বিদেশে তাদের প্রভু আছে বলেই বিদেশে গিয়ে নতজানু : নজরুল ইসলাম খান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:২৮ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৫৫ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নিষ্ফল ভারত সফরের সমালোচনার জবাবে সেতু মন্ত্রীর বক্তবের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের বেঁচে থাকতে ভারত সবকিছু করবে কেন? সরকার কি করছে? প্রধানমন্ত্রী কি ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন? এসব প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকতে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে ভারতের সহযোগিতা চেয়ে আওয়ামী লীগ একদিকে রাষ্ট্রদ্রোহিতাসম অপরাধ করেছে, জনগণকে অপমানিত করেছে, অন্যদিকে নিজেদের জনবিচ্ছিন্নতার পাশাপাশি দুর্নীতি, লুটপাটের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ রাষ্ট্রীয় কোষাগার শূণ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। বিদেশে তাদের প্রভু আছে বলেই বিদেশে গিয়ে নতজানু ও প্রজাসুলভ আচরণ করছে। ভারত সফরকালে সীমান্তে বিএসএফ গুলি করে বাংলাদেশের নাগরিককে হত্যা করলেও প্রধানমন্ত্রী প্রতিবাদ পর্যন্ত করলেন না। তিস্তার চুক্তি করাতে পারলেন না। এসব সরকারের নতজানু নীতির বহিঃপ্রকাশ। এর বিচার একদিন হবে উল্লেখ করে মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জনগণের অর্থ অপচয় করে 'উজিরে খামাখা' হয়ে না থেকে পদত্যাগ করুন। অন্যথায় জনগণ টেনে নামাবে আপনাদেরকে।
নজরুল ইসলাম খার আজ সোমবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল, চট্টগ্রাম বিভাগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল ও সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে শেখ নুরুল্লাহ বাহারের পরিচালনায় সম্মেলন বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নরুল ইসলাম নাছিম।
বক্তব্য রাখেন আবু সফিয়ান, বিশেষ অতিথি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে বিদেশিদের সহায়তায় টিকে থাকা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এখন তারা শত শত কোটি টাকা খরচ করে ইউটিউব, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে লাগামহীন মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই মিথ্যচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। কারণ সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসনে দেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ। দেশের মানুষ দু'বেলা পেট ভরে খেতে পাচ্ছে না। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি ও জীবনযাত্রার সকল ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের জীবন আর চলছেই না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা লুট করে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। মেগা প্রকল্প ও কুইকরেন্টালের নামে লুটপাটের ভর্তুকি এখন সাধারণ মানুষের ঘাড়ে পড়েছে। তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে কৃষিসহ মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন এখন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে মানুষের ভোটের অধিকার নেই, কথা বলার অধিকার নেই, ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নেই। সত্য কথা বললেই নামে মিথ্যা মামলা ও নির্যাতনের খড়গ।
উদ্বোধনী বক্তব্য রাখবেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধ আবদুল্লাহ আল নোমান, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সাজা দেয়া হয়েছে, তাঁর প্রতি অন্যায়-অবিচার করা হয়েছে। তাঁকে যে মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে-এটা কোনো মামলাই নয়। ২ কোটির মামলা- সেই টাকা এখন ব্যাংকে বেড়ে ৮ কোটি টাকা হয়েছে। আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তাঁকে বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে সব ডাক্তার বলেছেন। কিন্তু এরা তাঁকে বাইরে চিকিৎসা করতে দিতে চায় না। কারণ দেশনেত্রীকে তারা ভয় পায়। যদি উনি আবার বেরিয়ে আসেন, আবার রাজপথে নামেন তাহলে হেমিলনের বংশীবাদকের মতো লক্ষ লক্ষ মানুষ নামবে তখন তাদের তখতে তাউস উড়ে চলে যাবে।
