শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে না : ছাত্রদল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১০ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৫৫ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবস্থানের প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সংগঠনের নেতারা বলেছেন, রাজনীতি করা ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার। জাতি হিসেবে যত অর্জন তার প্রতিটিতে সব সময় ছাত্র রাজনীতি বিশেষ অবদান রেখেছে। রাজনীতি সচেতন হওয়া প্রত্যেকটি মানুষের জন্য জরুরী। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের জন্য ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে উঠবে। এ অবস্থায় উদ্ভহৃত পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় কতৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান চান তারা।
বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে অবস্থান সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি করার দাবি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। অসাংবিধানিকভাবে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সভাপতি মো. আবু হোরায়রা এবং সাধারণ সম্পাদক এম রাজিবুল ইসলাম তালুকদার। এ সময়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনুকুল ইসলাম শ্রাবন, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেললে ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। প্রত্যক নাগরিক তার পছন্দমত রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে তার রাজনৈতিক ভাবনার বিস্তার ঘটাতে পারবেন। সংবিধান সেই ক্ষমতা নাগরিককে দিয়েছেন। সংবিধানের ৩৮নং অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র নাগরিকদের এই অধিকার নিশ্চিতকরণের কথা বলেছে। সংবিধানের-৩৯ নং অনুচ্ছেদে, জনগণের চিন্তা-বিবেক, বাক স্বাধীনতা এবং ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। ১৯৯২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু হয় ইউজিসির নীতিমালায়। এই নীতিমালায় ছাত্র সংগঠন করা যাবে না এমন কিছু বলা হয়নি এবং ২০১০ সালে ইউজিসি সেই নীতিমালায় পরিবর্তন আসে সেখানেও ছাত্র সংগঠন করা যাবে না এমন কিছু বলা নেই। ইউজিসির নীতিমালার ৬নং ধারার ১০ উপধারায় বলা হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থে ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবে না এবং ৯ ধারার ৫ উপধারায় বলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার্জন, চলা-ফেরা ও নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করতে হবে। '৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ’৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন পর্যন্ত ছাত্ররাজনীতির এরকম গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস থাকলেও, ক্রিয়াশীল ছাত্ররাজনীতি ধ্বংসের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে এক শ্রেণির নতজনু, প্রভুভক্ত, আত্মকেন্দ্রীক গোষ্ঠী। বর্তমান প্রজন্ম রাজনৈতিকভাবে অসচেতন হলে, দেশে দুর্নীতি, লুটপাট, ভয়ের সংস্কৃতি, বিচারহীনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির অভাবে দেশ একসময় বিদেশি প্রভু নির্ভর অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসগুলোতে প্রগতিশীল রাজনৈতিক দর্শনের চর্চা না হলে, এক ধরনের মৌলবাদী-সন্ত্রাসী সংগঠনের উত্থান হওয়ারও ঝুঁকি রয়ে যায়। তাই, বৈশ্বিক রাজনীতিতে টিকে থেকে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে মেধাভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি চর্চার বিকল্প নেই। আর মেধাবী নেতৃত্ব বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই উঠে আসতে হবে। তাই দেশের এই বৃহৎ শিক্ষার্থীদের মৌলিক মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং তাদেরকে মূল ধারার নেতৃত্বে যুক্ত করার লক্ষ্যে ২০১১ সালে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের আওতায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল প্রতিষ্ঠিত হয়। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের তৎকালীন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক, ৪৯ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। উক্ত আহবায়ক কমিটির হাত ধরে ২০১৩ সালে ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদিত হয়। এরপরে ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের তৎকালীন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ১০ সদস্যের কমিটি অনুমোদন করেন, যেটি পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর ৬৪৮ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন করেন। পরবর্তীতে গত ৩০ জুন ২০২২, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক, আগামীর রাষ্ট্রনায়ক দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের বর্তমান সভাপতি, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ৫ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি অনুমোদন করেন। এর-পরপরই, সংগঠনের নবগঠিত কমিটির সভাপতি মোঃ আবু হোরায়রা এবং সাধারণ সম্পাদক এম. রাজীবুল ইসলাম তালুকদার বিন্দু, পর্যায়ক্রমে ১০৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত ০৪-০৭-২০২২ ইং তারিখ ২০১৩ সালে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিগুলো বিলুপ্ত করেন। এবং ইতিমধ্যে বেশ কয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়। খুব দ্রুত সময়ে উক্ত ইউনিভার্সিটির কমিটিগুলো ঘোষণা করা হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও শিক্ষার্থী বান্ধব চেতনা নিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে একটি ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন হিসেবে সবসময় শিক্ষার্থী বান্ধব কর্মসূচি নিয়েই কাজ করে আসছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। যেমন, শিক্ষার ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে ২০১১ সালে এবং ২০১৫ সালে রাজপথে সরব অবস্থানে ছিল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। এছাড়াও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলনগুলোতেও শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে মাঠে ছিল সংগঠনটি।
রাজনীতি করা ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার। কোনো প্রতিষ্ঠান সেটি নিষিদ্ধ করতে পারে না। আমাদের জাতি হিসেবে যত অর্জন তার প্রতিটিতে ছাত্র রাজনীতি বিশেষ অবদান রেখেছে সব সময়। রাজনীতি সচেতন হওয়া প্রত্যেকটি মানুষের জন্য জরুরি। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের জন্য ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে উঠবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য, ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইউজিসির সাথে কোনো প্রকার পরামর্শ না করে ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান দেখিয়েছেন। দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা ছিলো প্রশংসনীয়। সুতরাং, কোনো ছাত্র সংগঠন যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নিয়মিত বৈধ ছাত্রদের দ্বারা পরিচালিত হয় ও নির্দিষ্ট কাঠামো মোতাবেক গঠিত হয়, তবে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।