ময়মনসিংহে বিশিষ্টজনদের সাথে বিএনপির মিডিয়া সেলের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৪৭ পিএম, ১ অক্টোবর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৫১ এএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
বিপর্যস্থ রাষ্ট্র সংস্কার ও জনগনের ক্ষমতায়নের জন্য আগামীর রাষ্ট্র পরিচালনায় জাতীয় সরকার ও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ অপরিহার্য বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন ময়মনসিংহ বিভাগের বিশিষ্টজনরা। তাদের মতে, জনগনের ক্ষমতায়, নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রের বিশিষ্টজনদের ক্ষমতার অংশিদারিত্বের সুযোগ সৃষ্টি বর্তমান বিপর্যস্থ রাষ্ট্র সংস্কারে অপরিহার্য। এ অবস্থায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন পরবর্তী জাতীয় সরকার গঠন ও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা সময়োপযোগী। এর মধ্য দিয়ে আগামীর বাংলাদেশ সঠিক পথে ফিরে আসবে বলেও মত দেন বিশিষ্টজনরা।
আজ শনিবার (১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল আড়াইটা পর্যন্ত ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে বিএনপির মিডিয়া সেলের আয়োজনে জবাবদিহিমূলক রাষ্ট গঠনে অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরবর্তীতে জাতীয় সরকার এবং দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ অপরিহার্য র্শীষক অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তারা এসব কথা বলেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহবায়ক সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন। এ সময় মিডিয়া সেলের সদস্য সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।
সভায় সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তার, প্রফেসর ড. আবুল হাসেম, গনফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. রায়হান উদ্দিন, জেলা নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক অ্যাড. নজরুল ইসলাম খান, সাবেক ভিসি ড. মোশাররফ হোসেন মিঞা, প্রফেসর ড. আবুল হাসেম, প্রফেসর ড. কেনেডী, গনঅধিকার পরিষদ জেলা শাখার আহবায়ক রাহাত জাহান, প্রফেসর এম.এ বারী, আইনজীবী নেতা অ্যাড. নূরুল হক, ডা: সানজিদা জেসমিন প্রিয়াঙ্কা, ডা: সায়েম মনোয়ার, প্রবীণ সাংবাদিক বাবু সুপ্রিয় ধর বাচ্চু, সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম, বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী চৌধুরী, অধ্যাপক জিয়াউদ্দিন শাকির, অ্যাড. গোলাম নবীসহ প্রায় ৩০ জন আলোচক উল্লেখিত বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
এ সময় উপস্থিত বিশিষ্টজনরা বিদ্যমান রাষ্ট ব্যবস্থার যুগোপযোগী সংস্কারে জাতীয় সরকার গঠন ও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনে একমত পোষন করে নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন।
সভায় নাগরিক ঐক্যের জেলা শাখার আহবায়ক অ্যাড. নজরুল ইসলাম বলেন, রাজনীতির শুরুর জীবন থেকে জাতীয় সরকার ও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের স্বপ্ন লালন করে আসছিলাম, আজ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেই প্রস্তাব জাতীর সামনে তুলে ধরেছে। এজন্য আমি আমার দলের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কারণ দ্বিকক্ষের উচ্চ কক্ষ সকল শ্রেনী-পেশার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ হতে পারে। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকেও উচ্চ কক্ষে রাখার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। সেই সাথে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন অপরিহার্য বলেও আমি মনে করছি।
গণফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. রায়হান উদ্দিন বলেন, জাতীয় সরকার গঠন ও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠন সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। সরকার পতনের পর আজকের বিষয় বাস্তবায়ন হলে রাষ্ট্রের সকল মানুষ উপকৃত হবে।
অধ্যাপক জিয়া উদ্দিন শাকির বলেন, জাতীয় সরকার গঠন ও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সময়ের দাবি। আশা করছি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বেই তা বাস্তবায়ন হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী চৌধুরী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের গবেষনালব্ধ ও সুচিন্তিত প্রস্তাব অনুযায়ী আগামীর রাষ্ট্রগঠনের কোন বিকল্প নেই। এর মাধ্যমেই সুষ্ঠ গনতন্ত্রের বিকাশ ঘটবে বলে আশা করছি।
ডা: সানজিদা জেসমিন প্রিয়াঙ্কা বলেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদ রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারে জাতীয় সরকার গঠন ও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ অপরিহার্য। কারণ দেশের আইন শাখা, বিচার বিভাগ কোন কিছুই স্বাধীন নয়।
অ্যাড. গোলাম নবী বলেন, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ভ্রদ্র মানুষের বেঁচে থাকার সুযোগ খুব কম। এ অবস্থায় রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে জাতীয় সরকার গঠন ও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসন সময়ের দাবি।
এ সময় সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তার বলেন, পৃথিবীর বহু উন্নত দেশে দ্বিকক্ষ আইন সভা রয়েছে। নির্বাহী ক্ষমতার বলয় ভাংতে দ্বিকক্ষ প্রতিষ্ঠায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ বর্তমান দানব সরকার লুটপাট করে দেশে যা খুশি তাই করছে। এই অবস্থায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন ও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
সভায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, নির্দলীয় সরকারে অধীনেই নির্বাচন হবে, বিএনপিকে ছাড়া কোন নির্বাচন হবে না। এটা দলের অপরিবর্তনীয় সিদ্ধান্ত। এ অবস্থায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ভুঙ্গুর রাষ্ট্র মেরামতে জাতীয় সরকার ও দ্বিকক্ষ সংসদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
এর আগে সভার শুরুতেই বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিনা ভোটের সরকার দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে গুম-খুন আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকে রয়েছে। সরকার রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থাসহ সকল সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে ফ্যাসিবাদ শাসন ব্যবস্থা চলমান রেখেছে। আ'লীগ সরকার দেশকে লুটপাট ও দূর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। গত এক যুগে অবৈধভাবে বিদেশে ১০ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, সাম্য, মানবাধিকার আর সামাজিক সুবিচার আজ ভূলুন্ঠিত। দেশের মানুষ গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার হারিয়ে নিজ দেশেই যেন পরাধীন। তাই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে প্রকাশ্যে অন্য দেশের করুনা ভিক্ষা করে। শুধু তাই নয় সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গণতন্ত্রকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে ও জণগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে জনপ্রতিনিধিত্বশীল জাতীয় ঐক্য অতীব জরুরি বলে মনে করে বিএনপি। এই জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমেই পার্লামেন্টারি কাঠামোতে পরিবর্তন এনে তারেক রহমান ঘোষিত দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন করতে চায় বিএনপি। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার রাজনীতি সচেতন মেধাবী মানুষগুলোর চিন্তা ও কর্ম যাতে রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে কাজে লাগে তা নিশ্চিত করতে বিএনপি 'দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট' প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সভায় সাংবিধানিক সংস্কার, প্রশাসনিক সংস্কারের লক্ষ্যে সংস্কার কমিশন গঠন, ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে জুডিশিয়াল কমিশন গঠন, 'নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার' ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে প্রবর্তন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার লক্ষ্যে মিডিয়া কমিশন গঠনসহ ১৮টি প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করা হয়।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম ও ওয়ারেস আলী মামুন, মিডিয়া সেলের কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর ড. মোর্শেদ হোসেন খান, সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল, মহানগর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ডা: মাহাবুবুর রহমান লিটন, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন বাবলু, উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম, যুগ্ম আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদারসহ জামলপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির র্শীষ নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্টজনরা।