সরকার অবৈধ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে দেশকে নরকে পরিণত করেছে : ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪২ পিএম, ২২ অক্টোবর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৫৯ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
কোনো বাধাই সরকার পতন আন্দোলন ঠেকানো যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আন্দোলন ছাড়া বিএনপির সামনে আর কোনো পথ নেই। শেখ হাসিনার সরকার অবৈধ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে দেশকে নরকে পরিণত করেছে। এই অবৈধ সরকার আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। আমাদের রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। আমাদের সকল অর্জনকে ধ্বংস করেছে। শুধুমাত্র একটি কারণে- তাদের অবৈধ ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে। তারা জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, তারা বিনাভোটে, জনগণকে বঞ্চিত করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।
আজ শনিবার বিকেলে খুলনা মহানগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে আয়োজিত বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। এর আগে শনিবার বেলা পৌনে ১১টা থেকে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) শিল্পীরা তাদের পরিবেশনা করেন। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে পরিবেশনা শুরু হয়। পরিবহন ধর্মঘট। বন্ধ নৌযান। চলছে গ্রেফতার অভিযান, পথে পথে তল্লাশি। এমন প্রতিকূলতা পেরিয়েই খুলনায় গতকাল বিএনপির গণসমাবেশে জড়ো হতে শুরু করেছে হাজার হাজার নেতা-কর্মী। নির্ঘুম রাতের পর চারদিকে শুধুই মিছিল আর মিছিল। নেতা-কর্মীরা শোডাউন দিচ্ছেন শহরজুড়ে। শুক্রবার থেকেই মূলত খুলনা মহানগরমুখী নেতা-কর্মীদের যাত্রা শুরু হয়। পরিবহন সংকটে যে যেভাবে পারছেন আসছেন। গতরাতে শহরের রাজপথে দেখা গেছে অভিনব সব দৃশ্য। হাজার হাজার নেতা-কর্মী নির্ঘুম রাত্রি যাপন করেছেন রাজপথে। ছিল না কোনো বিছানা। অনেককে চিড়া-মুড়ি খেতে দেখা গেছে। রাতে নগরীর কেডি ঘোষ রোডস্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে-বাইরে নেতা-কর্মীদের ছিল উপচে পড়া ভিড়। জায়গা স্বল্পতার কারণে পার্টি অফিসের সামনের তিনটি সড়কে রাতে অবস্থান করেন কর্মীরা। সদর থানার উত্তর পাশে মহিলা দলের নেতাকর্মীদের দেখা গেছে। পার্টি অফিসের নিকটস্থ মোড়ে মেহেরপুর থেকে আসা নেতাকর্মীদের, অফিসের নিচে চুয়াডাঙ্গা, যশোরসহ খুলনা জেলার কর্মীদের অবস্থান ছিল। দূরবর্তী জেলার নেতাকর্মীরা বাস, লঞ্চ বন্ধ থাকায় ছোট ছোট পরিবহনে খুলনায় এসেছেন। শত বাধা উপেক্ষা করে খুলনা বিভাগীর সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সরকার নতুন করে ষড়যন্ত্রের পাঁয়তারা শুরু করেছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে বিনা ভোটে, আর ২০১৮ সালে আগের দিন রাতে ভোট কেটে অবৈধভাবে ক্ষতায় এসেছে। আগামী নির্বাচন উপলক্ষে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি করেছে। তদন্ত কমিশন গঠন করে সব দুর্নীতিবাজকে খুঁজে বের করে উৎখাত করা হবে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে আওয়ামী লীগের চিহ্ন থাকবে না। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে শেখ হাসিনার সরকার নতুন করে ষড়যন্ত্রের পাঁয়তারা শুরু করেছে। কিন্তু এই দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। হাসিনা সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, হাসিনা সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তারা জনগণকে বঞ্চিত করে বিনা ভোটে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। তাই তার অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। হাসিনা সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারদের মুক্তির দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অন্যথায় সোজা কথায় বলছি, আপনারাও পালানোর পথ পাবেন না। এই জনগণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আপনাদের উৎখাত করবে। বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার, জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে দলীয় নেতাকর্মী নিহত, হামলা ও মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে গণসমাবেশের অংশ হিসেবে খুলনায় বিএনপির এ বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। তা না হলে নির্বাচন বিগত দিনের মত প্রশ্নবিদ্ধ হয়েই থাকবে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন দিলে আওয়ামী লীগের চিহ্ন থাকবে না। