নোয়াখালীতে বাসের ধাক্কায় দিনকাল সাংবাদিকের মৃত্যু

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় বাসের ধাক্কায় দৈনিক দিনকালের সাংবাদিক মোঃ খোরশেদ আলম শিকদার নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর বাসটি ফেলে চালক ও হেলপার পালিয়ে গেলে ও স্থানীয়দের সহায়তার পুলিশ বাসটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে। নিহত সাংবাদিক খোরশেদ আলম সিকদার (৫৫) উপজেলার ৯ নং দেওটি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের আনন্দিপুর গ্রামের হামিদ উল্যাহ পন্ডিত বাড়ির মৃত মোঃ ইদ্রিসের পন্ডিতের ছেলে। তিনি দৈনিক দিনকাল পত্রিকার সোনাইমুড়ী উপজেলা প্রতিনিধি ও সোনাইমুড়ী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন।

গতকাল মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটের দিকে উপজেলার সোনাইমুড়ী পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ডের নোয়াখালী কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের রামপুর এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে পেশাগত কাজে উপজেলার সোনাইমুড়ী বাজার থেকে পার্শ্ববর্তী চাষিরহাট বাজারে যাচ্ছিলেন তিনি। এসময় জেলা শহর মাইজদী থেকে ঢাকাগামী লাল সবুজ পরিবহনের একটি বাস সোনাইমুড়ী পৌরসভার রামপুর এলাকায় তার মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বর জখম হয়। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে গেলে চালক ও হেলপার বাস ফেলে পালিয়ে যায়। তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাইমুড়ী পপুলার হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লা গৌরিপুর বাজার এলাকায় তার মৃত্য হয়।

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন আর রশীদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায়া বাসটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে এ ঘটনায় আইনগত প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এদিকে, নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খোরশেদ আলম শিকদারের জানাযা শেষে ২১ সেপ্টেম্বর'২২ বুধবার বেলা ১১টায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। জানাযায় সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইসমাইল হোসেন, অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ, ৯নং দেওটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ দিদার হোসেন, জেলা-উপজেলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ঢল নামে। তিনি উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের আন্দিরপাড় গ্রামের মৃত ইদ্রিছ মিয়ার ৪র্থ ছেলে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে ও ৩ কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।

উল্লেখ্য, গত ২০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সন্ধায় স্থানীয় চাষিরহাট এলাকায় সংবাদ সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে মটরসাইকেলযোগে নোয়াখালী-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের রামপুর-পোরকরা এলাকায় সিএনজি পাম্পের সামনে পৌঁছলে পিছন দিক থেকে দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী লাল সবুজ পরিবহণের (ঢাকা-মেট্রো-ব-১৫-৫০৬৮) চালক সাংবাদিক খোরশেদ আলম শিকদারের মটরসাইকেল চাপা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে সোনাইমুড়ী পপুলার হসপিটালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। তার শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা প্রেরণ করলে এ্যাম্বুলেন্স যোগে কুমিল্লার চান্দিনা এলাকায় পৌঁছলে সাংবাদিক খোরশেদ আলম শিকদার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর সংবাদে এলাকাবাসী, সোনাইমুড়ী উপজেলাসহ জেলার সাংবাদিক মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে।

সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইসমাইল হোসেন, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ ও হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার আন্তরিকতা ও সহায়তায় দুর্ঘটনাকারী বাসটি কুমিল্লা জেলা থেকে আটক করে। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন নোয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য এইচ.এম.ইব্রাহিম, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক সংসদ সদস্য এ.এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ফারুক আল ফয়সাল, সোনাইমুড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খন্দকার রুহুল আমিন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন শাকিল, জিসাস কেন্দ্রীয় সভাপতি গিয়াস উদ্দিন খোকন, জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট খলিলুর রহমান, নোয়াখালী জেলা প্রেসক্লাব সভাপতি বখতিয়ার শিকদার, চৌমুহনী প্রেসক্লাব সভাপতি আশরাফ ছিদ্দিকী বাবু, বেগমগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিঠু, নোয়াখালী সাংবাদিক ফোরাম, সোনাইমুড়ী প্রেসক্লাব, সহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।