আ.লীগের সম্মেলনে মানুষ নয়, ছিল জিন-ভূত : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১১ পিএম, ৩০ অক্টোবর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ১২:২৬ এএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
সরকারি টাকা খরচ করেও ঢাকা জেলা সম্মেলনে আওয়ামী লীগ মানুষ আনতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সরকারি টাকা খরচ করেও আওয়ামী লীগ ঢাকা জেলার সম্মেলনে লোক আনতে পারেনি। ওখানে ছিল জিন-ভূত।
আজ রবিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা স্টেডিয়ামে উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন রিজভী। বদলগাছী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. জাকির হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ফজলে হুদা বাবুলের পরিচালনায় সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহিন শওকত, নওগাঁ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সমবায় বিষয়ক সম্পাদক নজমুল হক সনি, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল মতিন, জাসাসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ইথুন বাবু, জাহিদুল আলম হিটো, নওগাঁ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বায়েজীদ হোসেন পলাশ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম টুকু, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মো. রেজাউল ইসলাম রেজু, মো. আমিনুল হক বেলাল, মো. মামুনুর রহমান রিপন, মো. শফিউল আলম রানা প্রমুখ।
রুহুল কবির রিজভীসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাগত জানিয়ে ১১টি দৃষ্টিনন্দন তোরণ নির্মাণ করা হয়। রিজভীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকা থেকে রাজশাহী ও নওগাঁ পৌঁছালে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দলসহ বদলগাছী উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ৫৪৮ জন কাউন্সিলরের ভোটের মাধ্যমে বদলগাছী উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়। দ্বিতীয়বারের মতো বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল ও আবদুল হাদী চৌধুরী টিপু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
রিজভী বলেছেন, দেশের মানুষ যখন তেল-নুন কিনতে পারেন না, নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন, তখন প্রধানমন্ত্রী গণভবনের পুকুরে চিতল মাছ শিকারে ব্যস্ত। ইদানিং প্রধানমন্ত্রী ভালো সাজার চেষ্টা করছেন। ভালো মানুষ সাজা সহজ, কিন্তু হওয়া কঠিন। জনগণের কঠিন আন্দোলনে বর্তমান সরকারের দুঃশাসনের অবসান হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও তিনি কোনো শিক্ষা নেননি। তিনি এমন প্রতিষ্ঠানে পড়েছেন যেখানে প্রতিনিয়ত মিথ্যা শিখে ভাইস প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর ওই প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল হলেন শেখ হাসিনা।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারের উন্নয়নের সামনে রয়েছে পর্দা। যেটা সরালে দেখা যায় লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি। আজকে বলছেন দুর্ভিক্ষ আসছে। বিশ্বের কোনো প্রধানমন্ত্রী এভাবে ভয় দেখায় না। এতো উন্নয়ন করলেন তো মানুষের হাতে টাকা কোথায়? দুর্ভিক্ষ আসবে না; ইতিমধ্যে এসে গেছে। খাগড়াছড়িতে মা তার সন্তানকে বিক্রি করতে নিয়ে গেছে। এটা দুর্ভিক্ষের নমুনা। আর শেখ হাসিনা অবৈধভাবে মসনদে বসে আছেন। আপনি তো সেটা টের পান না।
রিজভী বলেন, সরকার নাকি লোডশেডিং জাদুঘরে পাঠিয়েছে। তাহলে এখন শতভাগ বিদ্যুৎ কোথায় গেল? বাড়িতে বাড়িতে বিদ্যুৎ কোথায়? জনগণ এটা জানে যে, আপনার উন্নয়নের সামনে রয়েছে পর্দা। যেখানে আছে মানুষের কংকাল। আজকে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (এফএও) বলছে ৬৮ শতাংশ মানুষ খাবার কিনতে পারছে না। আজকে উন্নয়ন কোথায়? দুর্ভিক্ষের হাতছানি কেন? আসলে প্রধানমন্ত্রী তার নিজের ও দলীয় এবং আত্মীয়-স্বজনের জন্য উন্নয়ন করেছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা ও তার মন্ত্রী- এমপিদের পকেট হাতরে দেখলে রিজার্ভের টাকা বের হবে। আওয়ামী লীগের যারা কানাডায় বেগমপাড়া বানিয়েছে তাদের পকেটে রিজার্ভের টাকা আছে। তিনি বলেন, ভালো মানুষ হতে হলে সত্য কথা বলতে হবে। মানুষের উন্নয়ন করতে হবে। আপনি ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করছেন কিন্তু হতে পারবেন না। আপনি মানুষের কল্যাণ ও শান্তি দিতে জানেন না। আপনি নূরে আলম, আব্দুর রহিম ও শাওনকে গুলি করে হত্যা করতে জানেন।
রিজভী বলেন, আজকে অন্যায়ভাবে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে শতকরা পঞ্চাশ শতাংশ। আজকে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন- দিনে বিদ্যুৎ দিতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেন রান্নার তেল দিয়ে কুপি বা বাতি জ্বালাতে হবে। তাহলে এই ক’দিনেই বিদ্যুৎ, চাল-ডাল উধাও হয়ে গেছে? কারণ আপনার নিষ্ঠুর ভুল নীতি। কারণ আপনি জোর করে ক্ষমতায় আছেন। তিনি মিষ্টি কুমড়া দিয়ে বেগুনি বানানোর রেসিপি দিয়েছেন। তিনি কি সেটা খান?
তিনি বলেন, নির্বাচন হয় দিনের আলোতে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জনগণের দুর্বার আন্দোলন ও শক্তিকে ভয় পায় বলেই দিনের ভোট রাতে করেছেন। রিজভী বলেন, আজকে বিদ্যুৎ খাতের লুটপাট আড়াল করার জন্য তিনি ইনডেমনিটি আইন করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রধান অপরাধী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। আর যে ঘটনার সাথে বেগম খালেদা জিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই তাকে সেই মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাবন্দি করে রেখেছেন। আর আপনি ডাকাতের মত সিংহাসন ধরে রেখেছেন। খালেদা জিয়া দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলেন। আর শেখ হাসিনা এরশাদের সাথে নির্বাচনের কথা বলেন। এখানেই খালেদা জিয়ার সাথে শেখ হাসিনার পার্থক্য।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছি। কোনো বুলেট ও টিয়ারশেল আমাদের রুখতে পারবে না। আজকে প্রমাণিত হয়েছে শেখ হাসিনা আর ক্ষমতায় নেই। মনে হয় জনগণ ক্ষমতায় রয়েছে। ইতিমধ্যে বিএনপির গণসমাবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতি সেটাই প্রমাণিত করে। এটা হচ্ছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি তাদের সম্মান ও ভালোবাসা। তারা কোনো ধর্মঘট বা অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আমাদের রুখতে পারবে না। আমাদের নেতা চৌধুরী আলম, ইলিয়াস আলীর গুম-খুনের বিচার একদিন বাংলাদেশের মাটিতে হবে।