খুলনায় শ্রমিক দলের বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা
দেশে গণবিপ্লবের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে : শিমুল বিশ্বাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৪৮ পিএম, ১৬ নভেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:০০ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
দেশে গণবিপ্লবের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। কোনো চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করে সরকার সফল হতে পারবেনা। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি নিরঙ্কুশ বিজয়ী হবে। দেশকে কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শ্রমজীবি মানুষকে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশীদার করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
আজ বুধবার খুলনায় জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় এ কথা জানান প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।
আগামীতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে যা কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের, তার একটি দীর্ঘ বিবরণ তুলে ধরেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে- সকল শ্রমিক সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন গ্রহণে রাষ্ট্রীয়ভাবে সহায়তা করা; সকল শ্রমিককে পরিচয় পত্র প্রদান; সকল শ্রমিককে রাষ্ট্রীয় কল্যাণ তহবিল থেকে ভাতা প্রদান; কর্তব্যরত অবস্থায় মারা যাওয়া শ্রমিক পরিবারকে কল্যাণ তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকা প্রদান; অবৈধ চাঁদাবাজি, জুলুম থেকে শ্রমিকদের রক্ষা করা, শ্রমিকদের জন্য রেশনিং প্রথা চালু করা। শিল্প নগরী খুলনার হারানো গৌরব ও ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বন্ধ কলকারখানা পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।
শিমুল বিশ্বাস আরও বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিজেকে শ্রমিক হিসেবে পরিচয় দিতেন। ১৯৭৫ এ রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি এই শ্রমজীবী মানুষকে সাথে নিয়ে উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি শুরু করেছিলেন। তলাবিহীন ঝুড়ি বাংলাদেশকে তিনি মেরামত করেছিলেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও নিজেকে শ্রমজীবী মানুষ হিসেবে ভাবতেন। প্রতিহিংসাপরায়ন সরকার অন্যায়ভাবে তাকে সাজা দিয়ে কারাবন্দী রাখলেও এই মুহুর্তের বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয়তম নেত্রী তিনি।
সারাদেশে চলমান বিএনপির ধারাবাহিক বিভাগীয় গণসমাবেশের সফলতার কথা উল্লেখ করে শিমুল বিশ্বাস বলেন, শত বাঁধা বিপত্তি উপেক্ষা করে, হামলা মামলা নির্যাতন সহ্য করে, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিকল্প পন্থায় তিন/চারদিন আগে থেকে যে সমস্ত মানুষ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন, খেয়ে না খেয়ে সমাবেশ সফল করেছেন, তাদের সিংহভাগই শ্রমিক শ্রেণীর। বিপ্লব ও পরিবর্তনে শ্রমিক শ্রেণীর ত্যাগ ও অবদান অনস্বীকার্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনায় এই শ্রমিক শ্রেণীকে অংশীদার করার অঙ্গীকার করেছেন তারেক রহমান।
শিমুল বিশ্বাস বলেন, শেখ হাসিনার কোন কথা জনগণ বিশ্বাস করেনা। তিনি এখন ভয় দেখাচ্ছেন দেশে দুর্ভিক্ষ হবে। স্বাধীনতার পরে দেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি। তৎকালীন সরকারের ব্যর্থতায় ১৯৭৪ সালে হওয়া দুর্ভিক্ষে সাড়ে ৬ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা যায়। আমাদের যে জনসম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, তাতে এই দেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ার কথা নয়। এই সরকারের পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়ে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, যে কোনো সময় সেই ঘড়া ডুবে যাবে। গরীব শোষিত বঞ্চিত মানুষ জেগে উঠেছে। এই আন্দোলনকে কোন অপশক্তি দমন করতে পারবেনা।
প্রতিনিধি সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, যুবলীগের সমাবেশের মাধ্যমে সরকার তার শক্তি প্রমাণ করতে চেয়েছিল। কিন্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া দলীয় নেতাকর্মী পাওয়া যায়নি। দেশনায়ক তারেক রহমান দেশের জনগণকে উদ্দীপ্ত করে তুলেছেন বলে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোতে মানুষের ঢল নামছে। গত ৬ মাসে বিএনপির ৮ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। মামলা ও বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। সরকার দেশকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া করে ফেলেছে। ১০ ডিসেম্বর মহাসমাবেশ বানচাল করতে সরকার বিভিন্ন ভাবে চক্রান্ত করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রয়োজনে বিএনপির নেতাকর্মীরা লংমার্চ করে ঢাকায় যাবেন এবং রাজধানীকে অবরুদ্ধ করবেন। মাফিয়া সরকারের পতন ছাড়া রাজপথ ছাড়া হবেনা। দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা সহ মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এই যুদ্ধে পরাজিত হলে বাংলাদেশ পরাজিত হবে।
প্রতিনিধি সভার বিশেষ অতিথি খুলনা মহানগর বিএনপির সম্মানিত সদস্য রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিজেকে শ্রমিক পরিচয় দিতেন। যুদ্ধের পরে শেখ মুজিব সরকার সব কল কারখানা রাষ্ট্রায়াত্ব করে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছিলেন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান শ্রমিকদের সাথে নিয়ে দেশ পুর্নগঠন করেন। শেখ হাসিনার সরকার আবারও দেশের কল কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদের বেকার করেছে। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতা গেলে শ্রমিকদের কাছে সকল বন্ধ কল কারখানা ফিরিয়ে দেয়া হবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার দেশের রিজার্ভ লুটপাট করে খেয়ে এখন দুর্ভিক্ষের ভয় দেখাচ্ছে। সরকার পতন আন্দোলনে রাজপথে নেমে আসার জন্য শ্রমিকদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ সভাপতি আব্দুর রহিম বক্স দুদুর সভাপতিত্বে বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, মহানগর বিএনপির আহবায়ক শফিকুল আলম মনা, জেলা বিএনপির আহবায়ক আমীর এজাজ খান, মহানগর সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, যুগ্ম আহবায়ক আবু হোসেন বাবু, শ্রমিক দল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান।
মহানগর শ্রমিক দলের আহবায়ক মোঃ মজিবর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, খুলনা জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি উজ্জল কুমার সাহা, মহানগর সদস্য সচিব শফিকুল ইসলাম শফি, যশোরের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহাবুদ্দিন, মাগুরার সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইমরান মোল্লা, কুষ্টিয়ার সভাপতি মিজানুর রহমান, বাগেরহাটের সভাপতি সরদার আতিয়ার রহমান, খালিশপুর আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি আবু দাউদ দ্বীন। সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা আবু নাঈম।