পরিবহন ধর্মঘট : গন্তব্যে যেতে হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়ায়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩৭ পিএম, ১১ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০২:২১ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
মহাসড়কে অবৈধ থ্রি-হুইলার বন্ধের দাবিতে আজ শুক্রবার থেকে ৬টা থেকে ৩৮ ঘন্টার পরিবহন ধর্মঘটে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গন্তব্যে যেতে তাদের দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সাধারণ যাত্রীরা রাজবাড়ী থেকে গোয়ালন্দ মোড় ও দৌলতদিয়া ঘাট থেকে গোয়ালন্দ মোড়ে ব্যাটারিচালিত ভ্যান, অটোরিকশা ও মাহেন্দ্রযোগে আসছেন। এছাড়া গোয়ালন্দ মোড় থেকে যাত্রীরা তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে তিন চাকার যানবাহন ব্যবহার করছেন। বাস চলাচল বন্ধ থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিন চাকার যানবাহন যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।
আব্দুল আলীম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘আমি দৌলতদিয়া ঘাট থেকে বাস না পেয়ে মাহেন্দ্র করে গোয়ালন্দ মোড়ে এসেছি। আগে যেখানে ৩০ টাকা ভাড়া ছিল, আজ মাহেন্দ্র-চালকরা ৫০-৬০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছে।’
গোয়ালন্দ মোড় থেকে ফরিদপুরগামী এজাজ মাহমুদ বলেন, ‘জরুরি একটা কাজে মাগুরা যাব। কিন্তু বাস না পেয়ে গোয়ালন্দ মোড় থেকে মাহেন্দ্র করে ফরিদপুর পর্যন্ত যেতে হবে। কিন্তু মাহেন্দ্র-চালকরা সুযোগ বুঝে দ্বিগুণ ভাড়া চাচ্ছে। ৩০ টাকার ভাড়া তারা ১০০ টাকা করে নিচ্ছে। আসলে যাদের জন্য বাস মালিকরা আজ ধর্মঘট ডেকেছে, আজ সড়কে তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।’
মাহেন্দ্র-চালক সুরুজ মিয়া বলেন, ‘সরকার তো আমাদের কোনো লাইসেন্স দেয় না, রুট পারমিট দেয় না। কিন্তু আমরা তো পেটের দায়ে রাস্তায় নামি। গাড়ি না চালালে সংসার চলবে কেমনে?’ আজ বাস মালিকরা কেন ধর্মঘট করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাস মালিকরা বিএনপির সমাবেশের কারণেই ধর্মঘট করছে। কিন্তু তারা কারণ হিসেবে দেখাচ্ছে সড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধের জন্য এই ধর্মঘট করছে।’ যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের এমন অভিযোগ অযৌক্তিক। অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে না।’
ফরিদপুরে পরিবহন ধর্মঘটে দুর্ভোগে সাধারণ যাত্রী-রোগীরা :
বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের দাবিতে ফরিদপুরে ৩৮ ঘন্টার পরিবহন ধর্মঘট চলছে। আজ শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বাস ও মিনিবাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে জেলা বাস মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এতে গন্তব্যে পৌঁছাতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রী, চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফেরা রোগী ও পরিবহন শ্রমিকরা।
সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ফরিদপুর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, নতুন বাসস্ট্যান্ড এবং ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা ঘুরে দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে। নতুন বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, বাসগুলো টার্মিনালে সারিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। টার্মিনালের পশ্চিম পাশে কয়েকজন শ্রমিক ক্যারম খেলছেন।
ফরিদপুর-মাদারীপুর রুটের বন্ধন পরিবহনের শ্রমিক শেখ জিহাদ (৪৫) বলেন, ‘আজ থেকে আমরা ধর্মঘট শুরু করছি। আমাদের নেতারা যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা তা মেনে চলছি।’
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের সামনে কথা হয় মাদারীপুরের টেকেরহাট এলাকার মোহাম্মাদ আলীর (৫৮) সঙ্গে। তিনি তার স্ত্রীকে চিকিৎসা করিয়ে বাড়িতে ফিরছেন। সঙ্গে তার মেয়েও আছেন। মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য চার দিন আগে এই হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। আজ তাকে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। বাস না পাওয়ায় বাসভাড়ার চেয়েও ৩০ টাকা করে বেশি জনপ্রতি দিয়ে বাড়িতে যেতে হচ্ছে।’
বাস বন্ধ থাকায় মানুষ অটোরিকশা ও মাহেন্দ্রতে গন্তব্যে যাচ্ছে। ফরিদপুর থেকে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহসহ দূরের গন্তব্যে মানুষ অ্যাম্বুলেন্সে করে যাতায়াত করছে। সেক্ষেত্রে তাদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়েও ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেশি।
