জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩৬ পিএম, ৭ নভেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৪৫ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
আজ ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস।
১৯৭৫ সালের এই দিনে আধিপত্যবাদী চক্রের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় বুকে নিয়ে সিপাহী-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলো। তাদের ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মাধ্যমেই রক্ষা পায় সদ্য অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা। কয়েকদিনের দুঃস্বপ্নের প্রহর শেষে সিপাহী-জনতা ক্যান্টনমেন্টের বন্দিদশা থেকে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্র ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবর্তক, স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপদ্রষ্টা এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে মুক্ত করে দেশ পরিচালনার গুরু দায়িত্ব অর্পণ করে। তাই ৭ নভেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনের এক অনন্য ঐতিহাসিক তাৎপর্যমন্ডিত দিন।
সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আধিপত্যবাদ, একনায়কতস্ত্র, একদলীয় শাসন, জনজীবনের বিশৃঙ্খলাসহ তখনকার বিরাজমান নৈরাজ্যের অবসান ঘটে। একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ থেকে দেশ একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশে ফিরে আসে। জাতীয় ইতিহাসের এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজ নৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন এদিনটি পালন করছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী প্রদান করেছেন। দিবসটির গুরুত্বারোপ করে বিএনপিসহ বিভিন্ন সংগঠন ব্যাপক কর্মসূটি গ্রহণ করেছে।
১৯৭৫ সালের ৩ থেকে ৬ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করছিল। হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীর একটি উচ্চাভিলাষী দল সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে বন্দি করে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় দেশের সাধারণ জনগণ ও সিপাহীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে। জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর সর্বমহলে, বিশেষত সিপাহীদের কাছে ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। ফলে তারা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ ও জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ৬ নভেম্বর মধ্যরাতে ঘটে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ এক বিপব, যা ইতিহাসে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে স্থান লাভ করেছে।
দেশবাসী সেদিন জিয়ার হাতেই তুলে দিয়েছিল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব। ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতা স্বকীয়ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের চক্রান্তকারীদের খপ্পর থেকে দেশকে উদ্ধার করে ২৫ বছরের গোলামি চুক্তিকে হিমাগারে ফেলে দিয়ে সত্যিকার স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে স্থান করে নেয়। ওই সময় বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ (গুটি কয়েক বৈদেশিক অনুচর ছাড়া) এবং সশস্ত্রবাহিনীর পূর্ণ সমর্থন ও আস্থা নিয়ে দেশকে একটি উন্নতি, অগ্রগতি ও শান্তির পথে নিয়ে যায়। সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্লবে নস্যাৎ হয়ে যায় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী দেশ বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র। আধিপত্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ।
৭ নভেম্বরের বিপ্লব সম্পর্কে তদানীন্তন দৈনিক বাংলার রিপোর্টে বলা হয়, ‘সিপাহী ও জনতার মিলিত বিপ্লবে চারদিনের দুঃস্বপ্ন শেষ হয়েছে। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত প্রায় ১টায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীর সিপাহী-জওয়ানরা বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন। ষড়যন্ত্রের নাগপাশ ছিন্ন করে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে উদ্ধার করেছেন বিপ্লবী সিপাহীরা। ৭ নভেম্বর শুক্রবার ভোরে রেডিওতে ভেসে আসে, ‘আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি।’
জেনারেল জিয়া জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। ওইদিন রাজধানী ঢাকা ছিল মিছিলের নগরী। পথে পথে সিপাহী-জনতা আলিঙ্গন করেছে একে অপরকে। নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ ধ্বনিতে ফেটে পড়েন তারা। সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্লবে ভন্ডুল হয়ে যায় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী সব ষড়যন্ত্র। আনন্দে উদ্বেলিত হাজার হাজার মানুষ নেমে আসেন রাজপথে। সাধারণ মানুষ ট্যাঙ্কের নলে পরিয়ে দেন ফুলের মালা। এই আনন্দের ঢেউ রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের সব শহর-নগর-গ্রামেও পৌঁছে যায়।
