ফরিদপুরে সমাবেশের ‘বড় প্রস্তূতি’ মাদারীপুর বিএনপির
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০৫ পিএম, ১০ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৫৯ এএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
প্রতিদিনই জেলা-উপজেলা বিএনপি ছাড়াও বিএনপির সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে একাধিক প্রস্তূতি সভা হচ্ছে এবং পাড়া-মহল্লা ও হাটেঘাটে লিফলেট বিতরণ চলছে। এই গণসমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি মাদারীপুরে তাদের রাজনৈতিক শক্তি ও সমর্থন প্রকাশের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
বিভাগীয় সমাবেশ করতে মাদারীপুরে বড় ধরনের প্রস্তূতি নিচ্ছে বিএনপি। অন্য বিভাগে কর্মী যাতায়াতে বাধা তৈরি হলেও এবার ভিন্ন কৌশল নেয়ায় সেই সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
আসন্ন ১২ নভেম্বর হবে বিএনপির এই ষষ্ঠ গণসমাবেশ। এর আগে পাঁচটি বিভাগে সমাবেশ শেষ করেছে তারা। ফরিদপুর বিভাগ না হলেও ফরিদপুরকে সাংগঠনিক বিভাগ ঘোষণা করেছে বিএনপি।
আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে সারা দেশে পরিচিত বৃহত্তর ফরিদপুর। তবে বৃহত্তর ফরিদপুরের পরিস্থিতি এখন আর আগের মতো নেই বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা।
দ্রব্যমূল্যের ঊধ্র্বগতি, লোডশেডিং, দুর্নীতি, মামলা-হামলা, গুম, হত্যা, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে সারা দেশে হচ্ছে বিভাগীয় সমাবেশ।
ফরিদপুরে বিএনপির এই বিভাগীয় গণসমাবেশের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। গণসমাবেশ সফল করতে অভ্যর্থনা উপকমিটি, ব্যবস্থাপনা উপকমিটি, মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটি, প্রচার উপকমিটি, আপ্যায়ন উপকমিটি, মিডিয়া উপকমিটি, মেডিকেল উপকমিটি ও শৃঙ্খলা উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ফরিদপুরের সমাবেশের জন্য প্রশাসন শহরের বাইরে ৬ কিলোমিটার দূরে কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউটে গণসমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। বিএনপি প্রশাসনের প্রস্তাব মেনে নিয়ে এই মাঠ নিয়মিত পরিদর্শন করছে।
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক ভিপি খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক বলেন, ‘১২ নভেম্বরের এই গণসমাবেশকে ঘিরে আগেভাগেই সরকারি মহল পরিবহন ধর্মঘটসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তবে পদ্মা, গড়াই, মধুমতী ও আড়িয়াল খাঁ বেষ্টিত বৃহত্তর ফরিদপুরের প্রবেশ পথ অসংখ্য। তাই অন্য বিভাগের মতো বিএনপির সমাবেশ ঠেকানোর কৌশল এখানে কার্যকর করা সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘পদ্মা পেরোলেই বৃহত্তর ঢাকার মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলা। দুটিই বিএনপির দুর্ভেদ্য ঘাঁটি। কাছেই রয়েছে ঢাকার দুই উপজেলা ধামরাই ও সাভার। যেখানে আওয়ামী লীগের অবস্থা সব সময়ই দুর্বল। আবার অন্য পাড়ে রয়েছে বৃহত্তর যশোর, খুলনা ও কুষ্টিয়া। এত কাছে এসব এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষ যোগ দেবে ফরিদপুরের সমাবেশে।
‘দেশের মধ্যবর্তী জেলায় এই গণসমাবেশ হওয়ায় শুধু ফরিদপুরই নয়, মাদারীপুর সহ আশপাশের জেলার লোকেরাও ব্যাপক হারে যোগ দেবেন। তাই সব দিক বিবেচনায় ফরিদপুরের এই গণসমাবেশ হবে স্মরণকালের সবচেয়ে বৃহৎ গণসমাবেশ।’
বিএনপির সহ-গণশিক্ষা বিষায়ক সম্পাদক ও মাদারীপুর-৩ সংসদীয় আসনের বিএনপি সমর্থিত এমপি পদপ্রার্থী আনিসুর রহমান তালুকদার (খোকন তালুকদার) বলেন, ‘গত ১৪টি বছর সারা দেশের মতো মাদারীপুরেও মামলা-হামলা দিয়ে নেতা-কর্মীদের একরকম পঙ্গু করে রাখা হয়েছিল। সরকারি দল আওয়ামী লীগের বাধা পেরিয়েও আন্দোলন সংগ্রামে মাদারীপুরে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন মাঠে ছিল। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও তারা অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। আবার উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তবে ফিনিক্স পাখির মতো প্রতিবারই আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে জেগে উঠেছি। এবার তার প্রমাণ হবে এই ফরিদপুরের গণসমাবেশে।’
মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও মাদারীপুর-২ আসনের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি হেলেন জেরিন খান বলেন, ‘যেখানেই হোক এই সমাবেশে তিন থেকে চার লাখ লোকের সমাগম হবে এমনটিই ধারণা করা হচ্ছে। সে লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। মাদারীপুরে বিএনপি সব সময়ই শক্তিশালী। পাশাপাশি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষক দল, শ্রমিক দল ও মহিলা দলসহ সকল অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাও সরব হয়ে উঠেছেন।’
মাদারীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট মোঃ জাফর আলী মিয়া বলেন, ‘গণসমাবেশ সফল করতে গ্রাম থেকে গ্রাম চষে বেড়িয়ে প্রস্তুতি সভা ও শহরে সমন্বয় সভা করে ক্লান্তিহীন সময় কাটাচ্ছেন আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। সরকারের পক্ষ থেকে সবধরনের বাধা তৈরির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা যখন বাস ট্রাক মালিকদের সঙ্গে কথা বলি, তখন তারা বলেন ওপরের নির্দেশে আমারা বাস ট্রাক বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছি।’ মাদারীপুর জেলা থেকে প্রায় লক্ষাধিক বিএনপির নেতাকর্মী গণসমাবেশে অংশ নিবে।
অপরদিকে, গত রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে শিবচরের পাচ্চর এলাকায় ফরিদপুর বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে শিবচর উপজেলা পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে মত বিনিময় সভাচলা কালেই স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা কর্মিরা অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শাহাদাত হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক ও নাকসু’র সাবেক ভিপি এ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজান শিকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফ সরদার, ইরাদ মুন্সিসহ কমপক্ষে ১০জন। আহতদের উদ্ধারের করে শিবচরের খান ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে মাসুদ পারভেজ-এর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাতেই তাকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।