আমাদের দায়িত্ব একটাই দেশের সকল ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১৫ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৪২ পিএম, ১১ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
অধিকার ফিরে পেতে মানুষ জেগে উঠেছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব একটাই দেশের সকল ছাত্র সমাজকে, তরুণ-যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ করে একটা দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। এটাই হবে প্রকৃত জবাব। জবাব একটাই এ সরকারকে পতন ঘটাতে হবে, এদের সরাতে হবে। ইনশাল্লাহ জনগণের বিজয় হবেই। সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখনো সময় আছে-ওই সমস্ত উল্টো-পাল্টা কথা না বলে আপনারা পদত্যাগ করুন শান্তিতে। সেইভ এক্সজিট নেন এবং একটা নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন, সংসদ বিলুপ্ত করেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকালে নয়াপল্টনে এক ছাত্র সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপরে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়। এই সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। তাদের অনেকের হাতে জাতীয় পতাকা দেখা গেলেও কোনো লাঠি তাদের হাতে দেখা যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের আহত নেতারাও মঞ্চে এসে নেতা-কর্মীদের সালাম দিয়ে চলে যান।
বিএনপি হাটুভাঙা নয়, আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা দেখে আওয়ামী লীগেরই কোমড় ভেঙে গেছে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, কালকে ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) সাহেব বলেছেন যে, বিএনপির নাকি হাটুভাঙ্গা। আমাদের যে হাটুভাঙেনি-এটা তো টের পাচ্ছেন। লাঠিও আমরা নেইনি। তো আপনাদের ইতিমধ্যে কোমড় ভেঙে গেছে। আপনারা শুধু লাঠি নয়, আপনারা ইতিমধ্যে রাম দা-তলোয়ার এবং পুলিশের বন্দুকের ওপরে আপনারা এখন হাঁটছেন। আপনারা জনগণের সঙ্গে নাই, সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। সেজন্য আজকে আপনাদেরকে সেই রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকতে হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ বরাবরই একটা সন্ত্রাসী দল। তাদের জন্ম হয়েছে সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে। সেজন্য একদিকে তারা বলে যে, আমার সোনার ছেলেদের হাতে আমি কলম তুলে দিয়েছি। আর অন্যদিকে তারা সোনার ছেলেদের হাতে বন্দুক-পিস্তল-লাঠি-সোটা সব কিছু দিয়ে দিয়েছে। আপনারা দেখেছেন গত ২২ আগস্ট থেকে জনগণের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছি সেই আন্দোলনে যখন জেগে উঠছে মানুষ আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আহবানে, তখন তারা একে দমন করবার জন্য সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। তারা ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে, তারা খুন করে, তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে ২৫ হাজারের ওপরে নেতা-কর্মীদের আসামি বানিয়েছে, ৩ হাজারের মতো তারা আমাদের ছেলেদের আহত করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে। কেনো? তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশে, শান্তিপূর্ণ মিছিলে, ছাত্রদলের একেবারে একটা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তারা লাঠি, বন্দুক এবং টিয়ার গ্যাস নিয়ে আক্রমণ শুরু করেছে। এই ১৫ বছর ধরে তোমরা অত্যাচার চালাচ্ছো, গুম করছো, মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করছো। কিন্তু আজকে জনগণের যে উত্তাল তরঙ্গ শুরু হয়েছে। আমি ছাত্র সমাজকে বলবো, এদেশে যত পরিবর্তন হয়েছে, ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এবারো যে পরিবর্তন হবে তা আমার ছাত্রদলের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে হবে, দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।
সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা নয়, ঢাবিতে ইতিমধ্যে তারা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। ইডেন কলেজে নিজেরা মারামারি ও চুলাচুলি করে একটা ভয়ঙ্কর ন্যক্কারজনক কান্ড ঘটিয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা নিজেরাই তাদের কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে গিয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোন বিশ্ববিদ্যালয় বাকি? সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটা নৈরাজ্যে পরিণত করেছে। বিএনপির আন্দোলনকে দমন করার জন্য সরকার সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। লাঠি নিয়ে মিছিল করা যাবে না- ওবায়দুল কাদের ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, লাঠি নিয়ে মিছিল করা যাবে না। অন্যদিকে লাঠি দিয়ে পেটাবেন। এটা তো ভালো কথা হলো না। আমরা লাঠি মিছিল করি না। এটা আপনারা (আওয়ামী লীগ) করে। ১/১১’র সময় সেটা আপনারা দেখিয়েছেন। আর আমরা শান্তিপ্রিয়, শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল ও মিটিং করতে চাই। আমরা লাঠি মিছিল করবো না, শান্তিপূর্ণ মিছিল করবো। কিন্তু আমরা প্রতিবাদ করবো। তবে বাধা যদি প্রবলভাবে আসে, সেটা কিভাবে মোকাবিলা করতে হয় তা বিএনপি এবং দেশের জনগণ ভালো করেই জানে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা লাঠি নিয়ে কোনো মিটিংয়ে যাই না, যেতেও চাই না। কিন্তু আপনারা ঘোষণা দেবেন লাঠি নিয়ে মিছিল করা যাবে না। অন্যদিকে আপনারা লাঠি দিয়ে পেটাবেন এটা ভালো কথা হলো না, এটা সঠিক কথা হলো না। আমরা লাঠি খেলা করি না-ওটা আপনারা খেলেন। আপনারা দেখিয়েছেন লাঠিপেটা করে কিভাবে মানুষ হত্যা করতে হয় ১/১১ সময়ে। ১/১১ পূর্ববর্তীতে যে নরককান্ড ঘটিয়েছেন, যে নারকীয় কান্ড ঘটিয়েছেন তা কখনোই দেশের মানুষ ভুলবে না।
তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল-মিটিং করতে চাই। কিন্তু সেইদিন ২৭ তারিখে তেজগাঁওয়ে আমাদের মিছিলে হামলা করেছেন আপনারা-এটা আপনাদের মনে রাখতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, মুন্সিগঞ্জের যুবদল নেতা শাওনের ইটের আঘাতে নয় পুলিশের গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে। তিনি আজ নয়াপল্টনে ছাত্র সমাবেশে এ কথা বলেন। রিজভী বলেন, পুলিশের এসপি মিথ্যা বলে যুবদল নেতা হত্যার প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে চাইছেন। তিনি বলেন, পোস্টমর্টেম রিপোর্টে পরিষ্কার উল্লেখ আছে বন্দুকের গুলিতেই তার মৃত্যু হয়েছে। বিদায়ী আইজিপির নিরাপত্তায় গান ম্যান নিয়োগের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, অতীতের কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে অবসরের পর কোনো নিরাপত্তা দেয়া হয়নি। আপনি কি এমন অপকর্ম করেছেন যে, আপনাকে অবসরের পরও নিরাপত্তা দিতে হবে। কারণ আপনার আমলে অনেক গুম হয়েছে, বহু মায়ের বুক খালি হয়েছে, বহু স্ত্রী তার স্বামীকে হারিয়েছে, বহু সন্তান তার পিতাকে হারিয়েছে। তাই আপনার এত ভয়। ছাত্রদল নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরে ভিসির কঠোর সামলোচনা করে তিনি তার অপসারণ দাবি করেন।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, সদস্য ইশরাক হোসেন, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান, রাকিবুল ইসলাম ও আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া প্রমুখ ।