রাজশাহীতে বিএনপি নেতা হত্যার আট বছর পর মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪০ পিএম, ১৬ নভেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৫৬ পিএম, ৬ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
রাজশাহী মহানগর ১৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইনুর রহমান মুক্তাকে আট বছর পূর্বে পুলিশ আটক করে অমানবিকভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে। হত্যার পরেও ভয়ে এতদিন বিচারের জন্য থানা ও আদালতে মামলা করতে পারেননি মুক্তারের পরিবারের সদস্যরা। কারন ঐ সকল পুলিশ সদস্য রাজশাহীতে দাপিয়ে বেড়াতেন। দিতেন নানা ধরেনের হুমকি। শুধু হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হননি তারা উল্টো মুক্তারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন। এই কথাগুলো বলছিলেন মরহুম মুক্তারের স্ত্রী মর্জিনা রহমান।
মামলা করা বিষয়ে তিনে বলেন, এখন ঐ সকল নরঘাতকরা রাজশাহী থেকে চলে গেছেন বলে বুধবার রাজশাহী কোর্টে হাজির হয়ে তিনি বাদি হয়ে স্বামী হত্যার ন্যায্য বিচারের দাবীতে রাজশাহী মহানগর দায়রা জর্জ আদালতে ধারা: নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ১৫(১)/১৫(২) মামলা করলেন। এই মামলায় সে সময়ের আরএমপি বোয়ালিয়া থানার সাব ইন্সপেক্ট তৌহিদুল ইসলাম, যার বিপি নং-৬২৮৪০৬৬৯২৬, ঘটনাকালীন সময়ে বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুর হোসেন খন্দকার, যার বিপি নং-৬৭৯৩৩০৬৫৫৮১, সে সময়ের ডিবি রাজশাহী মহানগরের পুলিশ পরিদর্শক আশিকুর রহমান, যার বিপি নং- ৮০০৩১২১৯০২ ও সে সময়ের আরএমপি পুলিশ কমিশনার শামসুদ্দিন, যার বিপি নং- ৬১৮৯০২০৯৩৫। এছাড়াও এই মামলায় আরো ৪ থেকে ৫জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা করা হয়েছে।
মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয় ২০১৫ সালের ২৭ জানুয়ারী বিএনপি নেতা আইনুর রহমান মুক্তাকে রাজশাহীর উপশহর ১নং সেক্টরের জুঁই ডেকোরেটরের (বাবুলের দোকান) নিকট হতে পুলিশ সদস্যগণ সকাল সাড়ে ৯টা হতে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ সদস্যরা তাদেও জিম্মায় নেন। এরপর ডিবি পুলিশ ও বোয়ালিয়া থানার উপরোক্ত পুলিশ সদস্যরা অমানবিকভাবে নির্যাতন করেন গুরুতর আহত করে। এতে মুক্তার মৃত্যু হয়।
মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে একই তারিখে গুরুতর আহত অবস্থ্য়া আইনুর রহমানকে মুক্তাকে রাজশাহী কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছিলো। কারা কর্তৃপক্ষ গুরুতর জখম ও মুমুর্ষ অবস্থায় চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে পাঠান। সেখানে কর্র্তব্য ডাক্তার মুক্তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এঘটনা সবাই জানেন। মৃত্যর পর মুক্তার লাশ পরিবারের সদস্যদের দেখতে না দিয়ে আসামীগণ (পুলিশ সদস্য)সহ আরো ৪ থেকে ৫জন অজ্ঞাত সদস্য সিটি সিটিকর্পোরেশনের গোরস্থানে দাফন করতে নিয়ে যান। এ কথা শুনলে স্ত্রী মর্জিনা ও এলাকার জনগণ সেখানে যান এবং মর্জিনা স্বামীর শরীর থেকে কাফন হটালে শরীরে বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম দেখতে পান। উপস্থিত সবাই দেখেন এবং এটাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে সে সময়ে বলাবলি করেন। স্ত্রী মর্জিনা স্বামী হত্যার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবীসহ হত দেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।
এদিকে এই মামলার আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশের এডভোকেট মাহফুজার রহমান ইলিয়াস বলেন, সে সময়ে প্রকাশিত খবর, স্বাক্ষীগনের স্বাক্ষ্য ও বিবরনে এটাই প্রমাণিত হয় যে, মুক্তাকে পুলিশ সদস্যরা নির্য়াতন করে হত্যা করেছেন। বিজ্ঞ বিচারক বিষয়টি ভালভাবে আমলে নেবেন এবং হর্তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করবেন বলে আশা ব্যাক্ত করেন তিনি।
মমলা করার সময়ে কোর্টে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রান ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ- সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী জেলা বিএনপি’র সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, রাজশাহী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন, সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম রবি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বাবলু, রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকবর আলী জ্যাকিসহ বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও রাজশাহী বারের আইনজীবীগণ।
উপস্থিত নেতৃবৃন্দ সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।