যুদ্ধের দোহাই দিয়ে লুটপাট আড়াল করছে সরকার : জোনায়েদ সাকি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৪ পিএম, ২ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৪৬ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সরকার সব দোষ যুদ্ধের ওপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের দোষ, নিজেদের লুটপাট আড়াল করতে চাইছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘সরকারের ভাবটা এমন যে ইউক্রেনে যুদ্ধ হচ্ছে, আর এর সব দায়দেনা বোধ হয় আমরাই মেটাচ্ছি।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, আসল কথা হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে একটা সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, জ্বালানি তেলের কিছু দাম বেড়েছে, এটা সত্যি। কিন্তু এই দাম সারা পৃথিবীর জন্য প্রযোজ্য। আসল হিসাব হচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গত ১৩-১৪ বছরে এই সরকার লুটেপুটে খেয়ে ফেলেছে।
আজ শুক্রবার (০২ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে উপস্থিত থেকে জোনায়েদ সাকি এ কথা বলেন। রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সম্মেলন হয়।
সরকার এ দেশের জনগণের জন্য কিছুই করবে না, এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘তারা উন্নয়নের নামে বড় বড় প্রকল্প করবে, সেখান থেকে লুটপাট করবে, প্রচার করবে যে তারা বিরাট উন্নয়ন করছে। কিন্তু আসল খবর আমরা শেষ পর্যন্ত পাব যে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটা ছোট ধাক্কাতেই ধসে পড়েছে। আমাদের দেশের শ্রমিক-কৃষকের জীবনে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি করবে। বাংলাদেশে ন্যূনতম কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা না থাকাতেই এমন হচ্ছে।’
সরকারের সমালোচনা করে জোনায়েদ সাকি বলেন, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির বরাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলে যাচ্ছেন, দেশে দুর্ভিক্ষ আসতে পারে, আগামী বছর আরও কঠিন সময় আসবে। কিন্তু সামনের খুব খারাপ অবস্থা ঠেকানোর জন্য সরকার কতটুকু উদ্যোগ নিচ্ছে? বাংলাদেশের যে মানুষ এখনো এই খারাপ অবস্থার মধ্যেও সম্পদ উৎপাদন করে যাচ্ছেন; এই দেশের শ্রমিকরা, যারা এখনো কল-কারখানা চালু রেখেছেন, অর্থনীতি চালু রেখেছেন; তাদের জীবনে কীভাবে একটু স্বস্তি আসবে, তার কোনো উদ্যোগ নিতে আমরা দেখি না।’
সরকারকে জোনায়েদ সাকি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘কিছুই নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নেই। শ্রমিক, মজদুর ও মেহনতি মানুষের ন্যূনতম ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নেই। আর আপনি বাংলাদেশ রক্ষা করবেন? আপনি বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাবেন? আপনার এই উন্নতি সত্যিকার অর্থে মানুষের উন্নতি হবে, এটাও বাংলাদেশের মানুষকে বিশ্বাস করতে হবে? সাড়ে ১৩-১৪ বছর ধরে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থেকে উন্নয়নের যে নানা ফুলঝুরি শুনিয়েছেন, বেলুন ফুটো হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক একটি যুদ্ধের এক টোকায় বাংলাদেশের অর্থনীতি হুড়হুড় করে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।’
এস আলমের প্রসঙ্গে জোনায়েদ সাকি বলেন, এই এস আলম, কে তিনি। তিনি তো সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ লোক, এটা বাংলাদেশের সব মানুষ জানে, অন্তত যারা একটু খোঁজখবর রাখেন, তারা সবাই জানেন। এক ইসলামী ব্যাংক থেকে তিনি ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছেন। এসআইবিএল ব্যাংক থেকে ১৪ হাজার কোটি টাকা নেয়া হয়েছে। তিনি একাই নয়টা ব্যাংকের মালিক। এটাই তো বাংলাদেশের অন্যায়ের-অনিয়মের সবচেয়ে বড় বহিঃপ্রকাশ।
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, মানবাধিকারকর্মী ও শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের আহ্বায়ক হামিদা হোসেন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, গবেষক মাহিন সুলতান প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী তাসলিমা আখতার। জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়। পরে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত আঁখি আক্তারের মা নাসিমা বেগম। সম্মেলন আগামীকালও চলবে।