নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো খেলা নয়, কাউকে খেলতে দেয়া হবে না : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৩১ পিএম, ২৭ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০২:১৪ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সরকারের পদত্যাগের আগে নির্বাচনের প্রশ্নই ওঠে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ সরকার ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া কোনো খেলা হবে না। কাউকে খেলতে দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। সরকার গুলি করে বিএনপির আন্দোলন দমন করতে চায়। তবে সেটা আর সম্ভব নয়। জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত যুব সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ানি দেন। ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলো ঢাকা জেলা, গাজীপুর জেলা ও মহানগর, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর, মানিকগঞ্জ জেলা, নরসিংদী জেলাসহ আশপাশের জেলা থেকে লাখো নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে সমাবেশ অংশ নেয়। যুব সমাবেশকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের শোডাউন করে যুবদল। সমাবেশের বিস্তৃতি নয়াপল্টন ছাড়িয়ে ফকিরাপুল, কাকরাইল, পল্টন, বিজয়নগর পর্যন্ত এসে পড়ে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুপুর ১টা থেকে মিছিল নিয়ে যুবদলের নেতা কর্মীরা অংশ নেন। ব্যানার, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ফেস্টুন, জাতীয় ও দলীয় পতাকাসহ জড়ো হতে শুরু করেন তারা। সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। এ সময় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত করে তোলে। এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে লাল, সবুজ, হলুদ এবং সাদাসহ বিভিন্ন রঙের ক্যাপ পরেও সমাবেশ অংশ নেন নেতাকর্মীরা।
যুব সমাবেশে মঞ্চে প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিবের পাশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি রেখে দুই চেয়ার খালি রাখা হয়। এর আগে সকালে নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শেরে বাংলা নগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠার পরপরই জাতীয়তাবাদী যুবদল গঠন করেন।
পায়রা বন্দর নির্মাণে বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল (রিজার্ভ) থেকে অর্থ বিনিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের যে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে তার মূলে হচ্ছে সরকারের দুর্নীতি। এমন চুরি করেছে প্রতিটি ক্ষেত্রে যে, এই ১৪ বছরে অর্থনীতিকে ধবংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। আজকে পায়রা বন্দর উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলছেন যে, আমাদের বিরোধীরা অর্থাৎ বিএনপি বলে যে, রিজার্ভের টাকা কোথায় গেলো? অবশ্যই আমরা জিজ্ঞাসা করতে চাই যে, রিজার্ভের টাকা কোথায় গেলো? তিনি উত্তর দিয়েছেন রিজার্ভের টাকা কী চিবিয়ে খায়? চিবিয়ে তো খান নাই, গিলে ফেলেছেন। রিজার্ভের টাকা আপনারা গিলে ফেলেছেন। বলেছেন যে, পায়রা বন্দরে খরচ করা হয়েছে। পায়রা বন্দরে খরচ করার জন্য রিজার্ভের টাকা না।
মির্জা ফখরুল বলেন, রিজার্ভের টাকা হচ্ছে আপনি যখন বাইরে থেকে যে সমস্ত পণ্য আমদানি করবেন সেই টাকা ডলারে পরিশোধ করবেন। রিজার্ভের টাকা হচ্ছে দেশে যখন অর্থনৈতিক ক্রাইসিস দেখা দেবে তখন আপনি এখান থেকে তার ব্যবস্থা করবেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পায়রা বন্দর কার্যকর হতে পারে না। কারণ যে নাব্যতা দরকার, এখানে জাহাজ ভেতরে আসার জন্যে যে পানির দরকার, সেই গভীরতা সেখানে নাই। সেখানে কী করেছেন সুপার ড্রেজার লাগিয়েছেন। এই সুপার ড্রেজারের জন্য আরো সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করে সেখানে আবার চুরির ব্যবস্থা করে আপনারা সেখানে সুপার ড্রেজার লাগিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা তিনটা সমাবেশ করাতেই আপনাদের এতো কম্পন শুরু হয়েছে, এতো কাঁপাকাঁপি শুরু হয়েছে যে, আপনারা ওই সমাবেশগুলো বন্ধ করবার জন্যে আপনারা সমস্ত বাসসহ পরিবহন ধর্মঘট করাচ্ছেন। লজ্জা করে না আপনাদের। কী কাপুরুষ আপনারা? বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে বন্ধ করার জন্য আপনারা আপনাদের পেটোয়া সেই সমস্ত ইউনিয়নকে দিয়ে ধর্মঘট ডাকাচ্ছেন। চট্টগ্রামে ধর্মঘট দিয়েছে, ময়মনসিংহে ধর্মঘট দিয়েছে, খুলনায় ধর্মঘট দিয়েছে। কিন্তু সেই ধর্মঘট দিয়ে কি এই গণতন্ত্রকামী মানুষকে আটকিয়ে রাখতে পেরেছে? পারেনি। তারা পায়ে হেঁটে বিভিন্নভাবে তাদের যে দাবি সেই দাবি জানাতে তারা সেই সমাবেশগুলোতে উপস্থিত হয়েছে।
