সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে বিএনপি : টুকু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪১ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৪৫ পিএম, ৮ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষণা দিয়েছেন যদি আগামীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় আর তাতে বিএনপি যদি ভোটে বিজয় লাভ করে তাহলে উনি একা সরকার গঠন করবেন না। বাংলাদেশের সবাইকে নিয়ে একটা জাতীয় সরকার গঠন করে আপনাদের সমস্যা সমাধান করবেন।
আজ সোমবার বিকালে ধানমন্ডির হাজারীবাগে এক সমাবেশে তিনি এরকম প্রশ্ন তোলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ধানমন্ডি জোন-৪ এর উদ্যোগে বিকালে জ্বালানি তেল, দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি, ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা ও নেতা-কর্মী হত্যার প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়। ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ করে সমাবেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে আসার পথে বিভিন্ন মোড়ে আওয়ামী লীগের কর্মীদের সাথে বিএনপির সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। হামলা বাধা নিষেজ্ঞা উপেক্ষা করে হাজারীবাগে সমাবেশ করেছে বিএনপি। এ সময়ে গণমাধ্যমের কয়েকজন কর্মীও আহত হয়। সমাবেশ উপলক্ষে হাজারীবাগে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ওনারা (আওয়ামী লীগ সরকার) জামায়াতের নিবন্ধন ক্যানসেল করেন কিন্তু বেআইনি ঘোষণা করেন না। তা হলে কী আমি বলব, ওনাদের পরকীয়া প্রেম চলছে? আজকে আমি প্রায় শুনি, আওয়ামী লীগের কাছে বুলি হয়ে গেছে, সস্তায় ব্যবসা হয়ে গেছে। কী? বিএনপি-জামায়াত, বিএনপি-জামায়াত। আমি বলছি, এখন সময় এসেছে আওয়ামী-জামায়াত, আওয়ামী-জামায়াত বলার জন্য। বিএনপি ভালো। জামায়াতও উর্দু, আওয়ামীও উর্দু- দুইটার সাথে মিলবে ভালো। আমাদেরকে বলা হয়েছে বিএনপি-জামায়াত। আর যখন আপনারা বললেন, যুদ্ধ বিদ্রোহী..আমিও স্বীকার করি। কিন্তু নিবন্ধন বাতিল করলেন, আপনি তাদেরকে বেআইনি ঘোষণা করলেন না কেনো। তার অর্থ আওয়ামী লীগ জামায়াতের ফাঁদে পড়েছে..। তাই বাতিল করে নাই। আজকে থেকে আওয়ামী-জামায়াত হবে, বিএনপি-জামায়াত আর হবে না।
আওয়ামী লীগের হামলা প্রসঙ্গে টুকু বলেন, আজকে যে ঝড়-ঝাপটা গেছে, অলি-গলি থেকে ওরা (আওয়ামী লীগ) আমাদের ওপরে গুপ্ত হামলা করেছিলো। পুলিশ যদি আমাদের জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় বেতনভুক না হয়ে ওদের দলীয় কর্মী হতো তাহলে আমরা এখানে সভা করতে পারতাম না। এজন্য আমি পুলিশ ভাইদের ধন্যবাদ দেই। আমি তাদেরকে চিনি। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের রাতে রাজারবাগে পুলিশ লাইনে আক্রমণ করেছিলো সেদিন পুলিশরা তা প্রতিহত করেছিলো। সেইদিন সুর্ভাগ্যক্রমে আমি তাদের সাথে ছিলাম। আমি দেখেছি তার পরের দিন কত হাজার হাজার পুলিশের লাশ নিয়ে পাকিস্তানি সেনা কোথায় গায়েব করে দিয়েছিলো। মানুষ জানে না। সেই পুলিশ ভাইয়েরা যে গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছিলো আপনারা তার উত্তরসূরী। আপনারা গণতন্ত্রের জন্য রুখে দাঁড়াবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সময় এসে গেছে আপনারা জনগণের কাতারে ফিরে আসুন, জনগণের সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেন।
