কুমিল্লায় বিএনপির গণসমাবেশ, কানায় কানায় পূর্ণ সমাবেশস্থল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:১৪ পিএম, ২৬ নভেম্বর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৫৩ এএম, ৩ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আজ শনিবার কুমিল্লা বিভাগীয় গণসমাবেশ।
ইতিমধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ কুমিল্লার ঐতিহাসিক টাউন হল মাঠসহ আশপাশের এলাকা। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকেই সমাবেশস্থলে আসা শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকে আবার গত বুধবার রাতেই চলে এসেছেন। গতকাল শুক্রবার কুমিল্লা ছিল এক ঐতিহাসিক উৎসবের নগরী। কুমিল্লার এ যাবতকালের ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে অংশগ্রহণের এমন উৎসাহ-উদ্দীপনা আর দেখা যায়নি। হাতে হাতে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, নেতাকর্মীদের ছবি ও ধানের শীষ লেখা সংবলিত ফেস্টুন নিয়ে টাউন হল মাঠে গতকাল শুক্রবারই দখল করে রেখেছেন নেতাকর্মীরা। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন তারা। গণসমাবেশ সফল করতে ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নিয়ে এসেছেন আয়োজকরা। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিন-উর রশীদ ইয়াছিন এ কথা নিশ্চিত করেছেন।
গণসমাবেশ আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা উত্তর ও দক্ষিণ জেলা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা মহানগর- এই পাঁচটি ইউনিট নিয়ে বিএনপির রাজনৈতিক বিভাগ হলো কুমিল্লা। এই বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে গত এক মাস ধরে বিরতিহীনভাবে নানা প্রকার প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ করে প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। এ উপলক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে প্রধান উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুকে টিম লিডার করে একটি গণসমাবেশ আয়োজক কমিটি করা হয়েছে। আয়োজক কমিটি সূত্র জানায়, আজ শনিবার দুপুর ২টায় গণসমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও যেহেতু নেতাকর্মীরা দুদিন আগেই সমাবেশস্থলে পৌঁছে গেছেন তাই তারা যাতে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যেতে পারেন তাই বিকালের মধ্যেই সমাবেশ শেষ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। এ জন্য বেলা ১১টায় গণসমাবেশ শুরু হবে। সাবেক এমপি ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিন-উর রশীদ ইয়াছিনের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিতব্য বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় এই গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার গণসমাবেশস্থল কুমিল্লা কান্দিরপাড়স্থ ঐতিহাসিক টাউন হল মাঠে গিয়ে দেখা যায়, উত্তর-পশ্চিম কোণে এক বিশাল আকারের মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। মঞ্চের চতুর্দিকে লাগানো হয়েছে প্রায় ২৫০টি মাইক এবং মঞ্চের দূরের নেতাকর্মীরা যাতে গণসমাবেশের মূল মঞ্চ দেখতে পারেন সে জন্য নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ৮টি বড় পর্দা স্থাপন করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলের মধ্যেই সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া জানিয়েছেন, টাউন হল মাঠ থেকে চতুর্দিকে এক কিলোমিটারের বেশি জায়গায় আমাদের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ থাকবে যারা বক্তব্য শুনবেন।
এদিকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে সাধারণ মানুষেরও আসা। একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে এত বেশি সাধারণ মানুষের আগ্রহ নিকট অতীতে কুমিল্লায় দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন মহানগর বিএনপি নেতা কাওসার জামান বাপ্পী। এদিকে সমাবেশকে সফল ও সার্থক করার জন্য গতকাল সকালে নগরীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, কুমিল্লার মানুষ শনিবারের গণসমাবেশে রাতের ভোটের এই অবৈধ সরকারকে লালকার্ড দেখাবে।
অপরদিকে গতকাল শুক্রবার গণসমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের নিয়ে কুমিল্লা টাউন হল মাঠ ও কেন্দ্রীয় ঈদগা ময়দানে পৃথক দুটি জুমা নামাজের জামাত হয়। এই জামাতগুলোতে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয়সহ শত শত নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। কুমিল্লা নগরীর বাইরে থেকে আগত বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলার নেতাকর্মীদের থাকা ও খাওয়ার পৃথক ব্যবস্থা করেছেন কুমিল্লার সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু ও সদস্যসচিব ইউছুফ মোল্লা টিপু জানিয়েছেন, ‘মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা বৃহস্পতিবারই ১০টি গরুর ব্যবস্থা করেছি। প্রয়োজনে আজ (শুক্রবার) আরো ব্যবস্থা করব।’ কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিন-উর রশীদ ইয়াছিন জানিয়েছেন, নেতাকর্মীদের যাতে কোনো কষ্ট না হয় থাকা ও খাবারে সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে বলে দিয়েছি।
কুমিল্লার টাউন হল মাঠে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঢল : কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের একদিন আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে টাউন হল মাঠ। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর সমাবেশস্থল। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা সেøাগান দিতে দিতে দলে দলে প্রবেশ করতে থাকেন সমাবেশস্থলে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুমিল্লা টাউন হল মাঠ পূর্ণ হয়ে যায়। তবে মাঠের পশ্চিম পাশে জুমার নামাজের স্থান করায় মাঠের উত্তর এবং পূর্ব পাশে জড়ো হন নেতাকর্মীরা। মনোহরগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা যুবদল নেতা রাজ্জাক বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর বিএনপির এতবড় সমাবেশে উপস্থিত হয়েছি। এই সরকারের কাছ থেকে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।’ বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোশতাক মিয়া বলেন, কুমিল্লার গণসমাবেশ হবে সর্ববৃহৎ, যা কুমিল্লার মাটিতে এর আগে মানুষ দেখেনি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থেকে আসা কাইয়ুম নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা বলেন, ‘আমি গতকালই কুমিল্লায় এসেছি। সমাবেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকব। সমাবেশ সফল করতে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হবে। এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে এবার উৎখাত করেই ছাড়ব।’
সমাবেশস্থলে জুমার নামাজ আদায় করলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা : কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের জায়গায় জুমার নামাজ আদায় করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকাল শুক্রবার দুপুরে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে কেন্দ্রীয় ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা নেছার আহমেদের ইমামতিতে জুমার নামাজ আদায় করেন তারা। নামাজে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোশতাক মিয়া, বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিন-উর রশিদ ইয়াসিন, কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক কামাল হোসেনসহ অন্য নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এ সময় বিএনপির আজীবন বহিষ্কৃত নেতা কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু সমাবেশস্থলের এক পাশে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া এবং মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ কামনা করা হয়। প্রসঙ্গত, নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নেতাকর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশের সব বিভাগে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেটের পর আজ শনিবার (২৬ নভেম্বর) কুমিল্লায় গণসমাবেশ করবে দলটি। কুমিল্লা টাউন হল মাঠে সমাবেশের আয়োজন চলছে। এটি বিএনপির অষ্টম বিভাগীয় গণসমাবেশ। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।