হামলা-গ্রেফতার করে আন্দোলনকে দমানো যাবে না : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩৪ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:০১ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
হামলা-গ্রেফতার করে আন্দোলনকে দমানো যাবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পল্লবী জোনে পুলিশের অনুমতি নিয়ে সমাবেশের জন্য যখন মঞ্চ তৈরি করছিলেন এবং মাইক লাগাচ্ছিলেন ঠিক তখনই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা লাঠিসোটা নিয়ে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে আক্রমন করে-এটা আপনাদের মিডিয়াতে উঠে এসেছে। এই আক্রমণের ফলে আমাদের প্রায় ৭৫ জন আহত হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছে ৮ জন। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, এভাবে সন্ত্রাসী হামলা করে, এভাবে আহত করে, জখম করে, হত্যা করে, গ্রেফতার করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে কখনোই আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যাবে না, বিএনপিকে রাজপথ থেকে সরানো যাবে না। জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি ও ভোলায় নুরে আলম, আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জে শাওন প্রধান হত্যার প্রতিবাদে পল্লবী জোনে আয়োজিত সমাবেশ শুরুর আগে আওয়ামী লীগের হামলার ঘটনা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘পল্লবী জোনে সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল ডি ব্লকের ঈদগাহ মাঠে। পুলিশ আপত্তি করার পরে আমাদের নেতৃবৃন্দ এটাকে পরিবর্তনে আরো দুইটি জায়গার কথা বলেছিলেন-পল্লবী পুরাতন থানার সামনে অথবা পল্লবী কাঁচাবাজারের সামনে মুকুল ফৌজ মাঠে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ কর্তৃপক্ষ মুকুল ফৌজ মাঠে দুপুর ১টায় এই সমাবেশ করার অনুমতি প্রদান করে। যখন আমাদের কর্মী ভাইয়েরা মঞ্চ তৈরি করছিলেন ঠিক তখনই এই হামলা চালানো হয়। সবচাইতে দুঃখজনক, সবচাইতে ভয়াবহ কান্ড হচ্ছে আক্রমণকারীদেরকে প্রতিহত করার জন্য আমাদের নেতাকর্মীরা যখন দাঁড়িয়ে থাকে তখন আমাদের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ, কাঁদুনে গ্যাস এবং শেষে বন্দুক দিয়ে গুলিবর্ষণ করে।
তিনি বলেন, আমরা বারবার বলে আসছি যে, পুলিশের ভুমিকা হওয়া উচিত রক্ষা করা, পুলিশের ভূমিকা হওয়া উচিত নিরপেক্ষ থাকা। কিন্তু পুলিশ পুরোপুরিভাবে এই হামলাকারীদের তথা আওয়ামী লীগের ও সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে গণতন্ত্রকামী যে আন্দোলন সেই আন্দোলনকে তারা নস্যাৎ করার জন্য কাজ করছে। আমরা মনে করি, পুরোপুরিভাবে উসকানি দিয়ে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করা. দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্ট করা, বিরোধী দলকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া এবং নির্বাচনী মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য তারা এই কাজগুলো করছে।”
কর্মসূচি : ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপির সমাবেশে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরসহ সকল মহানগর, জেলা-উপজেলায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। রাজধানীতে সেদিন মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে বিকাল তিনটায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
‘বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই সন্ত্রাস করছে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন যে, প্রতিদিন আওয়ামী লীগের নেতারা এটা বলতে চান যে, বিএনপি এই সন্ত্রাসী হামলা করছে। আপনারাই দেখেছেন খুব ভালো করে যে, পুরো সন্ত্রাসটা করছে তারা, শুরু করছে তারা এবং তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, দেশে যেন গণতন্ত্র না থাকে, দেশে যেন সেরকম কোনো পরিবেশ না থাকে যে পরিবেশে সত্যিকার অর্থেই একটা সুযোগ সৃষ্টি হয় একটা নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের। সেই পরিস্থিতিকে তারা পুরোপুরি নস্যাৎ করে দিতে চায়। আওয়ামী লীগ একটি গণতন্ত্র বিরোধী শক্তি, আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী শক্তি, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের যে অধিকার সেই অধিকারকে হরণকারী শক্তি। আওয়ামী লীগ অতীতেও একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল এখনো তারা একই উদ্দেশ্যে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তিনি বলেন, সারা দেশে আওয়ামী লীগ একই কায়দায় হামলা করেছে, একই কায়দায় মামলা হয়েছে, একই কায়দায় গুলি হয়েছে, একই কায়দায় আক্রমণ করেছে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর, সভা পন্ড করা হয়েছে। আজকে নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ যে কাজটি করতে চাচ্ছে তা হচ্ছে যেন এখানে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ তৈরি না হয়, জনগণের যে দাবি একটি নিরপেক্ষ সরকারের দাবি, যে দাবিতে জনগণ আন্দোলন করছে সেই নিরপেক্ষ সরকার এখানে যাতে কিছুতে করা না যায় এবং তাদের যে শাসন, তাদের যে একদলীয় শাসন সেই ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করার জন্য তারা আবারো একটা নির্বাচন করতে চায়, যে নির্বাচনে কোনো বিরোধী দল থাকবে না।