ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণ-সমাবেশ শনিবার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৪০ পিএম, ১১ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৪৯ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের জন্য সম্পূর্ন প্রস্তুত কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনষ্টিটিউশন মাঠ। ইতোমধ্যেই বিশাল আকারে মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে। সমাবেশস্থল মাঠসহ ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ মোড় থেকে ভাঙা রাস্তার মোড়সহ প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়কে শোভা পাচ্ছে বিএনপি নেতাদের ব্যানার, ফেস্টুন আর প্লাকার্ড। কেন্দ্রীয় নেতাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বেশ কয়েকটি স্থানে বানানো হয়েছে তোড়ন। মাঠ ও মাঠের বাইরে লাগানো হয়েছে শতাধিক মাইক। আলোকসজ্জ্বা করা হয়ে মাঠজুড়ে। বিএনপির এ সমাবেশকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঝে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করলেও বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বিভিন্ন স্থানের সমাবেশের আগে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেবার ঘটনায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। তারা সমাবেশের তিনদিন আগে থেকেই ফরিদপুরে আসতে থাকেন। বুধবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাস-ট্রাকে করে আসতে থাকে। বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় দুইদিনের পরিবহন ধর্মঘট চলায় আজ শুক্রবার সকাল থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ইজিবাইক, মোটর সাইকেল, বাই সাইকেলযোগে এবং অনেককেই পায়ে হেঁটে সমাবেশে আসতে দেখা গেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বিএনপির নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, পথে পথে তাদের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। পুলিশ যানবাহন আটকে দিয়েছে। অনেকে একসাথে থাকলে তাদের ফরিদপুরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাধা দিয়েছে।
আজ শুক্রবার দুপুরের পর থেকে রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, পাবনাসহ বিভিন্ন স্থানের নেতা-কর্মীরা ট্রেনে চড়ে সমাবেশ স্থলে আসেন। শুক্রবার সন্ধ্যার সময় এ রিপোর্ট লেখা সমাবেশস্থলে লোকে লোকারন্য হয়ে পড়ে।
তিনদিন আগে যারা সমাবেশস্থলে এসেছেন তারা আব্দুল আজিজ ইনষ্টিটিউশন স্কুল মাঠে রাতযাপন করছেন। কেউ কেউ আত্বীয়-স্বজনদের ও বিএনপি নেতাদের বাসায় থাকছেন। শুক্রবার দুপুরে সমাবেশস্থল কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনষ্টিটিউশন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, সমাবেশের মঞ্চসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। মাঠের পূর্ব পাশে বিশাল আকারের মঞ্চ বানানো হয়েছে। নারীদের বসার জন্য আলাদা স্থান নির্ধারন করা হয়েছে। গত তিনদিন ধরে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নেতা-কর্মীদের রাতযাপনের জন্য মাঠের বাইরে বিশাল আকারের প্যান্ডেল তৈরী করা হয়। লোকজনদের খাবারের জন্য স্কুলের পিছনে রান্নার আয়োজন করা হয়। এছাড়া বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার বাড়িতে থাকা ও রান্নার আয়োজন চলছে। সমাবেশে নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে একটি তদারকি কমিটি সার্বক্ষনিক মাঠে থেকে দেখভালের কাজ করছেন।
আজকের সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান বক্তা হিসাবে থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
গণ-সমাবেশের সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা.এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। তারা দমন পীড়ন করে ক্ষমতা আকড়ে ধরে রাখতে চায়। কিন্তু বাংলার মানুষ জেগে উঠেছে। তারা আর কোন সুযোগ দেবেনা এই সরকারকে। অবিলম্বে এ সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে।
ফরিদপুর বিভাগীয় গণ-সমাবেশের প্রধান সমন্বয়ক ও ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু বলেন, গণ-সমাবেশের জন্য আমরা ফরিদপুর শহরে অবস্থিত রাজেন্দ্র কলেজ মাঠসহ চারটি স্থান চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দুরে কোমরপুর স্কুলে মাঠে সমাবেশের অনুমতি দেয়। আমরা তাও মেনে নিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন এবং সরকারী দলের নেতারা সমাবেশ বানচাল করতে এখনো সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে। সরকারের ইন্ধনে সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ চেকপোষ্ট বসিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানী করছে। একসাথে বেশী সংখ্যক লোক দেখলেই তারা ফরিদপুরে ঢুকতে দিচ্ছেনা। তারপরও সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ এসে উপস্থিত হচ্ছে।
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ জানান, সমাবেশে আসার পথে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পথে পথে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সমাবেশে যাতে লোকজন আসতে না পারে সেজন্য সব ধরনের কৌশলই প্রয়োগ করছে স্থানীয় প্রশাসন। তিনি বলেন, কোনো ধরনের কৌশল খাটিয়ে বিএনপির সমাবেশ বানচাল করা যাবেনা।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, সরকারের সময় শেষ হয়ে এসেছে। এ জালিম সরকারকে আর মানুষ ক্ষমতায় দেখতে চায়না। আগামী ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের মধ্যদিয়ে এ সরকারকে লালকার্ড দেখাবে জনগণ।
এদিকে, বিএনপির গণ-সমাবেশকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫টি জেলায় পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে সাধারণ মানুষ।