এদিকে নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে দলের নেতাকর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদসহ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেশের সব বিভাগে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশালের পর শনিবার (১২ নভেম্বর) ফরিদপুরে গণসমাবেশের আয়োজন করেছে বিএনপি। এটি বিএনপির ষষ্ঠ বিভাগীয় গণসমাবেশ। এই সমাবেশকে ঘিরে ৩৮ ঘন্টার পরিবহন ধর্মঘট ডাকায় ইতিমধ্যে বিভিন্ন উপায়ে সমাবেশস্থল ফরিদপুরের কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে জড়ো হয়েছেন নেতাকর্মীরা। শনিবার দুপুরে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় গণসমাবেশের সমন্ব^য়কারী ও দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, বেসরকারি বাসের পাশাপাশি দুই দিন বিআরটিসি বাস বন্ধ করে সরকার জনভোগান্তি বাড়ালো। এসব করেও তারা বিএনপির গণসমাবেশকে বানচাল করতে পারবে না। এই সমাবেশ সফল হবেই।
চুয়াডাঙ্গা থেকে ফরিদপুর হয়ে চলাচলকারী আট রুটের বাস বন্ধ :
চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজধানী ঢাকাসহ আটটি রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতের পর এই জেলা থেকে এসব রুটে যাত্রীবাহী কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ‘আগামীকাল শনিবার রাতের আগে বাস ছাড়ার তেমন সম্ভাবনা নেই।’
রুটগুলো হচ্ছে- চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, বরিশাল ও পটুয়াখালী। এসব রুটে প্রতিদিন রাত সাড়ে ৩টা থেকে পরের দিন রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ১০টি পরিবহনের শতাধিক ট্রিপ বাস ফরিদপুর জেলার ওপর দিয়ে চলাচল করে।
বাস ধর্মঘটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
আজ ফরিদপুরের কোমরপুর আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ফরিদপুরে শুরু হয়েছে ৩৮ ঘন্টার বাস ধর্মঘট। মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধের দাবিতে ধর্মঘট ডাকার কথা বলছে জেলা বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। যদিও বিএনপি বলছে, গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. সালাউদ্দিন বলেন, ফরিদপুরে পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করায় শ্রমিকরা গাড়ি চালাতে আগ্রহী নন। পরিবহনের নিরাপত্তা ও বাড়তি ঝামেলা এড়াতে মালিকরা বাস ছাড়ছেন না।
যদিও চুয়াডাঙ্গা থেকে ফরিদপুরের গণসমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বলেন, চুয়াডাঙ্গা থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা খুলনার গণসমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন। ফরিদপুরের সমাবেশে চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে যোগদানের বিষয়ে কেন্দ্রের কোনো নির্দেশনা নেই। তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে কেউ যেতে পারেন।
আজ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা শেষে বেলা ৩টায় কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতারা গণসমাবেশস্থলের মাঠ পরিদর্শন করেন।
এদিকে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ থাকায় এসব রুটে চলাচলকারী সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। গতকাল সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন কাউন্টারে গিয়ে যাত্রীবাহী কোনো বাসের দেখা মেলেনি। পরিবহনের ব্যবস্থাপক ও কাউন্টার মাস্টারদের অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। চুয়াডাঙ্গা থেকে সবচেয়ে বেশি ট্রিপে (৫৬ ট্রিপ) বাস চলাচল করে রয়েল এক্সপ্রেস পরিবহনের। এই পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আবুল বাশার বলেন, ‘দাপ্তরিকভাবে কেউ বাস বন্ধ করতে বলেননি। তবে ফরিদপুরে স্থানীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘটের ডাক দেয়ায় বাস বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ধর্মঘট প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।’
চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে কথা হয় সাইফুল ইসলাম নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, চিকিৎসার প্রয়োজনে জরুরিভাবে ঢাকায় যেতে হবে। কিন্তু হঠাৎ বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। এই যাত্রী বলেন, ‘ট্রেনে ঢাকায় যাব সেখানেও আসন ফাঁকা নেই। অগত্যা প্রায় ৪০০ কিলোমিটার পথ ট্রেনের ভেতরে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।’