বিএনপির কর্মীরা নিজ ইচ্ছায় লাঠি তোলে নাই। সুতরাং টেলিভিশন সাপোর্ট কইরেন না। বলতে হবে কেনো বিএনপির কর্মীরা লাঠি হাতে মিছিল করছে? একবার বলবেন ওখানে, আরেকবার বলবেন এখানে, আগামীদিন বলবেন ওখানে, আবার বলবেন হবে না। একবার পারমিশন দেবেন, আবার বাতিল করবেন, আবার এমন সময় ওনারা পারমিশন দেবেন ওরা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আসবে।
ক্ষমতার জন্য জনসভা বা আন্দোলন নয় বলে জানিয়ে টুকু বলেন, দেশে গণতন্ত্র নাই। আজকে আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জনসভা করছি না, আমরা এই জনসভা করছি, আন্দোলন করছি জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য, জনগণের জন্মগত অধিকারের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে স্বাধীন করেছিলেন। আজকে সেই গণতন্ত্র তোমরা লুট করে নিয়ে গেছো। আমরা কিছু বললেই আমরা নাকি পাকিস্তানি দালাল। আরে আপনারা এখন যেটা করছেন, আমরা তো পাকিস্তান ছেড়েছি, তাদের বিতাড়িত করেছি। আমাদের তো ওসির কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে মিটিং করতে হয় নাই।
তিনি বলেন, আমরা আন্দোলন কেনো করি? মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তদের জীবন চলছে না, তাদের জীবনধারণ কষ্টকর হয়ে গেছে। বাজারে প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। তেলের দাম বেড়েছে, চালের দাম বেড়েছে, ডালের দাম বেড়েছে, নুনের দাম বেড়েছে। কোনটা বাড়ে নাই? তারপরেও রান্না করে খাবো সেই গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে। জ্বালানি তেল নাই, গ্যাসও নাই। নাই বিদ্যুতও। এই করে বাংলাদেশকে একটা শ্মশানে রূপান্তরিত করেছে। এর থেকে উত্তরণে সরকার পতন ছাড়া কোনো পথ নাই উল্লেখ করে স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষণা দিয়েছেন যদি আগামীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় আর তাতে বিএনপি যদি ভোটে বিজয় লাভ করে তাহলে উনি একা সরকার গঠন করবেন না। বাংলাদেশের সবাইকে নিয়ে একটা জাতীয় সরকার গঠন করে আপনাদের সমস্যা সমাধান করবেন।
ইকবাল হাসান টুকু বলেন, আওয়ামী লীগ উন্নয়ন উন্নয়ন করে। এদেশের মন্ত্রি পরিষদ সচিব বর্তমানে আওয়ামী লীগ করে উন্নয়ন দেখতে দেখতে অসহ্য হয়ে পড়লেন। কয়েকদিন আগে কমিশনারদের মিটিংয়ে বললেন, আমাদের যে বহিঃসম্পদ বিভাগে যাদেরকে আপনারা রাখেন তারা চুরি করার জন্য বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে আসে, ঋণ নিয়ে চুক্তি করে, চুক্তি করে পরিকল্পনা কমিশনের পাঠায়, পরিকল্পনা কমিশন সেটা পাস করে দেয়। পরে সেই ঋণ আমাদের গলার ফাঁস হয়ে যায়। এই কথা আমার নয়, মন্ত্রি পরিষদ সচিবের। তাহলে আমরা গিবত করতে চাই না। তোমার (সরকার) মন্ত্রি পরিষদ সচিব গিবত করেন তোমার উন্নয়ন বাংলাদেশের মানুষের জন্য ফাঁস। যে ঋণ করে, চুরি করে, হাজার হাজার কোটি টাকা অর্থ পাচার করে বিদেশে নিয়ে গেছো যেটা হচ্ছে বাংলাদেশ বহিঃসম্পদ বিভাগের নিরেট চুক্তি বিদেশি ঋণ করে টাকা নিয়ে যাওয়া। এই ঋণের ভার বহন করবে দেশের ১৮ কোটি মানুষ। বিএনপি সেই উন্নয়ন চায় না, সেই ফাঁস বিএনপি চায় না, বিএনপি চায় সুষম উন্নয়ন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ।