আওয়ামী লীগ হত্যায় উৎসাহী একটি রাজনৈতিক দল : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০২ পিএম, ১২ নভেম্বর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:১৭ এএম, ৭ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী সন্ত্রাস ও অপকীর্তির শেষ নেই। বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতে ওরা রক্তাক্ত পথে হাঁটছে। আওয়ামী লীগের দুস্কর্মের কর্মধারা সম্পন্ন করে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে। তিনি বলেন, গতরাতে আওয়ামী দুস্কৃতিকারিরা বাগেরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম ভুঁইয়া তানুকে বাগেরহাট শহরে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ হত্যায় উৎসাহী একটি রাজনৈতিক দল। বিরোধী দলের নিরপরাধ লোকজনদের হত্যার শাস্তি না হওয়ায় দুর্বৃত্তরা সহিংস কার্যাবলী অব্যাহত রেখেছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের মানুষ হত্যার বীরত্বে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী দারুণ উল্লসিত ও উত্তেজিত।
আজ শনিবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, মানুষ হত্যায় এদের কলঙ্কের তীব্রতা এতটাই বেশী যে, তারা আর কোন কিছু লুকিয়ে রাখতেও লজ্জা পাচ্ছে না। এদের সময়ে পিলখানার বিডিআর হত্যা, সাংবাদিক হত্যা, শিক্ষক হত্যা, ছাত্র হত্যা, শ্রমিক হত্যা থেকে শুরু করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হত্যা কোনটিরই কমতি করেনি। যাদেরকেই তারা সরকারের বিরোধী মনে করে তাদেরকেই ধরাতল থেকে অদৃশ্য করতে দ্বিধা করে না। সেই ধারাবাহিকতায় গতকাল হত্যা করা হলো স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নুরে আলম ভুঁইয়া তানুকে। শাসকগোষ্ঠী নিজেদের সমষ্টিগত সুখময় জীবন গড়ে তুলতেই বিরোধী পক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।
তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলার ধ্বজাধারীরা সরকারের প্রাইভেট বাহিনীর ভূমিকা পালন করতেই ব্যস্ত রয়েছে। সাধারণ গণতান্ত্রিক নিয়ম পদ্ধতি এবং নির্বাচনী রায়ের মধ্য দিয়ে জনগণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতাকে আটকিয়ে দিয়ে খুন ও অত্যাচারের পথে হাঁটছে আওয়ামী সরকার। সারাদেশে বিভিন্ন জনপদে যুবলীগ-ছাত্রলীগকে দিয়ে তারা খুনে বাহিনী তৈরী করেছে।
তিনি আরোও বলেন, নির্বিচারে গ্রেফতার, ব্যাপকভাবে নির্যাতন, নারকীয় অত্যাচার এবং ভয়ঙ্কর আতঙ্ক সৃষ্টিকারী গুমের নীতির ওপর দেশ চালাচ্ছে অবৈধ সরকার। এক শ্বাসরুদ্ধকর গুমোট পরিবেশের মধ্যে গোটা জাতি হাসফাঁস করছে। দেশে এখন জঙ্গলের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। দেশের ভোটারদের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা করে বিরোধী দলকে নতি স্বীকার করানোর জন্য সরকার গুমের মতো একটি অমানবিক পন্থা চালু রেখেছে। কিন্তু সব স্বৈরাচারী সরকার'রা ভুলে যায় যে, জনগণের শক্তি কত প্রবল।
রিজভী বলেন, গতকাল শুক্রবার সকালে কক্সবাজার জেলার রামু থেকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায় যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইউসুফ বিন জলিলসহ তার সাথে থাকা কয়েকজন বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতাকে। সবাইকে ছেড়ে দেয়া হলেও ইউসুফ বিন জুয়েলকে আটকে রাখে র্যাব-১৫। কিন্তু পরবর্তীতে ইউসুফকে আটকিয়ে রাখার কথা র্যাব-১৫ অস্বীকার করতে থাকে। বারবার খোঁজ নিলেও র্যাব-১৫ ইউসুফের কোন হদিস দিতে চান না। এটি আওয়ামী আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এক নির্মম চিরচেনা সংস্কৃতি। আজ সকালে ইউসুফ বিন জলিলকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