বিশেষ অতিথি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন,এই ব্যর্থ সরকার যারা এদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে তাদেরকে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করতে হবে, সরকারকে পদত্যাগ করে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমরা একটা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন চাই। তা আমরা করব ইনশাল্লাহ। এদেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে, জনগণের পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠা হবে-এটাই আমাদের লক্ষ্য।
বিশেষ অতিথি বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, সারাদেশে আবারো বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের হিড়িক চলছে। এ অবস্থায় মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে সরাতেই বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নামে বিভিন্ন অপপ্রচারে মেতে উঠেছে সরকার। মানুষ যখন বিপর্যস্ত, দিশেহারা সরকার তখন ১৭০ জনের বিশাল লটবহর নিয়ে নিষ্ফল ভারত সফর, ১৫০ আসনের জন্য ইভিএম কেনাসহ মেগা প্রজেক্টের নামে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিতে ব্যস্ত। এভাবে অপচয় না করে এই অর্থে ভর্তুকি দিয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপণ্য দিতে পারত বা জ্বালানি, গ্যাস এনে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারত। আসলে সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় জনগণ বা দুর্ভোগ নিরসন নাই, তারা এই সংকটের মধ্যেও দুর্নীতি, লুটপাট, দমন, নিপীড়ন ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের নামে প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ করতে ব্যস্ত।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে শ্রমিক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসাইন বলেন, শূন্য হাতে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে হয়েছে। তিস্তা নদীর পানি, সীমান্তে মানুষ হত্যাসহ অমীমাংশিত ইস্যু নিয়ে চুক্তি দূরে থাক আলোচনা ছড়াই প্রধানমন্ত্রীকে লাগেজ লক করতে হয়েছে। তার ভারত সফর চলাকালেই সীমান্তে ভারতীয় বাহিনী গুলি করে বাংলাদেশী হত্যা করলেও তিনি বা তার সফর সঙ্গী মন্ত্রীরা টুঁ শব্দটি করেন নাই।
বিশেষ অতিথি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সরকার জনসমস্যা নিরসনে ব্যর্থ হয়েছে, বরং তাদের ভুল পদক্ষেপে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার সৃষ্ট জনদুর্ভোগের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গণআন্দোলন দমন করতে সরকার নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাচ্ছে। গুলি করে, লাশ ফেলে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভয় দেখানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আন্দোলনের ভয়ে ভীত সরকার ভয় দেখাচ্ছে। এতে জনগণ ভীত নয়। রক্ত ঝরিয়ে কোনও স্বৈরাচার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে নাই, বর্তমান সরকারও টিকে থাকতে পরবে না। তিনি চূড়ান্ত আন্দোলনের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথি আবুল হাশেম বক্কর বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে কী নিয়ে এসেছেন? তিনি প্রতিবার ভারত গিয়ে তিনি শুধু দিয়ে এসেছেন, কিছু নিয়ে এসেছেন বলে দাবি করতে পারেননি। তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন ভারতকে তিনি যা দিয়েছেন, সারা জীবন তারা মনে রাখবে। কিন্তু আমরা স্মরণ রাখার মতো এমন কিছু এখন পর্যন্ত আনতে পারেননি। সফরে গিয়েছিলেন অনেক কথা বলেছিলেন কিন্তু কোনো চুক্তি হয়নি। শুধু স্মারক সই করেন। এটার অর্থ হচ্ছে ইচ্ছে প্রকাশ করা। কিন্তু আসল চুক্তি না হলে সেটার কোনো মূল্য নেই।
বিশেষ বক্তার বক্তব্য রাখবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার নেই। ভোটের অধিকার নেই। আজ দেশে অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। এই সরকারের লোকেরা সিন্ডিকেট করে বাংলাদেশের অর্থ লুটেপুটে নিয়েছে। শেয়ার মার্কেট ডাকাতি, ব্যাংক ডাকাতি এবং তারা সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
সম্মেলনে এ এম নাজিম উদ্দীনকে সভাপতি ও শেখ নুরউল্লাহ বাহারকে সাধারণ সম্পাদক করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল চট্টগ্রাম বিভাগের কমিটি ঘোষণা করা হয়।