তারেক-জুবাইদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:১০ পিএম, ১ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:১১ পিএম, ১০ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
তারেক রহমান ও ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ‘সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার (০১ নভেম্বর) মহানগর দায়রা জজ আদালত কর্তৃক গ্রেফাতারি পরোয়ারা জারির পর বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দলের নেতা তারেক রহমান সাহেব ও তার সহধর্মিনী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে যে মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ারা জারি করা হয়েছে তার কোনো ভিত্তি নাই। আওয়ামী লীগ সরকার শুরু থেকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য এসব মামলা করেছে। উদ্দেশ্য একটাই, এই সমস্ত মামলা করে তাদেরকে মূলত বাংলাদেশ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা, রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার একটা প্রচেষ্টা মাত্র। আমরা এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এই গ্রেফাতারি পরোয়ানা ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।”
জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অজর্নের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলায় মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত তারেক রহমান ও তার সহধর্মিনী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। বিচারক আসাদুজ্জামান দুদকের এই মামলার অভিযোগপত্র গ্রহন করে গ্রেফাতারি পরোয়ানার এই আদেশ দেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আমরা সবাই জানি, শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আজকে মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহে অন্তরীন করে রাখা হয়েছে। মিথ্যা মামলাগুলো দিয়ে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিদেশে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তার সহধর্মিনী যিনি একেবারেই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না, তিনি একজন পেশাজীবী মেধাবী চিকিতসক। শুধুমাত্র এই পরিবারের বধু হওয়ার কারণে, রাজনৈতিক কারণে তার বিরুদ্ধে এই মামলা নিয়ে আসা হয়েছে তার বিরুদ্ধেও গ্রেফতার পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। শুধু তাদের বিরুদ্ধে নয়, যারা বিরোধী দল করছে, বিএনপির সাথে যারা জড়িত, তাছাড়া অন্যান্য দলের সঙ্গে যারা আছেন তাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা করছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা- এটা আতঙ্কটা হচ্ছে পুরোপুরিভাবে জিয়া পরিবার এবং বিএনপির ব্যাপার। এই জিনিসটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। আপনারা যদি প্রথম থেকে দেখেন, পুরো বিষয়টা বিশ্লেষন করেন তাহলে দেখবেন যে, ১/১১ ঘটনা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়া ও জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য। বলা হয়েছে যে, মাইনাস টু। কিন্তু ঘটনা ঘটানো হয়েছে একটা পরিবারের বিরুদ্ধে। একইভাবে দেখেন গত ১৪ বছর নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিএনপিকে একেবারে নির্মূল করে দেয়ার জন্য যত রকমের নিপীড়নমূলক-নিবর্তনমূলক আইন, যত রকমের নির্যাতন-অত্যাচার, পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, র্যাব, আওয়ামী সন্ত্রাসীরা করেছে গুম, হত্যা, খুন, মামলা দিয়ে- এটা হচ্ছে তারই একটা অংশ যে, ডা. জোবাইদা রহমান ও আমাদের নেতার বিরুদ্ধে যে মামলা যে মামলার কোনো ভিত্তি নেই।”
তারেক রহমান ও ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ সরকার শুরু থেকে তারা এই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্যে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এবং তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য অসংখ্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলাকে তারা একটা অস্ত্র হিসেবে নিয়েছে বিরোধী দলকে দমন করবার জন্যে এবং দেশে একটা বিরাজনীতিকরণে একটা অবস্থা তৈরি করার জন্যে।”
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে সোমবার অনুষ্ঠিত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরেন মহাসচিব।
স্থায়ী কমিটির সভায় সদ্য প্রয়াত দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সাবিহ উদ্দিন আহমেদ ও মশিউর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর উক্তি ‘সামনের বছর দূর্ভিক্ষ হতে পারে’ নিয়ে স্থায়ী কমিটির সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সভা মনে করে এই উক্তিতে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, সরকার আপদকালীন খাদ্য মজুদ করতে ব্যর্থ হয়েছে। একই সঙ্গে খাদ্য-শষ্য আমদানি গত চার মাসে প্রায় ৩৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এটা উদ্বেগজনক। সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য অধিদফতরের নজিরবিহীন দূর্ণীতি, উদাসীনতা ও অযোগ্যতার কারণে খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির সম্মুখিন।একই সঙ্গে দূর্নীতির কারণে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে ব্যয়ের ফলে ডলার সংকটে আমদানির জন্য এলসি খুলতে না পারায় আমদানিকে ব্যাহত করছে। রিজার্ভ থেকে অনৈতিকভাবে ডলার সরিয়ে নেওয়া, প্রবাসীদের আয় বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশ থেকে বিদেশে হুন্ডি করে প্রতিবছর ৭/৮ বিলিয়ন ডলার পাচার করে এই পরিস্থিতিকে জচিল করে ফেলেছে।”
সার, বীজের মূল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুত ও ডিজেলের অভাবে সারা দেশে সেচ কার্য্ক্রম ব্যাহত হওয়ায় খাদ্যশষ্য উতপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
লোডশেডিংয়ের কারণে সারা দেশে স্বাস্থ্য সেবা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এই সরকারের টার্গেট একটা বিএনপিকে নির্মূল করা। সেইকারণে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, গ্রেফতারি পরোয়ারি জারি করছে….। কিন্তু করলে কি হবে? মানুষ তো বিএনপিকে চায়। বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে মানুষের রাজনীতি। আপনারা নিজেরাই দেখেছেন যে, এতো অত্যাচার নির্যাতনের পরেও আমি নিজে যেকথা প্রায় বলি যে, ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠে বিএনপি। এটা কিন্তু রোধ করার কোনো উপায় নেই। কারণ ইটস এ পিপলস পার্টি, বিএনপি হচ্ছে জনগনের দল। এখানে শত চেষ্টা করেও বিএনপিকে নির্মূল করা যায় না।”
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘‘জেলে দিয়ে কি এই আন্দোলন রোধ করা যায়? এটা সরকারি দলের বেশি জানা উচিত। তাদের নেতাদেরকে পাকিস্তান রোধ করতে পেরেছিলো।পারেনি। পারা যায় না। আজকে দুর্ভাগ্য আওয়ামী লীগ সেই পাকিস্তানি শাসকদের মতোই বিহেব করছে। এই কথা বললে আবার তাদের গায়ের মধ্যে লাগে আর কি।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি উপস্থিত ছিলেন।