তিনি বলেন, শাসকদল নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য দানবীয় চক্রান্ত প্রতিনিয়তই এঁটে চলছে। সংগ্রামী জনগণকে কাবু করতে, জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দাবীর আন্দোলনকে ধ্বংস করতে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী হত্যা ও গুমের মতো কর্মসূচি বেছে নিয়েছে। বর্তমান শাসকদল অরাজকতা, হিংসা, হত্যা ও গুমের মতো ঘটনায় বাংলাদেশের পরিচিতিকে কলঙ্কিত করেছে। শেখ হাসিনা তাঁর একগুঁয়েমি ও চন্ডনীতির দ্বারা রাজনীতির ময়দান শান্ত ও নিরাপদ রাখতে চান না। শেখ হাসিনা তাঁর লোকজনদেরকে অক্লেশে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হতে সুযোগ করে দিয়েছেন। অবৈধ ক্ষমতার কারণে দুর্নীতি-নীতিহীনতা-স্বজনপোষণের বড় ধরণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাই শেখ হাসিনার কাছে অমল-ধবল ক্ষমতা খুবই জরুরী। রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের গ্যারান্টি এবং নাগরিক স্বাধীনতার নিশ্চয়তাকে গুম করে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আজ ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিএনপি ঐতিহাসিক বিভাগীয় গণসমাবেশ। যদিও সমাবেশকে বাধা দেয়ার কমতি করেনি সরকার। রাজবাড়ী, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের খুঁজতে বাড়ীতে বাড়ীতে পুলিশের হানা দেয়া, গোপালগঞ্জ থেকে ফরিদপুরগামী এবং ঢাকা থেকে ফরিদপুরগামী বাস বন্ধ করে দেয়া ইত্যাদি অপকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। আজ সকাল থেকে ফরিদপুর মোবাইলের সব নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরকারের ইন্ধনেই এই অঘোষিত ধর্মঘট, পুলিশী হয়রানী এবং মোবাইলের নেটওয়ার্ক বন্ধ করা সত্বেও এ মূহুর্ত পর্যন্ত অভাবনীয় লোক সমাগম হতে শুরু করেছে। মানুষ নানাভাবেই নিজেরা বিভিন্ন বাহনে সমাবেশস্থলের দিকে বানের পানির মতো এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের কোন বাধাকেই ফরিদপুর বিভাগের জনগণ ও নেতাকর্মীরদের আটকাতে পারেনি। সকল বাধা ডিঙ্গিয়েই গত পরশু থেকেই ফরিদপুর শহরে সমাবেশস্থলে মানুষ আসতে শুরু করেছে। আজ ফরিদপুর শহর ও আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, নরসিংদী জেলাধীন সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি মেম্বার ইমাম হাসান এর বাড়ী থেকে বোমা ও গান পাওডারসহ বিস্ফোরক দ্রব্যাদি পাওয়া গেলেও নরসিংদী জেলাধীন সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপি'র সদস্য সচিব কাইয়ুম সরকারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। এই মামলায় বিএনপি'র অন্য আসামীরা হলেন-বিএনপি নেতা মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ, ইলিয়াস আলী ভুইয়া, জাহিদুল কবির ভুঁইয়া, সুমন চৌধুরী, শামীম সরকার, হুমায়ুন কবির রাসেল, নজরুল ইসলাম ও শাহ আলম চৌধুরী। আমি এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে বিএনপি নেতা কাইয়ুম সরকারের নিঃশর্ত মুক্তি এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি করছি।
তিনি বলেন, গতরাতে আওয়ামী দুস্কৃতিকারিদের কর্তৃক বাগেরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম ভুঁইয়া তানুকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা এবং ইউসুফ বিন জলিলকে প্রথমে গুম এবং পরে ডিবির নিকট হস্তান্তরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি নিহত নুরে আলম ভুইয়া তানুর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং ইউসুফ বিন জলিলের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারহ এই মুহুর্তে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।