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১০টি আসনও পাবে না। এটা তারা জানে বলেই আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বর্তমান সরকার নতুন পাঁয়তারা শুরু করেছে। এই সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তারা জনগণকে বঞ্চিত করে বিনা ভোটে ক্ষামতায় টিকে থাকতে চায়। আন্দোলন ছাড়া বিএনপির সামনে আর কোনও পথ নেই।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে আওয়ামী লীগের চিহ্ন থাকবে না। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে শেখ হাসিনার সরকার নতুন পাঁয়তারা শুরু করেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বিএনপির ইতিহাস গণতন্ত্র উদ্ধারের ইতিহাস। তাই এ দলটিকে আওয়ামী লীগ ভয় পায়। এ সময় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আরো বেশি শক্তি নিয়ে রাজপথে নামার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘খুলনাবাসীকে বলতে চাই, আরো দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে রাজপথে নামতে হবে। যে দলের ইতিহাস গণতন্ত্র উদ্ধারের ইতিহাস, আওয়ামী লীগ সেই দলকে তো ভয় পাবেই। তিনি বলেন, দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্য আওয়ামী লীগ বাড়িয়েছে। এসব কথা বললে আওয়ামী লীগ ভয় পায়। ১৪ বছর ধরে বেগম খালেদা জিয়াকে নানাভাবে হয়রানি করছেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রেখেছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসনে রেখেছেন। এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পুলিশকে অবৈধভাবে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, সরকার হটানো ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই। জাতির কোনো বিকল্প নেই। জাতিকে যদি গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে হয়, তাহলে এই সরকারকে বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, খুলনায় আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। সরকারি দলের হামলা, পুলিশের গণগ্রেফতার, যানবাহন বন্ধ ও সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পরও লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটিয়ে আজকের গণসমাবেশ সফল করে খুলনার মানুষ বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা আটকে রেখেছে। এ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসায় জনগণের ওপর সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে আর এর মাশুল দিচ্ছে জনগণ। তিনি আরো বলেন, আমরা জনগণের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নেমেছি। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আমরা এ লড়াইয়ে বিজয়ী হয়ে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো। অবৈধ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করবো। ড. মঈন খান বলেন, সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রচন্ড ভয় পায় বলেই তাকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে দন্ড দিয়েছে। অবৈধ এ সরকারের বিদায়ের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের যুদ্ধটা পুলিশের বিরুদ্ধে না। পুলিশ বাহিনীকে বুঝতে হবে তারা জনগণের টাকায় চলে তাদের সেবা করার জন্যে। পুলিশ বাহিনী প্রধানমন্ত্রীর বাসার চাকর-বাকর না; যে যা বলবে তাই শুনতে হবে। ভয় পাবেন না, সরকারের কোনো অন্যায় আদেশ পালন করবেন না।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক শামসুজ্জামান দুদু বলেন, অচিরেই আমরা ক্ষমতায় যাচ্ছি। খুলনা থেকে শপথ, শেখ হাসিনার অধীনে আর কোনো নির্বাচন করতে দেব না। আওয়ামী লীগের লোকেরা বলেছিল পদ্মার এপারে কোনো সমাবেশ করতে দেবে না। তারা একটু এসে দেখুক, লজ্জা পাবে। এখানে জনসমুদ্র হয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, আমাদের খুলনায় গণসমাবেশে জনসমুদ্র আর এই বিশাল আয়োজন দেখে বিস্মিত তারেক রহমান। আওয়ামী লীগ ভেবেছিল তাদের বাধায় আমাদের কেউ আসবে না। তবে এখানে জমায়েত জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। তাদের দেখিয়ে দিয়েছি, আমাদের দুর্বল ভেবো না। রেলস্টেশনে বাধা দিয়েছিল, যশোরের নেতা-কর্মীরা আমাদের শক্তি দেখিয়ে দিয়েছে। অমিত আরও বলেন, এই খুলনায় আজ লাখো কণ্ঠে বাঘের গর্জন শুরু হলো। ডিসেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগের পতন আমরা ঘটাব। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনব।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এস এম শফিকুল আলম মনা। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, আবদুল আওয়াল মিন্টু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মমিউর রহমান, সৈয়দ মেহেদী হাসান রুমী, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যরিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ছাত্রদলের সাবেক নেতা কামরুজ্জামান রতন, সাবেক এমপি অধ্যক্ষ সোহরাবউদ্দিন, রকিবুল ইসলাম বকুল, মঞ্জুরুল ইসলাম, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্তু কুমার কুন্ডু, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা অমলেন্দু দাস অপু, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি এস এম জিলানি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, জাসাসের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, যশোর জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, যুবদল নেতা শফিকুল ইসলাম মিল্টন, বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহবায়ক ইঞ্জি: আকরাম হোমেন তালিম, সাতক্ষীরা জেলা আহবায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলী, নড়াইল জেলা আহবায়ক বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, মাগুরা জেলা আহবায়ক আমীর আহমেদ, ঝিনাইদহ জেলা আহবায়ক অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ, মেহেরপুর জেলা আহবায়ক সাবেক এমপি মাসুদ অরুন, চুয়াডাঙ্গার সদস্য সচিব শরীফুজ্জামান, খুলনা মহানগর বিএনপি নেতা তারিকুল ইসলাম জহীর, মাহবুব হাসান পিয়ারু, শামীম কবীর, শেখ তৈয়াবুর রহমান, একরামুল হক হেলাল, মজিবর রহমান, মহিলা দলের অ্যাডভোকেট তসলিমা খাতুন ছন্দা, আজিজা খানম এলিজা, উজ্জ্বল কুমার সাহা, মোল্লা কবীর হোসেন, গোলাম মোস্তফা তুহিন, ইসতিয়াক আহমেদ ইস্তি প্রমুখ।
এদিকে খুলনা রেলস্টেশনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় বেশ কিছু জানালার কাঁচ। এছাড়া বৈকালী এলাকায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আগুন দেওয়া হয় বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে।
জনতার ঢলে স্তব্ধ খুলনা : কথা ছিল বেলা ২টায় বিএনপির সমাবেশ শুরু হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগেই সমাবেশ শুরু হয়। পৌনে দুই ঘণ্টা আগে সোয়া ১২টায় সমাবেশ শুরু হয় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশ। স্মরণকালের বৃহৎ এ সমাবেশে কয়েক লক্ষ মানুষ যোগ দেন। লক্ষ জনতার গগণ বিদারী স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে খুলনা শহরের প্রাণ কেন্দ্র। আশপাশের সড়ক ও মহল্লায় জনতার ঢল নামে। ফলে কয়েক ঘণ্টার জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় খুলনা শহর। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করার প্রত্যয় নিয়ে খুলনার গণসমাবেশ নতুন বার্তা দিল তরুণ সমাজের কাছে। এমনটি বললেন, খুলনার নেতৃবৃন্দ। কেননা শনিবারের খুলনার গণসমাবেশে অপেক্ষাকৃত তরুণদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। যারা আগামী দিনে জাতিকে নেতৃত্ব দেবে। পথে পথে শাসকদলের নানামুখী বাধা, হামলা ও হুমকি উপেক্ষ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের ন্যায় খুলনা বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ পায়ে হেঁটে সমাবেশে যোগ দিয়ে সমসাময়িক সময়ে এক বিরল ঘটনার জন্ম দিল। খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক এস এম শফিকুল আলম মনা বলেছেন, মানুষের এই উৎসাহ এবং ত্যাগ এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বেগবান করবে। এদিকে গত শুক্রবার সন্ধ্যা রাত থেকে বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়ে মাঠ দখলে নেন। রাতে সমাবেশ স্থলে ও তার আশপাশে নির্ঘুম রাত কাটান নেতা-কর্মীরা। অনেকই রাস্তায় ত্রিপল বিছিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