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে ঢাকা মহানগরে মিরপুরে দলের সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও পুলিশি হামলার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, আওয়ামী লীগ-য্বুলীগ- স্বেচ্ছাসেবক লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপর আক্রমণ করেছে। এই সব আক্রমণ করে কোনো লাভ হবে না। ঢাকায় আমাদের যে কর্মসূচি ২৮ তারিখ পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়েছে, সেই কর্মসূচি চলবে। যেকেনো প্রতিকূলতার মধ্যে এই কর্মসূচি ইনশাল্লাহ অব্যাহত থাকবে। যুব লীগের তাজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পী, রুপনগর থানা আওয়ামী লীগের রজ্জব আলী, কাশেম মোল্লা, তুহিন, শেখ মান্নান, মো. লিটু, সালাহউদ্দিন রবিন, ইসহাক মিয়া, মোবাশ্বের চৌধুরী, তোফাজ্জল হোসেন টেংগু, জাকির হোসেন, মো. খোকন, মো. ইব্রাহিম, খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে এই সশস্ত্র হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, আমি এই হামলার ঘটনার নিন্দা জানাই। সরকারকে বলছি, এই হামলার ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। আমাদের একটাই কথা, মাঠে আমরা এখনো নামি নাই, নামছি। মাঠ থেকে গুলি করে মৃত্যু হলেও আমাদেরকে উঠাতে পারবে না। সরকারকে চিন্তা করতে হবে তারা লাশ চায় না অন্য কিছু চায়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিন্দা ও প্রতিবাদ : পুলিশ অনুমতি দেয়া সত্ত্বেও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত পল্লবীর সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে নৃশংস হামলা ও গুলি-টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করাসহ অনেক নেতাকর্মীকে আটক করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের পৈশাচিক ও কাপুরুষোচিত হামলা, নেতাকর্মীদেরকে আহত ও গ্রেফতারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “জোর করে জনগণের কাঁধে চেপে বসা বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং তাদের দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিরোধী দলকে দমন করার হীন চক্রান্তের অংশ হিসেবে বিএনপিসহ বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের ওপর হামলা ও নেতাকর্মীদেরকে খুন-জখমের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সমাবেশে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা, নেতাকর্মীদেরকে আহত করাসহ রূপনগর থানা বিএনপি নেতা নিজাম উদ্দিন জসিম, নজরুল ইসলাম নজু, সালাউদ্দিন খান, এম আকতার হোসেন, ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান, মামুন মজুমদার, জসিম রানা এবং এস এম হাব্বিসহ অনেক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। জনসমর্থন শূন্যের কোঠায় আঁচ করতে পেরেই ক্ষমতাসীনরা একদিকে দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দিয়ে এবং অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কব্জায় এনে দেশব্যাপী তান্ডব সৃষ্টি এবং নেতাকর্মীদের আহত করাসহ গ্রেফতারের এক মহাযজ্ঞে লিপ্ত হয়েছে। আর এসব করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে-রাষ্ট্রক্ষমতা যাতে হাতছাড়া না হয়। দেশটাকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি ভেবে আধিপত্য বিস্তারের জঘন্য মনোবৃত্তির কারণে ক্ষমতাসীনরা এখন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাই তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে চায়। তবে দমন-পীড়ন চালিয়ে বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে থামানো যাবে না, বরং নির্যাতনের মাত্রা যতই বৃদ্ধি করা হবে ততই বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীরা সুসংগঠিত হয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে চলমান আন্দোলনকে আরো বেগবান, গতিশীল ও শক্তিশালী করবে। আমি পল্লবীতে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলা, গুলিবর্ষণ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান এবং সদস্য সচিব আমিনুল হক পৃথক বিবৃতিতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত পল্লবীর সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের যৌথ হামলায় বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করাসহ অনেক নেতাকর্মীকে আটক করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নেতৃদ্বয় অবিলম্বে রূপনগর থানা বিএনপি নেতা নিজাম উদ্দিন জসিম, নজরুল ইসলাম নজু, সালাউদ্দিন খান, এম আকতার হোসেন, ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান, মামুন মজুমদার, জসিম রানা এবং এস এম হাব্বিসহ গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান। নেতৃদ্বয় আহত নেতাকর্মীদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।