তিনি বলেন, দেখেন বরিশালে ধর্মঘট দিয়েছে। ৫ দিন আগে বরিশালে ধর্মঘট ডেকেছে। কারণ যেনো সমাবেশকে পন্ড করা যায়। রংপুরে ধর্মঘট দিয়েছে বাস শ্রমিকদের দিয়ে। কারণ যাতে রংপুরের সমাবেশকে বন্ধ করা যায়। আমি বাস মালিকদের বলতে চাই, আমার শ্রমিকদেরকে বলতে চাই, আপনারা সবসময় জনগণের সেবা করেন, আপনারা জনগণের সঙ্গে বরাবরই ছিলেন। আজকে চালের দাম ১০ টাকা থেকে ৯০ টাকা হয়েছে, ডালের দাম বেড়েছে, ডিমের দাম বেড়েছে, চিনির দাম বেড়েছে। আপনারা আপনাদের বাচ্চাদের একটা ডিম পর্যন্ত দিতে পারেন না। তাহলে কার ইঙ্গিতে কাদেরকে সহায়তা করতে আপনারা এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট শক্তি যারা আপনার সমস্ত কিছু কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে সহায়তা করার জন্য আপনারা এই কাজটা করছেন? জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণের ভোগান্তি করবেন না। চলমান আন্দোলনে যুবদলের মুন্সিগঞ্জের শহিদুল ইসলাম শাওন, নারায়ণগঞ্জের শাওন প্রধানের আত্মত্যাগসহ নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই আওয়ামী লীগ সরকার তারা আজকে আমাদেরকে গুলি করে দমন করতে চায়, তারা আজকে আমাদেরকে অত্যাচার করে নির্যাতন করে দমন করতে চায়। এদেশের মানুষরা তা করতে দেবে না, এদেশের যুবকরা তা করতে দেবে না।
এদেশে কোনো নির্বাচন ব্যবস্থা নেই বলে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই দেশে তারা (সরকার) নির্বাচন করতে চাই। এদেশের কোনো নির্বাচন নেই। নির্বাচনি ব্যবস্থাটাই আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছে। একটা নির্বাচন কমিশন করেছে যাকে ডিসি-এসপিরাই মানে না এবং তারা নির্বাচন করতে পারে না। সুতরাং নির্বাচনের প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলেছি যে, সবার আগে হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, তার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করে দিতে হবে এবং একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। পরিষ্কার কথা যে, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা না দিলে এখানে কোনো নির্বাচন হবে না। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সেই কমিশনের মাধ্যমে তখন আবার নতুন করে এদেশের মানুষ তারা তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবে, তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সামনে এখন অনেক কঠিন সময়, আমাদের সামনে অনেক পরীক্ষা, আমাদের সামনে এখন অনেক যুদ্ধ। আজকে মঞ্চে যে চেয়ারটা খালি রাখা হয়েছে সেটা আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য, আরেকটা চেয়ার খালি রাখা হয়েছে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য। আমাদের নেত্রী তার সারাটা জীবন লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন গণতন্ত্রের জন্য। এখনো অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি গৃহে বন্দি হয়ে আছেন। আমাদের নেতাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। ৩৫ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, অসংখ্য নেতা-কর্মীকে খুন করেছে, গুম করেছে। ‘খেলা হবে’- আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-নেতাদের এহেন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বলে কি খেলা হবে। কিসের খেলা হবে? খেলেছো তো ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে, এদেশের মানুষের যুবকদের নিয়ে, ছাত্রদের নিয়ে, নারীদের নিয়ে খেলেছো। এভাবে খেলা হয় না। খেলা যখন হয় তখন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে। খেলা তখনই হবে যখন সরকার থেকে তোমরা পদত্যাগ করবে। যখন নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেবে তখনই সেই নির্বাচনে খেলা হবে। আমরা বলতে চাই, কোনো খেলা হতে দেয়া হবে না। এদেশের মানুষ কখনোই সেটা হতে দেবে না।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যুবদল যদি কৌশল ঠিক করতে পারে এবং রাজপথ দখল করতে পারে তাহলে শেখ হাসিনার পতন অনিবার্য। সেটা হবে, জেলা পর্যায়েও যদি যুবদল সঠিক নেতৃত্ব দেয়। কিন্তু যদি ব্যাপারী ও আরতদাররা নেতৃত্ব দেয় তাহলে হবে না। বাঁশের লাঠি সবার হাতে থাকবে। আত্মরক্ষার জন্য। আর আঘাত করলে পাল্টা আঘাত করতে হবে।
জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের সঞ্চালনায় যুব সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, যুব বিষয়ক সহ- সম্পাদক মীর আলী নেওয়াজ, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করীম বাদরু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, কামরুজ্জামান দুলাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মওলা শাহিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ইছহাক সরকার প্রমুখ। এছাড়াও যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সাজ্জাদুল মিরাজসহ যুবদলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।