শনিবার সকাল সাড়ে ৬ টায় সমাবেশ স্থলে যেয়ে দেখা যায় অনেকই রাস্তায় ঘুমিয়ে রয়েছেন। আবার অনেকেই আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দল বেঁধে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটার পর একটা মিছিল সমাবেশ স্থলে আছড়ে পড়ে। খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ব্যানার ফেস্টুন ও প্লাকার্ড নিয়ে মিছিলে অংশ নেন। মিছিলগুলোতে জাতীয় পতাকার আধিক্য ছিল বেশি। আবার অনেক অঙ্গ সংগঠন মাথায় রঙ্গিন ক্যাপ এবং টি শার্ট পরে আসে। পুরো সমাবেশটি রঙিন হয়ে ওঠে। গত শুক্রবার থেকে খুলনাকে দেশের সব জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয় কৃত্রিমভাবে সড়ক ও নৌ পথের যাত্রী পরিবহনসহ বিভিন্ন পরিবহন বন্ধ করে। মানুষ পিঁপড়ার সারির মতো পায়ে হেঁটে সমাবেশে যোগ দেবে তা ছিল কল্পনার বাইরে। শুধু পরিবহন ও লঞ্চ বন্ধ নয়, এলাকা ভিত্তিক শাসকদলের ক্যাডারদের বাধা ও হামলার ভয় ছিল। যা কোনো কিছুতেই আটকাতে পারেনি খুলনার গণসমাবেশ রুখতে। বরং নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত করে তুলল খুলনা শহরকে।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, বাস ও লঞ্চের পর শুক্রবার (২১ অক্টোবর) রাতে খুলনা শহরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী খেয়াঘাটগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও বাধা পেরিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হন বিভাগের বিভিন্ন জেলার বিএনপির নেতা-কর্মীরা। রাত থেকে বেশিরভাগ নেতা-কর্মী ট্রেনে ও ট্রলারে আসেন। গণসমাবেশে যোগ দিতে শুক্রবার রাতেই খুলনায় পৌঁছান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। দুপুর ১২টার মধ্যে লোকারণ্য হয়ে ওঠে সমাবেশস্থল খুলনা নগরের ডাকবাংলো ও ফেরিঘাট মোড়ের মাঝামাঝি সোনালী ব্যাংক চত্বর। শহরের কেডিএ এভিনিউ, সাত রাস্তা, রয়েল মোড়, ময়লাপোতা মোড়, শান্তিধাম এলাকা, বেনিবাবু রোড, স্যার ইকবাল রোড, আহসান আহমেদ রোড, শিববাড়ি মোড়, নিউ মার্কেট, জোড়া গেট হয়ে নুর নগর এলাকাও লোকারণ্য হয়ে ওঠে। যে যেভাবে পারেন সেভাবে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। সমাবেশের মূলস্থল থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার জুড়ে জনতার ঢল নামে। মূল মঞ্চ নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বর থাকলেও খুলনা-যশোর মহাসড়কের সংযোগ সড়কগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরের পর থেকে খুলনা শহরের প্রাণ কেন্দ্রসহ আশপাশে জনতার ঢলে স্তব্ধ হয়ে যায়।
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘পথে পথে নেতা-কর্মীদের আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। আটক করা হয়েছে। ট্রেনে যারা সমাবেশে এসেছেন তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। একটি সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার ও পুলিশের এমন তান্ডব খুলনাবাসী কখনও দেখেনি। হামলা করে, ধর-পাকড় অভিযান চালিয়ে সমাবেশ ঠেকানো যায়নি। শত বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশের একদিন আগেই নেতা-কর্মীরা খুলনায় প্রবেশ করে। এদিকে নির্ধারিত সময়ের আগে দুপুর সোয়া ১২টায় কোরআন তেলাওয়াত ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে খুলনা নগরের সোনালী ব্যাংক চত্বরে আয়োজিত সমাবেশ শুরু হয়। কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা নেছার ইমাম। মঞ্চে বক্তৃতা করেন স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন সরকার, জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে ৫জন নেতাকে হত্যা, হামলা এবং মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে গণসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা দেয় বিএনপি। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহের পর শনিবার খুলনায় তৃতীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।