সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকতে হবে : খসরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪০ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৫০ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা সাহসের সঙ্গে রাজপথে নেমেছে। এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। এটা বিএনপির একার আন্দোলন নয়। এটা দেশকে বাঁচানোর আন্দোলন। বাংলাদেশের মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। তাই এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে রাজপথে থাকতে হবে।
আজ সোমবার বিকালে মহাখালীতে এক সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন। মহাখালীর ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে জ্বালানি তেল, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ভোলায় নুরে আলম, আব্দুর রহিম ও নারায়ণগঞ্জের শাওন প্রধান হত্যার প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে যোগদান করেন। এ সময়ে প্রায় প্রত্যেক নেতাকর্মীকে বাঁশের লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকা লাগিয়ে মিছিলে অংশগ্রহণ করতে দেখা দেয়। এর বাইরে প্লাস্টিকের পাইপের মাথায়ও পতাকা লাগানো ছিলো।
নেতাকর্মীরা জানান, মহানগর উত্তরের প্রায় প্রত্যেক সমাবেশ কর্মসূচিতে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা হামলা করেছে। তাই এবার নিজেদের আত্মরক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে বাঁশের লাঠি নিয়ে সমাবেশে এসেছেন। তবে বিএনপির নেতাদের দাবি- এটা কোনো দলীয় সিদ্ধান্ত নয়। নেতাকর্মীরা নিজেদের রক্ষায় হয়তো পতাকা হাতে মিছিল নিয়ে এসেছেন।
রাজনীতিবিদদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ আমলাদের হাতে দলের নেতৃত্ব তুলে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন, আজকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদদের হাতে কোনো নেতৃত্ব নাই, যারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন তাদের হাতে কী কোনো নেতৃত্বে আছে? নাই। ওদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব আজকে তারা সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দিয়েছে। কয়েকটি উদারহরণ রেখে আমীর খসরু বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা কে? চট্টগ্রামের ডেপুটি কমিশনার আওয়ামী লীগের নেতা। নামটা মনে রাখবেন- মোহাম্মদ মোমিনুর রহমান। আওয়ামী লীগের নেতা কে? হাইকোর্টের জজ গাইবান্ধাতে ভোট চাইতে গেছেন তিনি হচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতা। পল্লবীতে রফিক মোল্লা হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতা। আওয়ামী লীগের নেতা হচ্ছে ভোলায় আমাদের নেতা নুরে আলম-আব্দুর রহিমকে যে গুলি করে মেরেছে সে আওয়ামী লীগের নেতা, যে কিনা জনগণের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে সে হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতা। নারায়ণগঞ্জে শাওন প্রধানকে যে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে হত্যা করেছে সে হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতা। এই দলে এখন আর রাজনীতি নাই। এই দলটা রাজনৈতিকভাবে এমন দেউলিয়া হয়েছে যে, ওদের নেতৃত্ব চলে যাচ্ছে এরকম মানুষের হাতে আমি যাদের কথা বললাম।
তিনি বলেন, পুলিশের একাংশ, একটি ক্ষুদ্রাংশ যারা আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে গেছেন অথবা নেতা হয়ে হয়ে যুদ্ধ করছেন। আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি আপনারা ওই পথে যাইয়েন না। ওই কাজ আপনাদের জন্য নয়, এটা ভালো হবে, ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে না। বিবিসিতে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতকার প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিবিসির ইন্টারভিউতে প্রধানমন্ত্রীকে বলছেন, বাংলাদেশে আগামীতে সঠিক নির্বাচন হবে কিনা। উনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের সময়ে সঠিক নির্বাচন হয়। এই সময়ে নেতা-কর্মীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ শ্লোগান দিতে থাকে।
তিনি বলেন, যে কথাটা উনি বলেছেন, বাংলাদেশের একটা লোক এটা বিশ্বাস করবে? আপনারা বিশ্বাস করেন? না, সরকারি দলের লোকেরা বিশ্বাস করে? ওনার তো একটু লজ্জা থাকা উচিত একটা বিদেশি সরকার প্রধানকে যখন এই প্রশ্নটা করা হয় তখন কী ওনার বোঝা উচিত না বাংলাদেশের সরকার প্রধানকে এই প্রশ্নটা কেনো করা হয়? প্রধানমন্ত্রী, অন্য দেশের প্রধানমন্ত্রীকে এই প্রশ্নটা করবে ওরা। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রীকে এই প্রশ্নটা করবে, নেপালের প্রধানমন্ত্রীকে এই প্রশ্নটা করবে, শেখ হাসিনাকে কেনো এই প্রশ্ন করছে। এটার আর কিছু বোঝার দরকার নাই। বাংলাদেশের ‘গুম’ নিয়ে বিসিসিতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ বলে অভিহিত করেন আমীর খসরু।
সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের এই আন্দোলন শুধু বিএনপির আন্দোলন নয়, আমাদের এই আন্দোলন দেশের ১৮ কোটি মানুষের আন্দোলন, আমাদের এই আন্দোলনের সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের যারা সম্পৃক্ত হয়েছে তাদের আন্দোলন। এজন্য আগামী দিনে এই আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বনানীতে মোমবাতি প্রজ¦লন কর্মসূচিতে আওয়ামী সন্ত্রাসী হামলায় আহত তাবিথ আউয়াল বলেন, আল্লাহর রহমতে আমি আপনাদের সামনে আজকে এসেছি। আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, যতই না মাথা ফাটুক, যতই না আমাদের হাত ভাঙ্গুক বিএনপির প্রত্যেকটা নেতা, প্রত্যেকটা কর্মী এখনো মাঠে আছে, মাঠে থাকবে। আমরা এই সরকারকে হটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা না পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরে যাবো না। যুদ্ধের ময়দানে মাঠেই আপনাদের সাথে আমরা দেখা হবে এবং আগামী দিনে আপনাদের পাশে নিয়ে আমাদের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।
ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, জলবায়ু বিষয়ক সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাবেক সহ-সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।