সরকারের ডাকাতির ফসল বর্তমান লোডশেডিং : ড. মোশাররফ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১৯ পিএম, ২৭ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:১১ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সরকারের ‘ডাকাতির ফসল বর্তমান লোডশেডিং’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)-এর যৌথ উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে একুশের পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরীর নবম মৃত্বুার্ষিকী উপলক্ষে ‘স্বৈরশাসনে সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে বিদ্যুতের অবস্থা, লোডশেডিং পরিস্থিতির কী অবস্থা আপনারা তা জানেন। বিদ্যুতখাতে ডাকাতি করার জন্য, চুরি করার জন্য এদেশের কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের স্থায়ী ব্যবস্থা তারা করেছে। বিদ্যুতের বিষয়ে কেউ যাতে কিছু বলতে না পারে, আইনের আশ্রয় না নিতে পারে সেজন্য তারা পার্লামেন্টে ইনডেমনেটি আইন পাস করে বিদ্যুৎ সেক্টরে ডাকাতি করার সুযোগ করে দিয়েছে। সেই ডাকাতির ফসল হচ্ছে আজকে বাংলাদেশের এই লোডশেডিং। আজকে গ্রামে-গঞ্জের ১২/১৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না, শহরে ৪/৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না। এই প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, লোডশেডিংকে তিনি মিউজিয়ামে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাহলে কেনো বিদ্যুতের এই লোডশেডিং জনগণের এই প্রশ্নের জবাব সরকারকেই দিতে হবে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নাই উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যারা গণতন্ত্র হত্যার করার জন্য দায়ী, দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতির জন্য দায়ী, দেশ থেকে টাকা পাচারের জন্য দায়ী, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের জন্য দায়ী, ডলার পাচারের জন্য দায়ী তাদেরকে ক্ষমতায় রেখে এই সংকট উত্তরণ সম্ভব নয়। আজকে এটা বিএনপি কিংবা বিরোধী দল বা কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের কথা নয়। এটা সারাদেশের মানুষের দাবি যে, এই সরকারকে হটানো ছাড়া, এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করানো ছাড়া বাংলাদেশে একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান ব্যতিরেকে বর্তমান সংকট উত্তরণ সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, আজকে জনগণ প্রস্তুত। আপনারা দেখেছেন বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশে কিভাবে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। এটাকে কী গণতান্ত্রিক দেশ বলতে পারেন? আমি খুলনার বিভাগীয় সমাবেশে উপস্থিত ছিলাম। দুইদিন আগে বাস-লঞ্চসহ সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি দুইদিন আগে নদীর ওপার থেকে নৌকায় করে মানুষ এপারে আসবে সেটাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। খুলনায় জনগণের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছিলো। এরা সবাই আমাদের নেতা-কর্মী ছিলো না, সাধারণ মানুষও ছিলো। প্রত্যেকটি জনসমাবেশে সাধারণ মানুষ নেমে আসছে। গিয়াস কামাল চৌধুরীর বর্ণাঢ্য জীবন তুলে ধরে গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চান খন্দকার মোশাররফ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ বলেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী বাংলাদেশের সাংবাদিকতাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। মানবিক দিক দিয়ে তিনি ছিলেন অনন্য। তিনি স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে ভয়েস অব আমেরিকায় সাহসিকতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করে দেখিয়ে গেছেন একনায়কের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কিভাবে কাজ করতে হয়। গণতন্ত্রের জন্যে তিনি আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। এখন স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে পারলেই গিয়াস কামাল চৌধুরীর প্রতি সম্মান জানানো হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আজ কেউ সত্য কথা বলতে পারছে না। বললেই তাকে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের কোনো মানুষ আজ নিরাপদে নেই। সাংবাদিকরা আজ নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। তিনি বলেন, এই স্বৈরাচারী সরকার পতনের লক্ষণ শুরু হয়ে গেছে। এই স্বৈরশাসক ভয়ের মধ্যে আছে। একটা ধাক্কা দিতে পারলেই এই স্বৈরশাসকের বিদায় হবে। এই জালিম শাসকের বিদায় হলেই গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ফিরে আসবে এবং গণতন্ত্র রক্ষা পাবে।
বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরী স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি ছিলেন সত্যিকারের চারণ সাংবাদিক। গণমাধ্যম ও গণতন্ত্রের এই ঘোর দুর্দিনে গিয়াস কামাল চৌধুরীর মত সাংবাদিকের প্রয়োজন ছিল। সাহসের সঙ্গে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে তিনি যে ঈর্ষণীয় সুখ্যাতি ও জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তা বাংলাদেশে বিরল। ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক হিসেবে তিনি প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের অন্তরে স্থান করে নিয়েছিলেন। কন্ঠ সাংবাদিকতাকে জনপ্রিয় করে তিনি ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। মানুষের প্রতি তার দরদ ছিল অপরিমেয়।
