এই সরকারের পতনের সময় ঘনিয়ে এসেছে, পতন তাদের অনিবার্য : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:২৩ পিএম, ৪ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৩৮ এএম, ৭ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, গতকাল নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় ছাত্রদলের মশাল মিছিলে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র গুন্ডারা। হামলা থেকে বাঁচতে গাড়ীচাপায় মারা যায় রুপগঞ্জ থানার কাঞ্চন পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ইমন হাসান অনীক। এটি যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্তৃক সরাসরি হত্যাকান্ড। আহত হয়েছে ছাত্রদল নেতা আবু হানিফ, আপু মিয়া, আমির হোসেন প্রমূখ। আমি এই হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অনীকের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
তিনি বলেন, নিশিরাতের জবরদস্তি সরকার বুঝে গেছে এবার তাদের আর রেহাই মিলবে না। গুম, খুন, মামলা-হামলা, লুটপাট, টাকা পাচার আর মহাদুর্নীতির কালযাত্রা যবনিকাপাত ঘটতে চলেছে। পতন তাদের অনিবার্য। পতনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। জীবনধারণের সব অবলম্বন হারিয়ে সারাদেশের সর্বহারা মানুষ চাল, ডাল, চিড়া, মুড়ি, হাঁড়ি পাতিল, কাপড়, পোটলা নিয়ে শেখ হাসিনার পতন ঘটানোর দৃঢ় অঙ্গিকার নিয়ে তারা পথে নেমেছে, এগিয়ে আসছে বিএনপি'র সমাবেশস্থলের দিকে। বন্দুকের নল, কোনো রক্তচক্ষু বাধা বিপত্তি তাদেরকে প্রতিহত করতে পারবে না। ক্ষোভের লেলিহান আগুন জ্বলছে প্রতিটি মানুষের চোখে মুখে, অন্তরে-গহীনে।
আজ শুক্রবার (০৪ নভেম্বর) রাজধানীর নয়া পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, বিএনপির মুক্তির গনসমাবেশে মানুষ আসছে বন্যার স্রোতের মতো। গাড়ি আটকে দিলে আসছে নৌপথে। নৌপথে বাঁধা দিলে হেটে রওনা দিচ্ছে। সাতরে পার হচ্ছে নদী। রাস্তা বন্ধ করে দিলে বিল মাঠ পেরিয়ে আসছে, হোটেল রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিলে না খেয়ে থাকছে। সারারাত সমাবেশের মাঠ দখল করে ফ্যাসিবাদীদের থেকে নিজেদের আদায়কৃত জায়গা রক্ষা করছে। তাদের শ্লোগান শুধু শ্লোগান নয়, যেন ১৮ কোটি মানুষের দীর্ঘশ্বাস। এরকম বাংলাদেশ কখনো দেখোনি কেউ। উর্মিমুখর জনস্রোত থেকে উত্থিত ক্ষোভ-দ্রোহের অগ্নি নিঃশ্বাস শেখ হাসিনাকে দগ্ধ করতে শুরু করেছে। এই পরিবেশ-দৃশ্যপট ভোটারবিহিন মাফিয়া সরকারকে রীতিমত নিদ্রাহীন ও অস্থির করে দিয়েছে। বেসামাল হয়ে পড়েছেন শেখ হাসিনা ও তাঁর পারিষদবর্গ। শেখ হাসিনা স্বভাবজাত প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও হিংস্রতা প্রদর্শন শুরু করেছেন আবার।
তিনি আরোও বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হুংকার দিয়ে বলেছেন,"বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে আবারো খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়ে দেবো।" এক সপ্তাহ আগে শেখ হাসিনার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, "জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।"
বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনার কথায় আবারো স্পষ্ট হলো দেশে আইন আদালত হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্ট আর প্রশাসন সবই এখন গণভবনে। রাষ্ট্রের প্রতি বিভাগে আওয়ামী চেতনা ঝড়ের বেগে সংক্রমিত হয়েছে। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ তাঁর নিয়ন্ত্রণে। