গণতন্ত্র ফেরাতে দলের হাজারো নেতা-কর্মী প্র্রাণ দেবে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৩ পিএম, ১০ অক্টোবর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১২:২২ এএম, ৭ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে দলের 'হাজারো নেতা-কর্মী প্র্রাণ দেবে' বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালযে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ''আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাই, আমরা দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই, আমরা মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে আনতে চাই। এজন্যে আমরা যেমন জান দিয়েছি। আমাদের ইতিমধ্যে সাত জন প্রাণ দিয়েছে। আমরা হাজারো লোক প্রাণ দিবো। গণতন্ত্রকে অবশ্যই আমরা ফিরিয়ে আনবো।"
সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ''আপনাদের এখনো সময়, এখনো সময় আছে- বোধদয় করেন। কয়েকটি মিটিংয়ে আমি বলেছি, সেইফ এক্সিজিট করেন, চলে যান, ক্ষমতা ছাড়েন। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন, সংসদ বিলুপ্ত করেন। নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে করে নতুন পার্লামেন্ট ইলেকশন দেন। তারা নতুন করে সরকার গঠন করবে, দেশে নতুন একটা সরকার ব্যবস্থা চালু হবে। তা না হলে পালাবার পথটাও খুঁজে পাবেন না। এখনই সময় আছে সেটা করেন। তা না হলে পালাবার পথও খুঁজে পাওয়া যাবে না।"
শহীদ জেহাদ স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী গণআন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত নাজির উদ্দিন জেহাদের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা হয়। ১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর পল্টনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছাত্র দল কর্মী জেহাদ।
দিবসটি উপলক্ষে সকালে ততকালীন ডাকসুর ভিপি আমান উল্লাহ আমানের নেতৃত্বে ছাত্র ঐক্যের নেতৃবৃন্দসহ ছাত্র দলের নেতা-কর্মীরা দৈনিক বাংলা মোড়ে জেহাদ স্মৃতি চত্বরে পুস্পমাল্য অর্পন করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ''আমাদের জনগনের উপরে আমাদের আস্থা আছে। আমরা বিশ্বাস করি, এদেশের মানুষ কোনোদিন অন্যায়কে মেনে নেয়নি, কোনোদিন গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে তারা কাউকে জয়ী হতে দেয়নি। গনতন্ত্রের পক্ষে তারা লড়াই করেছে আজ থেকে নয়, দীর্ঘকাল থেকে, শতবর্ষ থেকে। সেই দেশের মানুষ জেগে উঠছে।এখন আর বলতে হয় না যে, জেগে উঠো।"
তিনি বলেন, ''আমি শুধু অনুরোধ করবো আমাদের তরুন সমাজকে, আমাদের যুব সমাজকে আরো এগিয়ে আসুন, আরো সামনে আসুন। শুধুমাত্র নিজের কথা চিন্তা না করে, নিজের ভাগ্যের কথা চিন্তা না করে দেশের কথা চিন্তা করুন, দেশের মানুষের কথা চিন্তা করুন, চিন্তার করে যুক্ত হোন। এই যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, এই যে বাংলাদেশকে মুক্ত করবার যে আন্দোলন শুরু হয়েছে সেই আন্দোলনে সেই সংগ্রামে আপনারা সবাই যুক্ত হোন এবং জনগনকে সংগঠিত করে আমরা অবশ্যই আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব যে আহবান দিয়েছেন যে, 'ফয়সাল হবে রাজপথে', সেই রাজপথেই আমরা তাদেরকে পরাজিত করব।"
তিনি আরোও বলেন, ''আমাদের নেতা আরেকটা শ্লোগান দিয়েছেন-টেক ব্যাক বাংলাদেশ। অর্থাৎ আমরা কোন বাংলাদেশ ফেরত চাই যে, বাংলাদেশ আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছিলাম। যেখানে আমরা সমস্ত মানুষের অধিকারকে রক্ষার জন্যে স্বাধীন করেছিলাম, যেখানে সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ এবং সামাজিক ন্যায় বিচার এটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা একটা রাষ্ট্র তৈরি করেছিলাম, জনগনের কল্যাণের জন্য রাষ্ট্র তৈরি করেছিলাম সেই বাংলাদেশ আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই।"
