আওয়ামী লীগ জাতির বোঝা, এদেরকে যদি কাঁধ থেকে সরাতে না পারি আমরা সবাই ডুববো
ঢাকার সমাবেশ নয়াপল্টনেই হবে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৪ পিএম, ২৩ নভেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০২:৪১ এএম, ২২ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২৪
গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নিতে সরকার নতুন নতুন নাটক তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক ঐক্যের আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘বহু ঘটনা, বহু উত্থান-পতন, বহু নির্যাতন-নিপীড়ন,বহু মানুষের জীবন নষ্ট, গুম হয়ে যাওয়া, খুন হয়ে যাওয়া, মিথ্যা মামলা-গায়েবী মামলা এগুলো আমরা সব দেখছি। আবার নতুন করে দেখতে শুরু করেছি-তাদের মুখ দিয়ে আসছে, বলছে যে, অগ্নি সন্ত্রাসের কথা বলে। আবার নতুন নাটক দেখলাম আদালত পাড়া থেকে জঙ্গি ছিনতাই হয়ে যাওয়া- দেখেছেন আপনারা”
‘‘এগুলো সব নাটক তৈরি করা হচ্ছে। এসব নাটকের উদ্দেশ্য আছে। মূল যে দাবিগুলো নিয়ে মানুষ যে তার চাহিদা নিয়ে, তার যে প্রাণের দাবিগুলো নিয়ে সামনে এগিয়ে আসছে। এই আন্দোলন যে শুরু হয়েছে এটাকে ডাইভার্ট করে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়া-এটা হচ্ছে তার মূল লক্ষ্য।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আবার তারা শুরু করেছে পুরনো খেলা। পত্রিকায় উঠেছে একটি সংবাদ সেটা হচ্ছে ককটেল ফাটাতে দেখেনি কেউ, তবে মামলা দিয়েছে পুলিশ। বিএনপির বিরুদ্ধে মামলা কিন্তু সাক্ষী কিছুই জানেন না। কারণ ককটেলের কোনো শব্দই হয়নি, কেউ কিছু দেখেনি। কাওরানবাজারে দেড়‘শ জনকে আসামী করে ককটেল ফাটানোর মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এরকম ৯৬টি মামলা হয়েছে, সাড়ে চার হাজার আসামী ও আরো ১০ হাজার অজ্ঞাতনামা আসামী।”
‘‘অর্থাৎ তাদের সেই পুরনা খেলা শুরু হয়েছে- ঘটনা ঘটাবো আমরা আর মামলা খাবে তোমরা। সেই মামলার পেছনে তোমরা একমাস-দুই মাস ঝুলতে থাকবে। কোট-আদালত-জেলখানায় দৌড়াদৌড়ি করতে থাকবে। এর মধ্যে আমরা আমাদের কাজ শেষ করবো। এই হচ্ছে এই সরকার। যারা নির্বাচিত হয়ে আসেনি, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে এবং তারা প্রতিবছর নতুন নতুন সমস্ত কৌশল আবিস্কার করে। সেই কৌশলে কোনো না কোন রকমভাবে আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসার চেষ্টা করে।”
এই অবস্থার পরিবর্তনে আন্দোলন একমাত্র পথ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘একে সরাবার পথ একটাই। জনগণের ঐক্য সৃষ্টি করে দুর্বার গণ-আন্দোলন তাদেরকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই একটা সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন পার্লামেন্ট ও নতুন সরকার তৈরি করতে হবে। যেখানে জনগণের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার সুযোগ থাকবে।”
‘‘আর সেই জন্য নির্বাচনটা কখনোই আওয়ামী লীগের অধিনে হতে পারবে না। অবশ্যই একটা মধ্যবর্তী বলুন, অন্তবর্তী বলুন, নির্বাচনকালীন বলুন একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। আমাদের অভিজ্ঞতা আমাদের রাজনৈতিক যে সংস্কৃতি সেই সংস্কৃতি এমন একটা জায়গায় চলে এসেছে যেখানে দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচন সম্ভব নয়।”
এই সরকারের পতনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে
জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নাগরিক ঐক্যের গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে ‘দেউ্লিয়াত্ব গোছাতে দুর্ভিক্ষের নাটক?দেশ কোন পথে?’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সমন্বয়ক ড. জাহিদ-উর রহমান।
‘দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিকরণ করা হচ্ছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনই বলুন আর সিভিল প্রশাসনই বলুন-সব তোষামুদি কিভাবে আপনার বস খুশি হবেন, কিভাবে আপনার এক নাম্বার সব খুশি হবেন সেই কাজই তারা সারাক্ষণ করতে থাকেন। সবচেয়ে বড যে কাজটা তারা করেছে দুর্নীতিকে পুরোপুরিভাবে প্রতিষ্ঠানিকরণ করেছে। এমন একটা খাত নেই যে খাতে তারা দুর্নীতি করে নাই।”
‘‘কিছুক্ষণ আগে আমি উত্তরা থেকে আসছিলাম আমার সাথে আসছিলেন আমার এলাকার একজন ইয়াং চেয়ারম্যান যে ৫বার চেয়ারম্যান হয়েছেন, এবারও সে নির্বাচিত হয়েছেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তোমাদের ইউনিয়ন পরিষদের খবর কি? বলছে যে, থানায় যে ইউনিয়ন পরিষদের মিটিং হয় সেই মিটিংয়ে স্যার আমরা যাই না। আমাদের গিয়ে লাভ হয় না। ওই যে এমপি সাহেব আছে তিনি টাকা-পয়সা ভাগ-বাটোয়ারা করে দেন যারা আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান আছে তাদেরকে দিয়ে দেয়। আমাদের কোনো বরাদ্ধ থাকে না, আমরা কোনো উন্নয়মুলক কাজও করতে পারি না। এমনটি এই যে, দুঃস্থ ভাতা, বিধবা ভাতা-এই ভাতাগুলোর টাকাও ১০-২০% ভাগ নেয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। এটার মধ্যে কোনো ব্যতয় নেই। এই যে একটা জেলা পরিষদ করা হয়েছে এটার কাজ হচ্ছে লুটপাট করা।”
