নির্দলীয় সরকার ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৪ পিএম, ২৬ নভেম্বর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৫৪ পিএম, ১৪ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না এবং করতে দেয়াও হবে না। নির্বাচনের আগে অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। আর সরকার যদি পদত্যাগ না করে তাহলে আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের টেনে নামনো হবে। ২০১৪ সালের বিনা ভোট ও ২০১৮ সালের রাতের ভোটের মত আর কোনো নির্বাচন বাংলার মাটিতে হবে না।
আজ শনিবার (২৬ নভেম্বর) বিকালে কুমিল্লা টাউন হলের মাঠে কুমিল্লা বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিন উর রশীদ ইয়াছিন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিদ্যুৎ, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধাদের আন্দোলন করতে গিয়ে ইতিমধ্যে আমাদের ৮ জন ভাই জীবন দিয়েছেন এই সরকারের পেটোয়া বাহিনীর হাতে। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এ যাবত ৩৫ লক্ষ মামলা দেয়া হয়েছে। একটা সুখি সমৃদ্ধশালী ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য এখনো আমাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে, রক্ত দিতে হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বর্তমান সরকারের আমলে অর্থনীতির দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন, লজ্জারও তো একটা সীমা আছে। কিন্তু এখন দেখছি অবৈধ এই সরকারের লজ্জা শরম বলতে কিছুই নেই। বর্তমান যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে আগামী তিন মাস আমদানি ব্যয় মিটানো যাবে না। আমরা যখন রিজার্ভ নিয়ে কথা বলছি তখন প্রধানমন্ত্রী বলছেন রিজার্ভ আমরা চিবিয়ে খাইনি। আমরাও বলি তারা চিবিয়ে খায়নি তবে গিলে খেয়েছে। গত ১০ বছরে দেশ থেকে ৮৬ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। উন্নয়নের জিগির করা এই সরকারের আমলে বর্তমানে শতকরা ৪২ জন মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। তাই দেশকে বাঁচাতে হলে, দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামতে হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি বক্তব্য উদ্বৃত করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো সময় আছে ক্ষমতা ছেড়ে জনগণের কাতারে আসুন। নতুবা রাজপথের ফয়সালার মাধ্যমে আপনাদের ক্ষমতা থেকে টেনে নামানো হবে।
কুমিল্লা জেলার ঐতিহাসিক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিভিন্ন উদাহরণ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অবৈধ প্রধানমন্ত্রী যদি কুমিল্লা নামে বিভাগ না করে তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। বিএনপি ক্ষমতায় এলে আমরা কুমিল্লা নামেই বিভাগ করব।
বিএনপি মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীর যশোরের সমাবেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, ক্ষমতার মসনদে থেকে সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করে এমন সভা করাই যায়। অবৈধ প্রধানমন্ত্রী রাতে ভোটে নির্বাচিত হয়ে তিনি নাকি আবার নিবার্চন করবেন। জনগণকে নৌকায় ভোট দেয়ার আহবান জানিয়েছেন। কোনো লাভ নেই। নৌকা ভেঙ্গে গেছে। ভাঙ্গা নৌকায় আর জোড়া লাগবে না। এদেশের মানুষ আপনাদের আর চায় না, মানুষ শান্তি নেই। সকল জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করছেন। কিন্তু মানুষের কোনো আয় নেই। অথচ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আয় আছে। চাঁদাবাজি, দলীয়করণ করে তারা আয় করছেন। লুটপাট করে দেশের অর্থনৈতি শূন্য করে ফেলছে।
ঢাকা বিএনপির সমাবেশ যাতে না করতে পারে সেই জন্য সরকার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। এত সমাবেশ হল। সমাবেশ বানচাল করার জন্য এত চেষ্টা করেও কি সরকার কোনো সমাবেশ বন্ধ করতে পারলো। ঢাকা সমাবেশও বন্ধ করতে পারবে না। মনে রাখতে হবে এটা বিএনপির আন্দোলন নয়, বাংলার মানুষের আন্দোলন।
গণসমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক ড. সাহিদা রুমি, অ্যাড. বোরহান উদ্দিন, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য জাকারিয়া তাহের সুমন, আবুল কালাম, ইঞ্জিনিয়ার খালেদ মাহমুদ স্বপন, জেড এ খান, জিয়াউদ্দিন বসু, লায়ন হারুনুর রশীদ, রাশেদা বেগম হিরা, শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া, ছাইদুল হক, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি, ড. খন্দকার মারুফ হোসেন, মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি, সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, ড. মো, জালাল উদ্দিন, এস এম কামাল চৌধুরী, কাজী রকিব, এহছানুল হক মিলন, সাবেরা আলাউদ্দিন, অ্যাড. মো. জিয়া উদ্দিন জিয়া, মোশারফ হোসেন, সালাউদ্দিন ভুইয়া, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাজী জসিম উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ মোনায়েম মুন্না, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউছুফ মোল্লা টিপু, জেলা দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক সারোয়ার জাহান দোলন ও মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান বিপ্লব ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সমাবেশ বন্ধ করতে সরকার নানা ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বি. বাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে নয়নকে হত্যা করে এ সরকার মনে করছিল, বিএনপি ভয় পায়। সরকারের ধারণা ভুল। বিনা ভোটের সরকার বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। হাসিনার বাবা দেশে বাকশাল করে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছিল।
অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, এ সমাবেশের আগে বি-বাড়িয়া নয়নকে আ’লীগ সরকার খুন করেছে। লাকসামে হিরু-হুমায়ুনক গুম করেছে। আজ তাদের সন্তানেরা কাকে বাবা ডাকবে। আগুন নিয়ে খেলছে সরকার। এ আগুন নিয়ে খেলা কত মায়ের বুক খালি করছে খুনি হাসিনা সরকার, তার হিসাব একদিন দিতে হবে।
দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, যারা বলেছেন এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন আমাদের নেত্রী, আসলে কি তাই। আসলে তাই নয়। আমাদের নেত্রীর জনপ্রিয়তা দেখে মিথ্যা মামলা দিয়ে কয়দিন আটকিয়ে রাখবেন। সময় এসেছে এবার জবাব দিবে বাংলাদেশ মানুষ। এ সরকার পতনের জন্য সবাইকে এক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এ সরকারের পতন হবেই। তারই প্রমান কুমিল্লার এ বৃহত্তর সমাবেশ।
কুমিল্লায় বিএনপির গণসমাবেশ শুরু হয় সোয়া ১টার দিয়ে। প্রায় ৭০ জন বিভিন্ন পর্যায়ের বক্তা গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন। এর আগে কাক ডাকা ভোর থেকেই নগরীর চর্তুদিক থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে আসতে থাকে। যদিও আগের রাতেই টাউন হল মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
মিছিলে মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠেছে সমাবেশস্থল। শহরের অলিগলিতে বিভিন্ন সেøাগান দিয়ে মিছিল করছেন তারা। কুমিল্লা টাউন হল মাঠের সমাবেশস্থল ছাড়িয়ে একদিকে ঝাউতলা, টমছমব্রিজ, রাজগঞ্জ ও কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
এদিকে কুমিল্লা বিএনপি'র সমাবেশকে কেন্দ্র করে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা না এলেও দুদিন আগে থেকেই বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা থেকে সমাবেশের উদ্দেশে নেতাকর্মীরা মাঠে উপস্থিত হয়েছেন।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে নগরী অলিগলি ও দেয়াল পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে। বড় বড় পোস্টারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি শোভা পাচ্ছে। দীর্ঘদিন পর এমন পরিবেশ দেখে উৎফুল্ল উদ্বেলিত দলটি নেতাকর্মী।
এদিকে, অন্য বিভাগীয় সমাবেশের মত কুমিল্লাতেও দলটির চেয়ারপারসন ও ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সম্মানে চেয়ার খালি রাখা হয়েছে।