জনগণের জোয়ার যেখানে, সেখানে কোনো শক্তি বাধা দিতে পারে না : আমির খসরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৫৩ পিএম, ১১ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০২:২১ এএম, ১৬ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে পলোগ্রাউন্ডের মাঠের দিকে। এই সমাবেশ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবেন। আমাদের নেতাকর্মীরা এই সমাবেশকে সফল করার জন্য প্রতিটি এলাকায়, প্রতিটি অঞ্চলে কাজ করেছেন। আমাদের দল যে চট্টগ্রামে কত শক্তিশালী, সেটা তারা প্রমাণ করেছে।
আজ মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে আগামীকাল বুধবার বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসমাবেশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আমির খসরু বলেন, শান্তিপূর্ণ, আনন্দঘন, উৎসবমুখর পরিবেশে আগামীকালের জনসভা বিপুল জনসমাগমের মাধ্যমে শেষ হবে ইনশাল্লাহ। আমরা কোনো ধরনের ফাঁদে পা দেব না। অনেকে চেষ্টা করবে এদিক-সেদিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য, আমাদের শক্তিক্ষয় করার জন্য অনেককিছু করবে, অনেককিছু বলবে, অনেক গুজব ছড়াবে। এতে কর্ণপাত করবেন না, ধৈর্য্য ধরবেন। পূর্ণমাত্রার ধৈর্য্য ধরতে হবে। ধৈর্য্যরে যাতে কোনো অভাব না হয়। আমরা আমাদের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাব। কে কি করছে, কে কি বলছে, কে কোথায় উসকানি দিচ্ছে এগুলো নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবেন না। ওরা চাচ্ছে আমাদের সেদিকে ডাইভার্ট করার জন্য। আমাদের সেদিকে ডাইভার্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই। জনগণের জোয়ার যেখানে নামে সেখানে কোনো শক্তি বাধা দিতে পারে না।
১২ অক্টোবর মহাসমাবেশ বাংলাদেশের আন্দোলনের মাইলফলক হয়ে থাকবে জানিয়ে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা উজ্জীবীত, যার যার এলাকায় সবাই মাঠে আছে, এটাকে সফল করার জন্য। জনগণের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে আমরা চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় যে মাঠ, সেটা হচ্ছে পলোগ্রাউন্ড মাঠ। জনগণের মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা, আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি, মানুষের মধ্যে যে আশা জেগেছে, যে ক্ষোভ জেগেছে, সেটাকে পূরণ করার জন্য, চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় মাঠ পলোগ্রাউন্ড আমরা বেছে নিয়েছি।
এর আগে আমরা পলোগ্রাউন্ডে সভা করেছি বেগম খালেদা জিয়া চট্টগ্রামে এসেছিলেন, সেটা বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় জনসভা হয়েছিল। ২০-২৫ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছিল। আজ আমাদের নেত্রী আসবে না, কিন্তু মানুষ সংগ্রামে নেমেছে, সেটার প্রতিফলন পলোগ্রাউন্ডের মাঠে দেখতে পাবেন।
তিনি বলেন, আমরা যে সভা-সমাবেশ করছি, দেশে-বিদেশে প্রমাণ হয়েছে আমরা খুবই সুন্দর-শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করছি। আমাদের নেতৃত্ব থেকে পরিস্কারভাবে বলা আছে, প্রত্যেকটি সভা-মিছিল, কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে। এর একটাই কারণ, জনগণের ওপর আস্থা রেখে বিএনপি রাজনীতি করে। জনগণ আমাদের সাথে আছে। যেখানে লক্ষ জনতা রাস্তায় নামে ওরা লাঠির চেয়ে বেশি শক্তিশালী, একেজন বাংলাদেশের নাগরিক লাঠির চেয়ে শক্তিশালী, চাইনিজ রাইফেলের চেয়েও শক্তিশালী। তারা যে অস্ত্রশস্ত্রের কথা বলে তার চেয়েও শক্তিশালী। আমাদের অস্ত্রশস্ত্রের দরকার নেই, লাঠিরও দরকার নেই। লাঠি নিয়ে কারা নামে, যারা নিজেরা দুর্বল তারা লাঠি নিয়ে নামে। প্রতিরোধ করতে কারা বলে, যারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেরা কিছু করতে পারে না তারা বলে।
আমির খসরু বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা জ্বলেপুড়ে খাঁটি সোনা হয়েছে। তারা সেটা বারবার প্রমাণ করছে। কত ধরনের চাপ, বাধা-বিপত্তি আছে, কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে তারা আগামীকালের সভা সফল করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগকে সরকারি দল আমি বলি না। রেজিমের অংশ হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা বুঝতে পেরেছে জনগণ জেগে উঠেছে, জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। জনগণ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা আর রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করতে পারছে না। এখন তাদের মধ্যে বিএনপির সমাবেশগুলোকে বাধাগ্রস্থ করার চিন্তা ভাবনা আছে।
দেশের মানুষ অস্বস্থিকর পরিবেশে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দ্র্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতি, তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান নিম্নপর্যায়ে চলে গেছে। ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে। দেশের একটি বড় জনগোষ্ঠী দু’বেলা খেতে পারছে না। টিসিবির গাড়ি থেকে পণ্য নেয়ার জন্য আমরা যে লাইন দেখছি, এটা অভাবনীয়।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীমের পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, চেয়ারর্পানের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা.শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনর রশীদ, সহ গ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমেদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান ইয়াহিয়া, কৃষকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হাসান পলাশ প্রমূখ।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বাংলাদেশে আইন আছে, সংবিধান আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কোনো দলের দায়িত্ব নয় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। কোনো দল যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নিতে চায়, আমি আশা করব, যাদের দায়িত্ব হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, তারা যাতে সেই দায়িত্বটা পালন করে। কোনো দলের ওপর যেন তারা সেই দায়িত্ব ন্যস্ত না করে।
খসরু বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। আমরা তো এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। নির্বাচন হতে হবে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। যতক্ষণ পর্যন্ত সেই নির্বাচন কমিশন না আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত অবৈধ সরকার, অবৈধ নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমরা কোনো মন্Íব্য করতে রাজি নই।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার যদি বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়ে দিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশে কি বিচার বিভাগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ? তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, তারা বিচার বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন। এই ধরনের বক্তব্য যারা দেন দুঃখজনক, তাদের সাংবিধানিক দায়িত্বজ্ঞান আছে বলে আমি মনে করি না।
তিনি বলেন, প্রশাসন দিনের শেষে বাংলাদেশের যে সংবিধান আছে, তারা সেটার শপথ করে দায়িত্ব পালন করছে। দিনের শেষে তাদের দায়িত্ব হচ্ছে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করা। গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার সুরক্ষা করা হচ্ছে প্রশাসনের দায়িত্ব। তারা সেই দায়িত্বটা পালন করবে সেটা জাতি আশা করে।