তিনি বলেন, ‘‘এখন আওয়ামী লীগ আমাদের জন্য একটা বিশাল বোঝা হয়ে গেছে। এই জাতির জন্য বোঝা। এই বোঝাকে যদি কাঁধ থেকে সরাতে না পারি তাহলে এদের সঙ্গে আমরা সবাই ডুবে যাবো, ডুবতে বসেছি।”
‘ঢাকার সমাবেশের স্থান দেয়নি, পল্টনেই করব’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আন্দোলনকে বাধা দেয়ার কাজ শুরু করেছে সরকার। বিভাগীয় লাস্ট সমাবেশ ঢাকায়, এর স্থান এখনো পর্যন্ত তারা দেয়নি। আমরা খুব পরিস্কার করে বলেছি, যেহেতু আমরা সবসময় আমাদের পার্টি অফিসের নয়া পল্টনে করি, আমরা অবশ্যই ১০ তারিখে সমাবেশ অনুষ্ঠান করব।”
‘‘সরকারকে পরিস্কার করে বলতে চাই, যারা দায়িত্বের মধ্যে আছেন ডিএমপি কমিশনারসহ সবাইকে- কোনো ঝামেলা না করে এটা নষ্ট না করেন। অর্থাৎ আমাদের এই সমাবেশ যাতে করতে পারি এই ব্যবস্থা আপনারা করবেন।”
তিনি বলেন, ‘‘দায়িত্বটা এখন সরকারের। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা রাজনৈতিক বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে চূড়ান্ত পর্যায়ে কথা বলেছি। আমরা একমত হয়েছি যে, আমরা সবাই যুগপৎ আন্দোলন করবো, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। খুব শিগগিরই এগুলো সামনে আসবে।”
‘‘জাতি আজকে ঐক্যবদ্ধ। আজকে জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবেই এই সরকারের পতন চায় এবং সত্যিকার অর্থেই নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে একটা কল্যাণমূলক সরকার যারা জনগণের জন্য কাজ করবে তাদেরকে চায়।”
সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের সামনে কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নেই। এখন বাজারের দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলছে, দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট, এদের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।”
‘‘আসুন সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলি।”
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘‘রিজার্ভের ব্যাপারে তাদের(সরকার) যে তথ্য-উপাত্ত, আইএমএফ এসে তাদের তলের বিড়াল বের করে দিয়েছে। ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের দিকে যদি তাঁকিয়ে থাকেন-এক লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা খেলাপী ঋণ। তাদের আবার সুবিধা দিয়ে ঋণ দেয়া হচ্ছে।”
‘‘পুরো চেহারা সরকারের আছে না যে, পুরো রাজকোষকে রাষ্ট্রের অর্থভান্ডারকে লুটপাটের জন্য পাচারকারীদের কাছে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যেভাবে একসময়ে ভারতকে লুট করেছে, দুর্ভাগ্যজনকভাব গত এক দশকে আমাদের এই শাসকরা ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো পুরো দেশটাকে একটা লুটের বাজারে পরিণত করেছে। এই লুটের কোনো টাকা বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে নেই। বাংলাদেশে কোথাও কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। তারা পুরো দেশটাকে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।”
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘তারা(সরকার) পুরো শাসনব্যবস্থার প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে এমনভাবে সুবিধাভোগী করে দিয়েছে, মানে অবাধ লুটপাটের সুযোগ দিচ্ছে যাতে করে এই শাসন ব্যবস্থার বিভিন্ন অঙ্গগুলো তাকে রক্ষা করার জন্য ততপর থাকে। খেয়াল করে দেখবেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের অবাধে লুটপাটের সুযোগ দেয়া হয়েছে। যারা ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ করেননি সেটা তাদের ব্যক্তিগত সততা।”
‘‘মানুষের যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে এর উত্থানের সামনে সরকারের যতরকম হম্বিতম্বি টিকবে না। সরকার এখন রীতিমতো কম্পমান অবস্থা ভয়ে এবং ভয়ে কম্পমান অবস্থা বলে নিজেরা অন্যদের ভয় দেখাতে দেখাতে নিজেরা এখন ভয় পেতে শুরু করেছে। ভয় পেতে পেতে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে, নানা বেসামাল কর্মকান্ড যেটা ছোট ঘটনা থেকে বড় ঘটনা আমরা দেখতে পারছি। আমরা এই সরকারকে দ্রুত ফেলে দিতে পারবো বলে মনে করি।”
নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের এস এম আকরাম, মোমিনুল ইসলাম, জিন্নুর চৌধুরী দিপু, মোফাখখারুল ইসলাম নবাব, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আক্তার হোসেন বক্তব্য রাখেন।