তিনি বলেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী তার সাংবাদিকতার মাধ্যমে স্বৈরাচার আইয়ুব খান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময় পেশাদারিত্ব বজায় রেখে এসব শাসনামলের সমালোচনা করতেন এবং জনগণের কথা তুলে ধরতেন। তিনি তার কাজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিলেন এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছিলেন। গণমাধ্যম কর্মীদের কন্ঠরোধের আইন করছে সরকার দাবি করে বক্তারা বলেন, এসব আইনের বিরোধিতা করার মাধ্যমেই গিয়াস কামাল চৌধুরীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে।
তিনি আরো বলেন, গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরে পেতে এই স্বৈরাচারী সরকারের পতন ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ নেই। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তাহলেই সকল অধিকার আদায় সম্ভব।
দৈনিক নয়াদিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী ছিলেন একজন সাহসী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। তিনি সব সময় মানুষের কথা ভাবতেন। তার কর্মকান্ডকে স্মরণ করে আমরা চলতে পারলে আমরাও সফল হবো। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং আল্লাহ যেনো তাকে বেহেশত নসিব করেন সেই প্রার্থনা করছি।
সভাপতির বক্তব্যে বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী বাংলাদেশে কন্ঠ সাংবাদিকতাকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে মানুষ উন্মুখ হয়ে থাকতো তার কণ্ঠ শোনার জন্য। অসাধারণ মানবিক গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন গিয়াস কামাল চৌধুরী। তিনি মানুষের উপকার করার জন্য, অগণিত মানুষকে চাকরি দেয়া এবং সাহায্য করার জন্য নিরন্তর ছুটে বেড়াতেন। দলমত নির্বিশেষে তিনি এটা করতেন। রাজনীতির প্রতি তার কোনো মোহ বা উচ্চাভিলাষ ছিল না। বহুমুখী প্রতিভা তাকে সর্বস্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিতে পরিণত করেছিল। অভাবী ও দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জন্য তিনি ঝাঁপিয়ে পড়তেন। ক্ষুধার্তকে খাবার দিতে ব্যাকুল হয়ে পড়তেন।
তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যম বিরোধী সরকার একের পর এক কালো আইন করে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে। কাজেই এই সরকারের পতন নিন্ডিত করা ছাড়া বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বাক-স্বাধীনতা ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। এ সময় তিনি সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরীর রূহের মাগফিরাত কামনা করেন।
বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন বলেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী ছিলেন একজন পরোপকারী মানুষ। তিনি ছিলেন আপোসহীন নেতা। অন্যের উপকারে তিনি সব সময় ঝাঁপিয়ে পড়তেন। তার কাছে এসে কেউ উপকার না পেয়ে ফিরে যেতো না। তিনি আমাদের গর্ব। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
তিনি আরো বলেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন। অন্যের বিপদে-আপদে তিনি সব সময় ঝাঁপিয়ে পড়তেন। রাজনীতির প্রতি তার কোনো মোহ ছিল না।
ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক হিসেবে তিনি প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের অন্তরে স্থান করে নিয়েছিলেন। কন্ঠ সাংবাদিকতাকে জনপ্রিয় করে তিনি ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। তার মধ্যে কোনো লোভ-লালসা ছিল না। তিনি ছিলেন একজন পরোপকারী। তার কর্ম তাকে সারাজীবন আমাদের কাছে আদর্শ হয়ে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী সাংবাদিক ইউনিয়ন ও প্রেসক্লাবের নেতৃত্বে থেকে দেখিয়ে গেছেন কিভাবে সাংবাদিকদের কল্যাণে কাজ করতে হয়। আমি তার রূহের মাগফিরাত কামনা করছি।
বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে ও ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডিআরইউর সাবেক সভাপতি মোরসালীন নোমানী, বিএফইউজের সহ-সভাপতি মোদাব্বের হোসেন, ডিইউজের সহ-সভাপতি বাছির জামাল, বিএফইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশীদ আলম, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন ইবনে মঈন চৌধুরী, ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক শাহজাহান সাজু, প্রচার সম্পাদক খন্দকার আলমগীর হোসাইন, দফতর সম্পাদক ডি এম আমিরুল ইসলাম অমর, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য আবু বকর, আবদুস সেলিম, একেএম মহসিন ও জাকির হোসেন, ডিইউজের নির্বাহী সদস্য রফিক লিটন ও আবদুল হালিম প্রমুখ। এ সময় গিয়াস কামাল চৌধুরীর রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।