দেশে এভাবে জংলী শাসন আর চলতে পারবে না : এ্যানি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:১৭ পিএম, ৪ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৪৫ এএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও মিডিয় সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করেছে, লুটপাট করছে দেদাছে। আইনের শাসন নেই। বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করা হয়েছে। দুর্নীতির কারণে দেশের টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। গুম, খুন, নির্যাতন করে ভিন্ন মতের মানুষকে জিম্মি করে দেশেটাকে একটি মাপিয়া চক্রের হাতে বন্দি হয়ে পড়েছে। দেশের মানুষ আজ নিশ্বাস নিতে পারছে না। সরকার প্রধানের দাম্ভিকতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, তিনি মনে করছেন তিনিই সব কিছু। গত ১ সপ্তাহে এই প্রধানমন্ত্রী যেসব সকথা বলছেন তা শিষ্টাচার বহির্ভুত।
তিনি বলেন, বর্তমান দেশে ক্ষমতায় বসে থাকা অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হলেও তিনি একজন রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। কিন্তু দেখা গেল তার বক্তব্য খুবই হিংসাত্বক ও দাম্ভিকতায় ভরা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে পাঠানো হবে। আবার তার আগে বলেছেন, বিএনপিকে হেফাজতের মতো দমন করা হবে। এধরনের হুমকি দিয়ে তিনি দাম্ভিকতার চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তাই এভাবে জংলী শাসন দেশে চলতে পারে না। এজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। আপানদের ঐক্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করবে। আপানাদের নিয়েই ফ্যাসিবাদী সরকার বিরোধী আন্দোলন বেগবান হবে।
আজ শুক্রবার (০৪ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংককুয়েট হলে বিএনপি’র মিডিয়া সেল আয়োজিত বিশিষ্টজনের সাথে ‘জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গঠনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরবর্তীতে জাতীয় সরকার এবং দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ অপরিহার্য’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপিতর বক্তব্যে এ কথা বলেন।
শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি’র চেয়ারপার্সান বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানেকে ভিশননারী নেতা উল্লেখ করে বলেন, জাতির সঙ্কটকালে শহীদ জিয়া এদেশের হাল ধরেন। তিনি একটি তলাবিহীন ঝুড়ি খ্যাত দেশকে স্বনির্ভরতা দিয়ে গেছেন। শহীদ জিয়া দেশের সকল সেক্টরকে আধুনিকতার রূপ দিয়ে আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে আজও সমাদৃত। তেমনি দেশের বিনা ভোটের সংস্কৃতি, আইনের শাসন নিশ্চিতকরণ, সুশাসন, ন্যায় বিচার, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের ভিশন কি হবে, সেজন্য ২০১৭ সালে ভিশন ৩০ ঘোষণা করেছিলেন। যেখানে বেগম খালেদা জিয়া দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন। যেটি সব মানুষ প্রশসংসা করেছে। যা একজন ভিশনারী লিডারের পক্ষে সম্ভব।
তেমনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্তৃক ভবিষ্যতের জাতীয় সরকারের রূপরেখা সম্পর্কে তুলে ধরে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিএনপি আগামীতে এককভাবে সরকার গঠনের ক্ষমতা অর্জন করলেও বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যে সকল রাজনৈতিকদল অংশ নেবে এবং লড়াই করবে তাদেরকে নিয়েই জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।
তিনি বলেন, অনেকে বলছে, বিএনপি তথা তারেক রহমানের এই ভিশন প্রতিটি জেলা শহরে পৌঁছে দিতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি’র মিডিয়া সেল আগামীতে শুধু জেলা নয়, উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে এধরনের অনুষ্ঠান করে জনগণের মতামত নেবে। যা আগামী নির্বাচনে বিএনপি’র নির্বাচনী ইশতেহারে সন্বিবেশিত হবে। বিএনপি’র মিডিয়া সেল সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইন সভা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান সংসদে যারা আছেন, তারা অনেকই বোঝেন না, আইন কি, বিল কি। তাদের যোগ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। তাই সমাজ বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীদের নিয়ে সংসদের উচ্চ কক্ষ গঠন করা হবে। যেখানে চেক এন্ড ব্যালান্স হবে। তবে সেটি গ্রেট ব্রিটেনের আদলে হবে না অন্য কোনো দেশের উচ্চ কক্ষের আদলে হবে, তা আলোচনা ও সকলের মতামতের ভিত্তিতে হবে। এটি করার কারণ আর কোনো অপশক্তি যেন এই রাষ্ট্রকে জংরী শাসনে পারিণত করতে না পরে।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, জাতীয় সরকারে কারা থাকবে সেটিও আপনাদের মতামতের ভিত্তিতে হবে। কেননা আগামী জাতীয় সরকার মানে এই নয়, যে বর্তামন ফ্যাসিবাদী সরকারের সদস্যরাও সেই সরকারের অংশ হবে। তিনি জার্মানের হিটলারের নাতসীবাদের উদহারণ টেনে বলেন, জার্মানীতে আজও নাতসীবাহিনীদের নির্বাচানে অযোগ্য বহাল রয়েছে। তাই আগামী জাতীয় সরকারে বর্তমান ফ্যাসিবাদীদের কোনো স্থান হবে না। বরং তাদের সকল অপ কর্মের বিচার করা হবে জাতীয় সরকারের কাজ। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করবে তারাই জাতীয় সরকারে অন্তভুক্ত হবে। তিনি বলেন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের উচ্চ কক্ষের সদস্যরা হন মনোনীত। তাই এটি গণতন্ত্রের সঙ্গে কিছুটা সাংঘর্ষিক হলেও কাদের মনোনীত করা হবে সেটিও সংবিধানে স্পষ্ট করতে করতে হবে। যাতে করে সরকারের মধ্যে চেক এন্ড ব্যালান্স ঠিক থাকে।
বিএনপি’র মিডিয়া সেলের অন্যতম সমন্বকারী সাংবাদিক নেতা কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন, বিএনপি’র মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মাদ হেলাল, খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট শফিকুল আলম মনা, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু, সাবেক সভাপতি এডভোকেট গাজী আব্দুল বারী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি স্কুলের সাবেক ডিন ও বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. হারুন অর রশিদ, মুসলিম লীগ খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আক্তার জাহান রুকু, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর, ড্যাব নেতা ডা: সেখ আখতার উজ জামান, প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জুয়েল, বিজেপি নেতা এডভোকেট লতিফুর রহমান লাবু, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ ডিসিপ্লিনের শিক্ষক প্রফেসর শেখ মাহমুদ হাসান পলাশ, সাংবাদিক নেতা মো: রাশিদুল ইসলাম, ড্যাব নেতা ডা: আকরামুজ্জামান, ডা: আবু জাফর সালেহ পলাশ, খুবি শিক্ষক প্রফেসর ড. মো: নাজমুস সাদাত, খুবি কর্মকর্তা মো: আব্দুর রহমান প্রমুখ।
তার আগে ‘জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গঠনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরবর্তীতে জাতীয় সরকার এবং দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ অপরিহার্য’ শীর্ষক প্রবন্ধটি উপাস্থাপন করেন সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মি আক্তার।
অনুষ্ঠানে বিএনপি’র মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক প্রফেসর ড. মোর্শেদ খান, আতিকুর রহমান রুমন, আলী মাহমুদ, বিএনপি নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল, খুলনা জেলা বিএনপি’র আহবায়ক আমীর এজাজ খান, মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পীসহ খুলনার স্বনামধন্য শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।