আগামী নির্বাচনে সরকার ‘ফাঁকা মাঠে’ গোল দিতে চায় সরকার : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৩৪ পিএম, ৭ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:১৫ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
আগামী নির্বাচনে সরকার ‘ফাঁকা মাঠে’ গোল দিতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের জবাবে আজ শুক্রবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, আমরা তো নির্বাচন করতেই চাই কিন্তু সেই নির্বাচনটা তো হতে হবে নির্বাচনের মতো। ওটা তো তামাশা হওয়ার জন্য তো হবে না। যারা ভোটের আগের রাত্রে ভোট করে ফেলে, ভোট নিয়ে চলে গেলো, ১৫৪ জনকে নির্বাচিত করে দিলো, নির্বাচন হয়ে গেলো, প্রার্থীরা কেউ ক্যাম্পেইনে নামতে পারবে না, তাদেরকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হবে। দেশে একটা ভয়-ভীতি ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হবে-এটা তো হতে পারে না।”
‘‘উনারা(শেখ হাসিনা) তো চানই বিরোধী দল নির্বাচনে না আসুক। ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার অভ্যাস হয়ে গেছে তো উনাদের। ওয়াক ওভার। আমরা বলেছি যে, এই ধরনের ইলেকশন জনগণ মানবে না।”
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান শেষে দেশে ফিরে গতকাল গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘একেবারে সবাই লোকমা তুলে খাওয়ায় দিতে হবে, জিতিয়ে দিতে হবে। তবেই আস-এটা তো হতে পারে না।”
‘‘মিলিটারি ডিকটেটরা এভাবেই করেছে। তারা তো জনগণের কাছে যেতেই ভয় পায়। জনগণের সামনে ভোট চাইতে গিয়েও ভয় পায়। এটাই তো বাস্তবতা।”
প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দল তার মতামত বলবেন, শেখ হাসিনাও তার বক্তব্য বলবেন। এভাবেই তিনি টিকে আছেন জনগনকে প্রতারণা করে, মিথ্যা কথা বলে, ভয় দেখিয়ে- সব কিছু করে টিকে আছেন।”
‘‘নির্বাচনে আমাদের ভয় পাওয়ার প্রশ্ন নেই্। বরং তারা ভীত হয়ে আছেন। তারা সন্ত্রস্ত্র আছেন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না-এটাই হচ্ছে মূল কথাটা। যেকারণে তারা আজকে বিভিন্ন কলাকৌশল করে, বিভিন্ন রকম প্রতারনা করে, জনগণকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করে দিয়েছে ভোট দেওয়া থেকে। মানুষই তো ভোট দিতে যায় না এখন। ভোট কি? পিপলস উইল ভোট। ওরাই(জনগণ) তো যেতে পারে ভোট কেন্দ্রে। সেই জিনিসটা বড় কথা।”
তিনি বলেন, ‘‘এরা(আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই নির্বাচন একটা প্রহসন একটা খেলা। আপনারা দেখবেন, অধ্যাপক আলী রিয়াজের যে হাইব্রিড ডেমোক্রেসি বইটা আছে সেটার মধ্যে পরিস্কার বলা আছে, এই সমস্ত দেশগুলো কর্তৃত্ববাদী যেখানে শেকড় গেড়ে বসে সেখানে নির্বাচনটা তাদের অন্যতম অস্ত্র।”
‘‘সেই অস্ত্রটা কী? তারা দেখায় যে, আমরা একটা নির্বাচন করেছি। উই আর ইলেক্টেড গভমেন্ট। বাট দেয়ার ইজ নো ইলেকশন আসলে কোনো ইলেকশন হবে না। পৃথিবীর অনেকগুলো দেশ আছে এভাবে তারা নির্বাচন করে, এভাবে তারা টিকে থাকার চেষ্টা করে।’’
‘সংলাপ: বিরোধীদের সঙ্গে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুযোগ নেই’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা সংলাপ করছি তাদের সাথে যারা এই সরকারকে মানে না, যারা মনে করে যে, এই সরকার দেশের গণতন্ত্রকে ধবংস করে দিয়েছে-তাদের সঙ্গে আমরা সংলাপ করছি।”
‘‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের কোনো সুযোগ নাই, প্রশ্নই উঠে না। দে মাস্ট লিভ, তাদেরকে চলে যেতে হবে। আমরা বার বার করে বলছি যে, চলে গিয়ে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা দিতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাজ করবে।”
নির্বাচন নিয়ে সরকার আলোচনায় ডাকলে যাবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি স্পষ্টভাষায় বলেন, ‘‘প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত কোনো আলোচনার সুযোগ নেই, কোনো আলোচনা হবে না।”
যুগপৎ আন্দোলন কবে নাগাদ শুরু হতে পারে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আমরা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ করছি। সময়টা এখনই বলা যাবে না।সেই সংলাপ যখনই শেষ হবে তখন বলতে পারবো।”
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সকাল সাড়ে ১১টায় এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী ও আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল উপস্থিত ছিলেন।