আগামীতে আমরা আওয়ামী লীগের সাথে নাও থাকতে পারি : জিএম কাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১৫ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:১৪ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (এমপি) বলেছেন, জাতীয় পার্টি কোনো জোটে নেই। গত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টির কোনো জোট ছিল না। গত নির্বাচনে কিছু আসনে নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছিলো মাত্র। তখন আসনভিত্তিক আমাদের নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছেন, আবার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জাতীয় পার্টির পক্ষে কাজ করেছেন। এ কারণেই আওয়ামী লীগের সাথে আমাদের একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। তিনি বলেন, আমরা দেশ ও মানুষের পক্ষে কথা বলতে চাই। আমরা সবসময় সত্য কথা বলতে চাই। ভালো কাজ করলে আমরা আওয়ামী লীগের সাথে থাকতে পারি। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি গণমানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলে তাহলে আগামীতে আমরা তাদের সাথে নাও থাকতে পারি।
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে হিন্দু মহাজোটের প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গোলাম মোহাম্মদ কাদের এসব কথা বলেন।
এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আরো বলেন, দেশের মানুষ নির্বাচনে ইভিএম চায় না। আমরা শুরু থেকেই ইভিএমের বিপক্ষে। কারণ, ইভিএম হচ্ছে শান্তিপূর্ণ কারচুপির মেশিন। ইভিএমে নির্বাচন হলে যাকে খুশি বিজয়ী করতে পারবে। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেইনি, নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা অত্যন্ত কঠিন। আমরা বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেবো। আমরা দেশ ও সাধারণ মানুষের স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরো বলেন, দেশ ও মানুষের সেবার দায়িত্ব নিতেই আমরা রাজনীতি করছি। আগে যুদ্ধ-বিগ্রহের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা হতো। যুদ্ধে কেউ শৃংখলা ভঙ্গ করলে তাকে কঠিন শাস্তি দেয়া হতো, কখনো কখনো মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হতো। এখন শান্তিপূর্ণ রাজনীতি ও নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করতে হয়। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেও শৃংখলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কেউ দলীয় শৃংখলা বিনষ্ট করতে চায়, সে যত বড় নেতাই হোক, যত প্রভাবশালী হোক অথবা যত অর্থ-বিত্তের মালিকই হোক, কাউকে ছেড়ে দেবো না। সকল ষড়যন্ত্র উড়িয়ে দিয়ে আমরা দেশ ও মানুষের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবো।
এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, দেশে মেগা প্রকল্প চলছে মেগা দুর্নীতির জন্য। প্রতিটি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয় কিন্তু নির্ধারিত সময়ে এবং নির্দিষ্ট বরাদ্দে কোনো কাজ শেষ হয় না। প্রতিটি প্রকল্পে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এতে প্রমাণ হয় সম্ভাব্যতা যাচাই সঠিক ছিলো না। আবার অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে এই প্রকল্পগুলো কখনোই লাভজনক হবে না। একই সময়ে গেলো বছরে শুধু সুইস ব্যাংকেই ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আর একারণেই গভীর ঝুঁকির দিকে এগোচ্ছে আমাদের অর্থনীতি। জাতীয় বাজেট হচ্ছে শতভাগ দেশী-বিদশী ঋণনির্ভর। দেশের পরিচালন ব্যায় নির্বাহ করতে হবে ট্যাক্স আদায়ের মাধ্যমে। মানুষের যদি আয় না থাকে অথবা কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করে তাহলে ট্যাক্স দেবে কিভাবে?
সভায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের মধ্যে যারা রাজনীতি করে অথবা বিত্তশালী তারা কোনোমতে ভালো আছে। কিন্ত গ্রামাঞ্চলের সংখ্যালঘুরা জানমাল ও সম্মান নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছে। ক্ষমতাসীন বা প্রভাবশালীদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে হতদরিদ্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির দরজা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সব সময় খোলা আছে। জাতীয় পার্টি সব সময়ই তাদের স্বার্থ রক্ষায় সংসদে ও রাজপথে থাকবে।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যানদের সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা (এমপি) বলেন, এদেশে কেউ সংখ্যালঘু নেই। এদেশে যারা জন্ম নিয়েছেন আমরা সবাই ভাই ভাই। আমরা আগের মতোই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশে থাকবো। আগামী শারদীয় দুর্গা উৎসবে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় কাজ করবে। যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে অপচেষ্টা করবে তাদের আমরা ক্ষমা করবো না।
অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায়ের সভাপতিত্বে ও প্রিয়াংকা সুকুলের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি বিধান বিহারী গোস্বামী, মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, সাংগঠনিক সম্পাদক সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী, জাতীয় পার্টির যুগ্ম-সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন দে।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর সিকদার লোটন, ভাইস চেয়ারম্যান এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ, সম্পাদক মণ্ডলির সদস্য জহিরুল ইসলাম মিন্টু, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিন, যুগ্ম-সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য হেলাল উদ্দিন, এম এ সোবহান, আক্তার হোসেন দেওয়ান, মাশুক রহমান, মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, দ্বীন ইসলাম শেখ, ইব্রাহিম আজাদ, সদস্য আবুল হাসান আহমেদ জুয়েল, শেখ সরোয়ার হোসেন, ফরিদ আলম, জাতীয় ছাত্র সমাজ এর সাধারণ সম্পাদক আল মামুন জাতীয় পার্টি শাহজানপুর থানার সাধারণ সম্পাদক সেলিম আহমেদ, বাড্ডা থানার সাধারণ সম্পাদক এস এম আমিনুল হক সেলিম, উজ্জল চাকমা প্রমুখ।