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ''আমরা একথা বলতে পারি যে, বিএনপি বা এই গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি তারা যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই তারা জনগনের কল্যা্ণের জন্য কাজ করে, জনগনের পক্ষে কাজ করে। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে আজকে জেহাদকে এবং ৯০'র যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে এবং এই গণতন্ত্র ফেরানো আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে স্মরণ করে আর কোনো পেছন দিকে না তাঁকিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই এবং এই ভয়াবহ দানবকে পরাজিত করে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করি-এই হোক আজকে আমাদের শপথ।"
তিনি বলেন, ''এই যে বিদ্যুতের কী অবস্থা দেখেন।এখন প্রতিদিন কমপক্ষে তিন/চার বার বিদ্যুত চলে যায়, ৬ ঘন্টা পর্যন্ত লোডশেডিং থাকে। অথচ কত ধূয়া, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আতশবাজি ফুটিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুতের পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে- আর কোনো অসুবিধা নাই। তার অবস্থা হচ্ছে এটা(লোডশেডিং)। কারণ কী? কারণ হচ্ছে তাদের(সরকার) চুরি, দুর্নীতি। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট করে তারা সমানে চুরি করে নিয়ে গেছে। ক্যাপাসিটি চার্জ ২৮ হাজার কোটি টাকা একবছরে দিতে হয়েছে এবং দিতেই হচ্ছে।"
মির্জা ফখরুল বলেন, ''আজকে পোষাক শিল্পের অবস্থা যারা এই শিল্পের সাথে জড়িত তারা জানেন, গার্মেন্টসের অবস্থা খারাপ হয়ে আসছে। কারণ পৃথিবীতে চাহিদা কমে আসছে। একদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে, গ্যাসের দাম বাড়ছে। অন্যদিকে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। ফলে গার্মেন্টেস ব্যবসা যারা করেন তাদের টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে গেছে। শ্রমিকদের অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা এই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে। আমি তো বাজারে খুব কম যাই্, সময় পাই না। আমার স্ত্রী যান। প্রতিদিন আমার স্ত্রী আমার কাছে এই অভিযোগগুলো তুলে ধরেন যে, আর যাওয়া যাবে না, যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে সেগুলোতে ধর্য্য ধরা যাচ্ছে না-এই হচ্ছে মানুষের অবস্থা।"
তিনি বলেন, ''আমরা এখান থেকে পরিত্রাণ চাই। ইতিমধ্যে আমরা বিএনপি জনগনের মধ্যে যাওয়া শুরু করেছি। কিছুদিন আগেও আমাদের যারা নিন্দুক তারা বলতেন, আরে বিএনপি নাই, বিএনপির কোনো চিহ্নিই নাই, রাস্তায় বিএনপি নাই, মুরদ নাই, হাটুভাঙা- এসব অনেক কথা বলেছে তাই না। এখন কী বলছে? বাবা তোমরা ধমক দিও না। এই যে, আমান উল্লাহ আমান সাহেব যে একটা ধমক দিয়েছে-ওদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখন টেলিভিশন খুলে দেখি ওদের যত লোক জন আছে খালি ওটাই নিয়ে লেগে পড়েছে। আরে ভাই কোনো কারণ নাই।"
সরকারের দমনপীড়নসহ গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে কালাকানুনের নানা ঘটনাও ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
জেহাদ স্মৃতি পরিষদের সভাপতি নব্বই সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও খায়রুল কবির খোকনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় সাবেক ছাত্র নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম, সাইফুদ্দিন মনি, খোন্দকার লুতফর রহমান, আসাদুর রহমান খান, কামরুজ্জামান রতন, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরাফত আলী সপু, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, উলামা দলের শাহ নেছারুল হক, জেহাদের ভাই কে এম শরীফ উদ্দিন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।