এবার জাতীয় বিপ্ল¬ব ও সংহতি দিবস এমন এক সময় পালিত হচ্ছে যখন আবারো একই আধিপত্যবাদী শক্তির তাঁবেদার একদলীয় সরকারের দুঃশাসনে দেশের মানুষ নির্যাতিত। গণতন্ত্রকে দেয়া হয়েছে নির্বাসনে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। সরকারি দল ছাড়া অন্য কোনো রাজ নৈতিক দলের কর্মকান্ড এক রকম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে রাজ নৈতিক দলের অনেক কার্যালয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসীন হন। একতরফা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দেশের বৃহৎ রাজ নৈতিক দল বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজ নৈতিক দল বয়কট করে। বিনা ভোটে নির্বাচিত হয় ১৫৪ সংসদ সদস্য। বাকি আসনে ভোট পড়ে মাত্র ৫ ভাগ। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তার আগের রাতে অর্থাৎ ২৯ তারিখ রাতেই সারাদেশের কেন্দ্র দখল করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সহায়তায় জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করে। দলে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন শুধু আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ করে ফলাফল ঘোষণা করে। যা সারাদেশসহ বিশ্ব গণমাধ্যমে ফলাওভাবে প্রচারিত হয়। যে নির্বাচনে শতাধিক ভোট কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ে। তাছাড়া ৮০ থেকে ৯৯ ভাগ ভোট পড়েছে শত শত কেন্দ্রে। দেশের সবচেয়ে বৃহৎ দল বিএনপিকে দেয়া হয়েছে ৬টি আসন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে ও আগে সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিসহ বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়ের করে। মামলা থেকে বাদ যায়নি মৃত ব্যক্তি, হজ পালনরত ব্যক্তিসহ বিদেশে থাকা ব্যক্তিরাও। হাজার হাজার নেতাকর্মী আটক করে কারাবন্দি করা হয়। এমন একটি ভোট ডাকাতির নির্বাচন সম্পন্ন করতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে আগেই কারাবন্দি করা হয়। আইন আদালত, গণমাধ্যমে সবই নিয়ন্ত্রণ করা হয় আগে থেকেই। বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নিতে দেশের প্রধান বিচারপতিকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। বাংলাদেশের মানুষ এমন ভোট ডাকাতির নির্বাচন আগে কখনই দেখেনি। নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো।
একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনে দেশের গণতন্ত্র আজ মৃতপ্রায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে বিরোধী দলের ওপর চালাচ্ছে দলন নিপীড়ন। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় জেলে ঢুকিয়ে সরকার সারাদেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। মিডিয়ার ওপরও চলছে দলন-নির্যাতন। দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। বিএনপির অভিযোগ মিথ্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি করে রেখেছেন। এক মামলায় জামিন পেলেও নতুন নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানোয় তিনি মুক্তি পাচ্ছেন না। দেশ নানামুখী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জালে জড়িয়ে পড়েছে। এ সুযোগে সরাকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, এমপিসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা চরম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। দুর্নীতির হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। দেশের আইনশৃংখলার চরম ্অবনতিসহ এক আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় দেশের মানুষ এখন মুক্তির জন্য নতুন এক বিপ্লবের প্রহর গুনছে।
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী প্রদান করেছেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বাণীতে বলা হয়, ৭ নভেম্বর জাতীয় জীবনের এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সৈনিক-জনতা এক অদম্য শক্তিতে রাজপথে নেমে এসেছিলো জাতীয় স্বাধীনতা সুরক্ষা ও হারানো গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের দৃঢ় প্রত্যয় বুকে নিয়ে। তাই ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিপ্লবের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাধীনতা-উত্তর রাজ নৈতিক বিশৃঙ্খলা, তৎকালীন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নিজ স্বার্থে জাতীয় স্বাধীনতাকে বিপন্ন করে দেশকে এক অজানা গন্তব্যে ঠেলে দেয়। শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে একদলীয় হিংস্র শাসন-বাকশাল চালু করা হয়। ফলশ্রুতিতে মানুষের বাক-ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে গলাটিপে হত্যা করে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়, নিষিদ্ধ করা হয় দেশের সকল বিরোধী রাজ নৈতিক দলকে। এতে জনমনে চরম অশান্তি ও হতাশা নেমে আসে। বাকশালী সরকার চরম অগণতান্ত্রিক ও নির্দয় পন্থায় মানুষের সহজাত মৌলিক অধিকারগুলোকে হরণ করে। সেই চরম সংকটকালে ’৭৫-এর ৩ নভেম্বর কুচক্রীরা মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে। শুরু হয় এক অরাজক পরিস্থিতি। এমতাবস্থায় ৭ নভেম্বর স্বজাতির স্বাধীনতা রক্ষায় অকুতোভয় দেশপ্রেমিক সৈনিক এবং জনতার ঢলে রাজপথে এক অনন্য সংহতির স্ফুরণ ঘটে এবং জিয়াউর রহমান বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত হন। এই অমøান বিপ্লবে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত হয়। গণতন্ত্র অর্গলমুক্ত হয়ে বিকাশের পথে এগিয়ে যায়, এই দিন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসে। তারপরেও চক্রান্ত থেমে থাকেনি, বিদেশি শক্তির এদেশীয় অনুচররা তাদের উদ্দেশ্য সাধনের পথে কাঁটা মনে করে ১৯৮১ সালে দেশমাতৃকার বীর সন্তান রাষ্ট্রপতি জিয়াকে হত্যা করে। জিয়া শাহাদত বরণ করলেও তার আদর্শে বলীয়ান মানুষ দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় এখনও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত গোষ্ঠী আবারো নব্য বাকশালী সরকার রাষ্ট্রক্ষমতাকে অবৈধভাবে আঁকড়ে আছে। সরকারের নতজানু নীতির কারণেই দেশের সার্বভৌমত্ব ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ছে। দেশীয় রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির স্বাধীন সত্তাকে হরণের চেষ্টা থেমে নেই। দেশে এক ঘোর দুর্দিন বিরাজমান। জ্বালানি তেলসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন এখন দুর্বিষহ। তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াকু নেতা-কর্মীদেরকে অ বৈধ শাসগোষ্ঠী বীভৎস নির্মমতায় হত্যাসহ আহত করছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতারের হিড়িক চালাচ্ছে। নির্যাতনের এই অব্যাহত ধারায় ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনো বন্দি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্যই ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রীর মুক্তি অত্যন্ত জরুরি। তাই আমি মনে করি ৭ নভেম্বরের চেতনায় জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমি জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে দেশবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আমি দেশবাসী সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। তাদের সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করি। ’৭৫-এর ৭ নভেম্বর সৈনিক-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের দেশমাতৃকার স্বাধীনতা সংহত করেছিল। এই ঐতিহাসিক বিপ্লবে আমাদের মাতৃভূমি প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীন অস্তিত্ব লাভ করে এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলা শুরু হয়। পরাজিত হয় বাকশালী চক্রের অশুভ ইচ্ছা। ১৯৭৫ সালের এ দিনে স্বাধীনতার চেতনায় আধিপত্যবাদী শক্তির নীল নকশা প্রতিহত করে এদেশের বীর সৈনিক ও জনতা। সম্মিলিত প্রয়াসে জনগণ নতুন প্রত্যয়ে জেগে ওঠে। ৭ নভেম্বর বিপ্লবের সফলতার সিঁড়ি বেয়েই আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক মুক্তির পথ পেয়েছি। আইনের শাসন, বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরে এসেছিল। দেশ, জনগণ, স্বাধিকারসহ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের চেতনা বিরোধী সুগভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার স্বতঃস্ফুর্ত বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল, এই বিপ্লবের মাধ্যমে জাতি পেয়েছিল এক যোগ্য নেতৃত্ব জিয়াউর রহমানকে, যিনি ‘৭১-এ জাতির চরম ক্রান্তিলগ্নে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সফল রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উন্মেষ ঘটিয়ে জাতিকে উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির মহাসড়কে উঠিয়েছিলেন। আর সেজন্যই আমাদের জাতীয় জীবনে এই বিপ্লবের তাৎপর্য মহিমামন্ডিত।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকের এই মহান দিনে আমি দেশবাসীকে আহবান জানাই, যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭৫ সালে আমরা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, সেই একই চেতনাকে বুকে ধারণ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষায় আবার সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বর্তমানে মানুষের জীবন-জীবিকা গভীর সংকটাপন্ন, আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতিতে দেশে এক ভয়ানক অরাজকতা বিদ্যমান। জ¦ালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার অনেক দূরে সরে গেছে। অবৈধ সরকারের চরম প্রতিহিংসার শিকার বন্দি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দেশনেত্রীর মুক্তি এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে আসতে হবে। জাতীয় স্বাধীনতা সুরক্ষা, বহুদলীয় গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক মুক্তি, শান্তি, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদাই হচ্ছে ৭ নভেম্বরের চেতনা।
বিএনপির কর্মসূচি : জাতীয় ইতিহাসের এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন কর্মসূচি পালন করছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে :
১। ৭ নভেম্বর মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার সকাল ৬টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
২। আজ ৭ নভেম্বর সকাল ১১টায় দলের মহাসচিবসহ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন।
৩। দিবসটি উপলক্ষে আজ ৭ নভেম্বর বিএনপির উদ্যোগে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেলা ২টায় উন্মুক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
৪। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহ স্ব স্ব উদ্যোগে আলোচনা সভা ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করবে।
৫। ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ইতিমধ্যে সারাদেশে জেলা ও মহানগরে পোস্টার পাঠানো হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আজ বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।
৬। অনুরূপভাবে দেশব্যাপী বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে স্থানীয় সুবিধানুযায়ী ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে যথাযোগ্য মর্যাদায় আলোচনা সভাসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালিত হবে।