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বক্তব্য আবারো প্রমাণ করে মাদার অব ডেমোক্রেসি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কোন অপরাধের কারণে নয়, শেখ হাসিনার নির্দেশেই তিনি বন্দী। তাঁর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই বিচারের নামে প্রহসন মঞ্চস্থ করে আটকিয়ে রাখা হয়েছে দেশনেত্রীকে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন আইন ও বিচার ব্যবস্থা তার হাতের মুঠোয় জিম্মি, তিনি ইচ্ছা করলে কাউকে জেলে দিতে পারেন আবার ইচ্ছা করলে কাউকে জেলের বাইরেও রাখতে পারেন। হীরক রানীর দেশে তিনি যা ইচ্ছে তাই করছেন। আইন-আদালত, প্রশাসন সবকিছু তার হুকুমের গোলাম, কেউ স্বতন্ত্রভাবে তাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পালন করতে পারে না। ১৪ বছর আগে ১৫টি মামলা মাথায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ১৫ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির সেই মামলাগুলো আজ কোথায় ? ওই মামলাগুলো উনি চিবিয়ে খেয়েছেন। আর চার বারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ২ কোটি টাকার মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে এখন হুংকার দিচ্ছেন আবারো জেলে পাঠাবেন। আপনার আমলে দেশ থেকে সরকারী হিসেবে ১১ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। কোন ব্যাংকে ডলার নেই, এক ব্যাগ রক্তের দামের চেয়ে এক কেজি চালের দাম এখন অনেক বেশী। শেখ হাসিনার উন্নয়নের সরকার মূলত: বাঁশবান্ধব সরকার। কারণ অধিকাংশ মেগা প্রকল্পে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, কয়দিন আগে প্রধানমন্ত্রী আত্মস্বীকৃতি দিয়েছেন যে, বাড়াবাড়ি করলে 'হেফাজতের মতো বিএনপিকে' দমন করা হবে। এই হুমকী প্রমাণ করে যে, তিনি আবার ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের মতো ইতিহাসের রক্তাক্ত গণহত্যাযজ্ঞ চালাবার পাঁয়তারা করছেন। রাতের অন্ধকারে কিশোর বয়সী মাদরাসা ছাত্রদের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালানোর কথা স্বীকার করেছেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এখন বাকি আছে পিলখানা হত্যাকা-ের স্বীকারাক্তি। তাঁর এই স্বীকারাক্তিগুলো কলংকিত ইতিহাস হয়ে থাকবে বিশ্ব ইতিহাসে। জনগণের কাঠগড়ায় আপনাকে দাঁড়াতেই হবে।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমানের নামে সাজানো মামলায় ক্যাঙ্গারু কোর্টের গ্রেফতারী পরোয়ানা দিয়েছেন। আপনি এসব করে মনে করছেন যে, আপনার তক্তেতাউস অটল থাকবে। আসলে অজানা ভয় থেকেই জনগণের এ মূহুর্তে আশা-আকাঙ্খার প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমানকে হয়রানী করছেন। কিন্তু আপনি এখনো মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। আপনার দমননীতিকে অগ্রাহ্য করে বিএনপি'র গণসমাবেশে জনতার ঢলে যে অপরাজেয় জীবনীশক্তির স্ফুরণ ঘটেছে তা দেখে আপনি আরো বেশী প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠেছেন। আপনি জাতীয়তাবাদী শক্তির ওপর যে আক্রমণ চালাচ্ছেন সেটি টিকে থাকার আখেরী চেষ্টা। নিজেরা পতনের ভয়ে কম্পমান হয়ে কোন ভয় দেখিয়ে আর আন্দোলন বন্ধ করতে পারবেন না। মানুষ ঘর ছেড়েছে, তারা পতন ঘটিয়ে তবে ঘরে ফিরবে। শহীদের রক্তপণ শপথ নিয়ে জাতীয়তবাদী শক্তি এবার শেখ হাসিনার পতন ঘটাবে।
রিজভী বলেন, ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন আওয়ামী সরকার একটি অপরাধপ্রবণ সরকার। এরা গুম-খুন অপহরণ করে, গোপন বন্দীশালা 'আয়নাঘর' বানিয়ে, বিনাভোটে একযুগেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রেখে শেখ হাসিনা বেপরোয়া দুর্নীতি, লুটপাট আর লক্ষ কোটি টাকা পাচার করে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছেন। এতদিন মেকি উন্নয়নের গালগল্প শোনালেও এখন দেখা যাচ্ছে আওয়ামী বাচালতা ছাড়া দেশে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। শেখ হাসিনা ও তাঁর মন্ত্রীরা চাপাবাজির রাজনীতিকরণে ব্যস্ত। দেশে বিরাজ করছে সরব দুর্ভিক্ষ। চারিদিকে শুধু অভাব আর অভাব।
তিনি বলেন, গত পরশু রাত থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি'র সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জাহান জাহান, দারুস সালাম থানা বিএনপি'র সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ১১ নং ওয়ার্ড বিএনপি'র সভাপতি আফজাল হোসেন এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি'র যুগ্ম আহবায়ক আবদুস সাত্তার, মতিঝিল থানা বিএনপি'র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, ৪ নং ওয়ার্ড বিএনপি সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া পাভেল, সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ (গংগা), ২০ নং ওয়ার্ড বিএনপি'র যুগ্ম আহবায়ক চন্দন ও পল্টন থানা শ্রমিক দলের আহবায়ক আবু তাহেরকে গ্রেফতার ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের সদস্য সচিব বদরুল আলম সবুজসহ নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে হানা দিচ্ছে পুলিশ। নেতাকর্মীদেরকে বাসায় না পেয়ে পরিবারের লোকজনদের সাথে অশালীন করা হচ্ছে।
তিনি আরোও বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের কড্ডার মোড়ে যুবদল নেতা আউয়ালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সয়দাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা নবীদুল ইসলামের নেতৃত্বে ৫০/৬০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ আওয়াল-কে ব্যবসা করতে দেয়া হবেনা বলে হুমকি দেয়।
এছাড়া গত ২ নভেম্বর ২০২২, বুধবার সন্ধ্যা ৭ টায় একই স্থানে আওয়ামী লীগ নেতা নবিদুল ইসলাম, আজিজ মন্ডল ও রাজার নেতৃত্বে ৭০/৮০ জন আওয়ামী সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক ও সয়দাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক, ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক শহীদুল ইসলাম শহীদ ও কালিয়া হরিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিরসহ ০৮/১০ জন নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করে। আহতদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম রফিক এবং শহীদুল ইসলাম শহীদকে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গ্রেফতার করা হয়েছে-ঢাকা উত্তর জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব -সজীব রায়হান, গাজীপুর সদর মেট্রো থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোঃ রোহানুজ্জামান শুক্কুর, গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি জিয়াউর রহমান জিয়া, ফেনী জেলা সোনাগাজী উপজেলা আমিরাবাদ ইউনিয়নের ছাত্রদল নেতা শিহাব ও মারুফ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান সুমিত, সাবেক সহ-সাধারণ সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাখাওয়াত হোসাইন খান, কলাবাগান থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোঃ রবিন হোসেন, কলাবাগান থানা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক মোঃ সাগর, ঢাকা ৯ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফকে গ্রেফতার করে ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
আমি অবিলম্বে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি'র উল্লিখিত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারসহ আটককৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং বিএনপি ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় পুলিশী অভিযান ও হয়রানী বন্ধের আহবান জানাচ্ছি।
সিরাজগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও নেতাকর্মীদেরকে গুরুতর আহত করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং হামলাকারী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর আহবান জানাচ্ছি। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।