোন দেশ? দাবি করেন গণতান্ত্রিক দেশ অথচ প্রধানমন্ত্রী খারাপ কাজ করলেও সমালোচনা করা যাবে না। এই দেশের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। সকলের অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠিত করব বলে যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটা চায় না। আওয়ামী লীগের লক্ষ একটাই যেমন করে পারে বন্দুক পিস্তল নিয়ে ক্ষমতায় বসে থাকা। এই দেশ কি তাদের? এই দেশ আমাদের, এই দেশ জনগণের।
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে বলেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে ৬০০ নেতাকর্মী গুম হয়ে গেছে। এর মধ্যে পাবনার ঈশ্বরদীতে জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনের মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। ২৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে। এটাই এই সরকারের চরিত্র। এভাবে তারা বিরোধীদলকে নির্মূলকরে দিতে চায়। এতে কি নির্মুল হয়েছে? রাজশাহীর মানুষ ভয় পেয়েছে? পায়নি। আরও উত্তালে জেগে উঠেছে। এই লড়াইয়ে আমাদের জয়ী হতেই হবে।
আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ আর কোনো রাজনীতি দল নেই। এটা একটা লুটেরা দলে পরিণত হয়েছে। নিজেরা লুট করে করে সম্পদের পাহাড় করেছে অথচ সাধারণ মানুষকে গরীব করছে। কয়দিন আগে ২৫ জন কৃষককে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য তাদের জেলখানায় নেওয়া হয়েছিল। আর হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে ব্যাংক খালি করে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা হয় না।
ইসলামী ব্যাংক থেকে ৯টা গায়েবী কোম্পানীকে টাকা দিয়ে ব্যাংক খালি করে দেওয়া হয়েছে। সরকার পরিকল্পিতভাবে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমাদের রাজনৈতিক কাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, এই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছে। ওই সময় গানপাউডার দিয়ে একটা বাসেই ১১ জনকে হত্যা করেছিল। এই তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৫টা নির্বাচন হয়ে গেল। এরা ক্ষমতায় আসার পরে কী করল? ওই ব্যবস্থা পাল্টে দিল। কেন, তারা কিছুদিন পরে বুঝতে পারল জনগণ তাদের পছন্দ করছে না। তাই সেটা পাল্টে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলো।
তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে আসতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তত্বাবধায়ক সরকার বিধান চাই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। অন্যথা এই দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কী যেন নাম তার? ওবায়দুল কাদের সাহেব। তিনি বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী সির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যে সংবিধান তোমাদেরকে ক্ষমতায় রাখার জন্য বারবার কাটাছেড়া করেছো, সেই সংবিধান? তিনটা অনুচ্ছেদ রেখে, যার অধীনে একটা কথাও বলা যাবে না। সেই সংবিধান চলতে পারে না।
ঢাকার সমাবেশ সর্ম্পকে ফখরুল বলেন, পার্টি অফিসের সামনে আগামী ১০ তারিখে সমাবেশটা করতে চাই। ওদের ঘুম নাই। ঘুম হারাম হয়ে গেছে। নিজের ওপর আস্থা নেই বলে ভয় পান। এই গেল বিএনপি এলো, বিএনপি এলো ভাবতে থাকে। আমরা নয়াপল্টনে অনেক সমাবেশ করেছি। লক্ষ লক্ষ মানুষ হয়েছে। ওইদিন তো কোনো সমস্যা হয় নাই।
বিএনপি অগ্নি সন্ত্রাস করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা গল্প করছে জঙ্গি তৈরি করে বিএনপিকে ধরার জন্য। নিজেরা নিজেরা বাস পোড়ায়, আর বলে বিএনপি করছে। গুরুদাসপুরে একটা দোকান, ওই দোকানের মধ্যে নাকি ককটেল পেয়েছে। ওরা নিজেরা রাখে, তারপরে বলে এটা বিএনপির লোকজন করেছে। এটা বিএনপির ইতিহাসে নেই।
তিনি পুলিশের সমালোচনা করে বলেন, কেন ভাই পুলিশ? আপনারা কি এই দেশের মানুষের সন্তান না? অত্যাচার নির্যাতন চালাবেন না। এই দেশের মাানুষ কোনোদিন অন্যায় সহ্য করেনি। পরিষ্কার করে বলছি, আপনাদের সাথে আমাদের শত্রুতা নেই। আপনারা রাষ্ট্রের কর্মচারী, আমরা রাষ্ট্রের মালিক ।
বিএনপির ভবিষ্যৎ কর্মসূচী নিয়ে তিনি বলেন, খবরের কাগজ খুললেই, খুন, ধর্ষণ, মারামারি, কাটাকাটি ছাড়া খবর নাই। আ,লীগের পাতি নেতাদের অত্যাচারে টেকা যায় না। বাড়ি দখল করে নেয়, দোকান দখল করে নেয়। আর কতকাল মানুষ এভাবে কষ্ট করবে? আজকে আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই রুখে দাঁড়াতে হবে। নইলে একাত্তরের স্বাধীনতা টিকবে না। সব ধ্বংস হয়ে যাবে।
আমাদের এই আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়। খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর জন্য নয়। তারেক রহমানের জন্য নয়। আমাদের মন্ত্রী হবার জন্য নয়। এই আন্দোলন অধিকার ফিরে পাবার আন্দোলন। দুবার ভোট দিতে পারলাম না আমরা ভোটের অধিকার ফিরে পেতে আন্দোলন করছি।
আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। পরিষ্কার কথা, এবার হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। এবার তত্বাবধায়ক সরকারের হাতে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নির্বাচন হবে। সমস্ত দল অংশগ্রহণ করবে। একটা পার্লামেন্ট গঠন হবে, জাতীয় সরকার হবে। সে সরকার নতুন করে অর্থনীতিকে সজীব করে তুলবে।
তিনি বিএনপির সর্মথকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি তরুণ-যুবকদের প্রতি আহ্বান রাখতে চাই, আপনারা জেগে উঠুন। দুর্বার গতিতে আসুন। এই ভয়াবহ সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
এর আগে সকাল ৯টায় বিএনপির এই বিভাগীয় সমাবেশ শুরু হয়। এতে রাজশাহী বিভাগের আট জেলার নেতাকর্মীরা যোগ দেন। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মাদ্রাসা মাঠ। এ সমাবেশের আগে ধর্মঘট থাকায় তিন দিন আগে থেকেই নেতাকর্মীরা এসে অবস্থান করছিলেন।
সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা রহমান ও ইকবাল মাহমুদ টুকু।
এছাড়াও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, হাবিবুর রহমান হাবিব, এমএ মতিন, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আবদুল মান্নান তালুকদার, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, মহিলা দল সভাপতি আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।
সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈসা।