সরকারের অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতনে মানুষ আজ জেগে উঠেছে : ডা. জাহিদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৯ পিএম, ২ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ১১:২৬ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘দেশের মানুষ একের পর এক সব জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে আজ দিশেহারা। সরকারের অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতনে মানুষ আজ জেগে উঠেছে। মানুষ এ সরকারের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এ সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বাস-ট্রাক সকল যানবাহন বন্ধ করে দেয়ার পরেও আমাদের নেতাকর্মীরা এবং সাধারণ মানুষ বিএনপির প্রতিটি বিভাগীয় গণসমাবেশে তাদের ব্যাপক উপস্থিতি প্রমাণ করেছে তারা আর এ অবৈধ ভোটারবিহীন সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। দেশের মানুষ তারা তাদের ভোটে সরকার নির্বাচিত করতে চায়। তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। তারা দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতি আর সহ্য করতে পারছে না। ঘুম থেকে উঠে দেখে লিটারপ্রতি ১২-১৪ টাকা তেলের দাম বেশি। কেজিপ্রতি ১০-১২ টাকা চিনির দাম বেশি। যেন এটা মগের মুল্লুক। হীরক রাজার দেশের চেয়েও খারাপ।’
তিনি বলেন, এখন আবার জ্বালানি তেল এবং গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন থেকে ক্ষমতা কেড়ে সরকার নিজেই নিয়ে নিয়েছে। যখন যা দরকার তখন দাম বাড়াতে পারে। অর্থাৎ লুটপাটের একটা সীমা থাকা উচিত। এবং বিজ্ঞজনেরা বলছেন, ১০ লাখ কোটি তারা দেশের বাইরে পাচার করেছে। একজন কৃষককে ব্যাংক থেকে ৫-৬ হাজার টাকা লোন নিতে ৬ মাস থেকে ১ বছর ব্যাংকে ঘুরতে হয়। আর তাদের (আওয়ামী লীগ) ত্রিশ দিন লাগে নাই। ৯০০ কোটি টাকা যে ছেলে লোন নিয়েছে, তার বয়স মাত্র ২৪ বছর। ওই কোম্পানির বয়স এখনও ত্রিশ দিন হয়নি। লুটপাট এমন একটি পর্যায়ে গেছে সাধারণ মানুষের টাকা এখন তাদের নিজের পকেটের টাকা মনে করছে। কাজেই দেশকে যদি রক্ষা করতে হয়, দেশের অর্থনীতিকে যদি রক্ষা করতে হয়, দেশের মানুষকে যদি বাঁচাতে হয় সর্বোপরি এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রকৃত গণতন্ত্র যদি ফিরিয়ে দিতে হয়, তাহলে এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় এবং নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন ছাড়া কোনো গত্যন্তর নাই। যার জন্যই সাধারণ মানুষ পলোগ্রাউন্ড থেকে শুরু করে কুমিল্লার টাউন হল ময়দান পর্যন্ত যে আটটি গণসমাবেশ হয়েছে এবং আজ হবে রাজশাহীতে আর ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর হবে ১০ নাম্বার গণসমাবেশ। অর্থাৎ মানুষের ব্যাপক উপস্থিতির মাধ্যমেই আজকে প্রমাণিত বিএনপির যে দাবি এটি গণমানুষের দাবি। যার জন্যই এটি বিএনপির জনসভা নয়। এটি বিএনপির গণসমাবেশ। অর্থাৎ বিএনপি এবং সাধারণ মানুষ আজকে একাকার একই দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। এ অবস্থার মধ্যে মানুষ আন্দোলন-সংগ্রামে মানুষের কথা বলতে গিয়ে রক্ত যখন দেয়া শিখেছে বাঙালি কোনো আন্দালনে পরাজিত হয় নাই। ইতিহাস সাক্ষী দেয় কোনো আন্দোলনে যখন রক্ত ঝরে সে আন্দোলন বৃথা যায় না। সে আন্দোলনে জয়যুক্ত হয় জনগণ।
গতকাল বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শহরের বেঙ্গল কনভেনশন হলের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন।
সভা সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান ও সাংগঠনিক সম্পাদক বকসী মিছবাউর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক মেয়র ফয়জুল করিম ময়ুন, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র জেলা বিএনপি নেতা মো. মহসীন মিয়া মধু, সহ- সভাপতি নাসির উদ্দিন মিঠু, মৌলভী আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকী, হেলু মিয়া, এম এ মুকিত, মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক, আশিক মোশাররফ, ফয়সল আহমেদ, জেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য মোশারফ হোসেন বাদশা, জেলা আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জেলা বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সহ- সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ, জেলা বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক ও জেলা যুবদল সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জ্বল, জেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি স্বাগত কিশোর দাশ, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক, জেলা ওলামা দলের আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হেকিম, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহান, কমলগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া শফি, শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূরে আলম সিদ্দীকি, কুলাউড়া পৌরসভার সাবেক বিএনপি নেতা মেয়র কামাল আহমেদ জুনেদ, রাজনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. জিতু মিয়া, বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাফিজ প্রমুখ।
এছাড়া এ বিশেষ সভায় জেলা বিএনপির উপদেষ্টা সিনিয়র আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সুনীল কুমার দাশ সম্প্রতি বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টন ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে অতিথিরা ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন আরও বলেন, আজকে জনগণের সাথে পুলিশ প্রশাসন আইন আদালতকে মুখোমুখি করা হচ্ছে। সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন এই প্রশাসন এই পুলিশ এই আইন-আদালত জনগণের পাশে আসবে। আজকে যারা শাসক দল আওয়ামী লীগ একঘরে হয়ে যাবেন। এখনও সময় আছে সেইফ এক্সজিট খুঁজেন। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিন। জাতীয় নির্বাচন দিন। দেয়ালের লিখন পড়তে শিখুন। খালেদা জিয়ার মুক্তি দিন। তাহলেই কেবল রক্ষা, অন্যথায় দেশের সাধারণ মানুষ গণআন্দোলনের মুখে ভেসে যাবেন।
তিনি দলীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি সকল বিভেদ ভুলে যাওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, আগামীতে দেশে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার আদায়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে এই অবৈধ সরকার বিদায়ের এক দফার আন্দোলন দ্বিতীয় দফায় ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে শুরু হবে। কেন্দ্র ঘোষিত এসব এই আন্দোলনে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকারের পতন ত্বরান্বিত করতে হবে।
তিনি বলেন, আজকে খালেদা জিয়া জেলখানায়। পৌনে পাঁচটা বছর হয়ে গেল। এই ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখ এলে পাঁচ বছর হবে। একটা মানুষ সারাদিন বসে থাকেন। মা পারেন না ছেলের কাছে যেতে। ছেলেও পারেন না মায়ের কাছে আসতে। এ মুহূর্তেও তিনি বন্দি জীবনযাপন করছেন। যদিও সরকার বলে যে তিনি মুক্ত। কিন্তু এমন মুক্ত যে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতাল আর বাসা। এর বাইরে আর কোথাও যেতে পারেন না। চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে তো দূরের কথা এর বাইরে অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে আছেন। চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। আর এখন তার পাসপোর্টও ফেরত দেয়া হচ্ছে না, নবায়নও করা হচ্ছে না এবং মিথ্যা মামলা সাজিয়ে সাজা দিয়ে এ অবৈধ সরকার দেশে ফিরে আসার পথরুদ্ধ করতে চাচ্ছে।
তিনি বলেন, সাংগঠনিকভাবে বিএনপি এখন নতুন অধ্যায়ে চলে গেছে। অর্থাৎ বিএনপি এখন তার তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ পছন্দের নেতাদের নির্বাচিত করবে। বিএনপি আর পূর্বের সেই যে অবস্থান ছিল নয়াপল্টন থেকে অথবা কোনো অফিস থেকে কমিটি দেবে। সেখান থেকে সরে এসেছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব সাংগঠনিক বিষয়াদি সরাসরি দেখভাল করছেন। এরকমভাবে মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি হবে। দলের নেতৃত্ব দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচিত করবেন। কিন্তু নেতত্ব¡ নির্বাচনের সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, মানুষগুলো রাজপথে আছে, নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নেয়। আন্দোলন-সংগ্রামে যাদের পাওয়া যায় তাদের স্থান দিতে হবে। যে নেতা রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিবেন এবং দলকে সামনে আর এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
ডা. জাহিদ আরও বলেন, ‘মরহুম অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান কিন্তু দ্বিতীয়টা আমাদের কাছে আর আসছে না। দীর্ঘকাল যিনি বাজেট দিয়েছেন। তার মতো বিরল প্রাজ্ঞ অর্থমন্ত্রী একজনও নেই। অর্থনীতি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ধরে রাখার জন্য কতটুকু শক্ত হতে হয়, তা তিনি দেখিয়েছেন। কখনও কখনও দলীয় অনেক কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে ঠিক নেতার কথামতো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বক্তব্য ছিল ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। দলের চেয়ে দেশ বড়। একইভাবে তার সহকর্মী এম সাইফুর রহমান দেশের অর্থনীতির শৃঙ্খলা ধরে রাখার জন্য যে নেতৃত্ব দিয়েছেন, অনেক সময় সর্বোচ্চ আসীন প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের অনেক সদস্যও তার কথায় শেষ পর্যন্ত সায় দিতে হয়েছে দেশের জন্য। দেশের মানুষের জন্য। কল্যাণের জন্য। আজকের মতো এই রকম লুটেরা অর্থনীতি বা রাজনীতি বা দেশকে একদম দেউলিয়াত্বের দিকে নিয়ে যাওয়ার যে একটি চরম পর্যায় বর্তমান সরকার যে দেখাচ্ছে বা দেখিয়েছে বা আগামীদিনের যে সংকট সামনে আসছে সেটি মোকাবিলা করার মতো কেউ নেই। আজকে অর্থমন্ত্রীকে চোখেও দেখা যায় না। পত্রপত্রিকা লিখে তিনি কোথায়?। অর্থাৎ যে মানুষটি আজ অর্থনীতির বিশৃঙ্খলার সময় সংকটের সময় সবচেয়ে বেশি জোরালো বক্তব্য রাখার কথা তিনি আজকে চুপচাপ।’
তিনি বলেন, দেশের তলাহীনঝুড়ি যখন ছিল। সেই তলাহীন ঝুড়ি থেকেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ৮০ সালের মধ্যেই চাল থেকে রপ্তানি করেছিলেন এবং আমরা যখন দুর্ভিক্ষের জন্য লঙ্গরখানায় থালা নিয়ে যেতাম ’৭৪ সালে। যাদের বয়স একটু বেশি আছে তাদের মনে থাকার কথা। সেই মানুষ চাল রপ্তানি করলেন ’৭৯ সালে। অর্থাৎ নেতৃত্বের যদি দূরদর্শিতা থাকে, নেতৃত্বের যদি সততা থাকে, নেতৃত্বের যদি ভিশন থাকে, দেশপ্রেমের মধ্যে যদি কোনো খাদ না থাকে তাহলেই সম্ভব।