'জনসমর্থনহীন' সরকার বলেই ভারতের সাথে সমস্যাগুলোর সমাধান হচ্ছে না : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:২৫ পিএম, ৬ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৫২ পিএম, ১৪ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
'জনসমর্থনহীন' সরকার বলেই ভারতের সাথে অভিন্ন সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার (০৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ''ভারতের সাথে যে আমাদের অভিন্ন সমস্যাগুলো আছে, অভিন্ন নদীর পানি বন্টন সমস্যা, সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা করা এবং অন্যান্য যে সমস্যাগুলো আছে এই সমস্যাগুলোর সমাধান বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত করতে পারেনি। পারেনি কারণ যে, ওদের পেছনের জনগনের সমর্থন নেই -সেটাই হচ্ছে বড় কারণ। সেজন্য এখন পর্যন্ত সেই শক্তি নিয়ে এই সরকার কোনো কাজ করতে পারেনি।"
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ''আমি গতকালও বলেছি, উনি (শেখ হাসিনা) তো প্রত্যেকবার গেছেন। আমাদেরকে অনেক আশা দিয়ে গেছেন-এই তিস্তা চুক্তি সই হবে, ওমুক হবে, তমুক হবে –সেটা এখন পর্যন্ত কোনটাই হয় নাই। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, ১০০ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছিলো সেটারও আপনার ৩০% মাত্র কাজ হয়েছে। আর কোনো কাজ হয়নি। এই বিষয়গুলো নির্ভর করে জনগনের শক্তির উপরে। জনগন যদি এই সরকারকে সমর্থন দিতো তাহলে প্রত্যেকটি কাজই ইতিমধ্যে হয়ে যেতো। আমি আবারো বলছি, উনি ফিরে আসুন, কি কি আনছেন বাংলাদেশের মানুষের জন্য- সেটাই হবে এই সফরের সাফল্য।"
মঙ্গলবার বেলা ১২টায় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন সভাপতি এসএম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীদের নিয়ে শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করেন এবং প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন।
এ সময়ে বিএনপি আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরফত আলী সপু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আকরামুল হাসান, মহানগর বিএনপির আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটির সহসভাপতি ইয়াছিন আলী, সংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
গত ৪ সেপ্টেম্বর এসএম জিলানী ও রাজীব আহসানের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয় বিএনপি। সর্বশেষ কমিটি ছিলো মোস্তাফিজুর রহমান ও আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলের নেতৃত্বে।
ভারতের পালাম বিমান বন্দরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে একজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন- বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ''এটা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। কারণ এখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর আগের যে বক্তব্যগুলো এবং এই সরকারের বেশির ভাগ মন্ত্রীদের যে বক্তব্যগুলো সেই বক্তব্য তো খুব স্পষ্ট যে, ওরা যেভাবেই রিসিভ করুক, তারা যাবে এবং সেটা নিয়ে তাদের খুব একটা বড় রকমের সমস্যা থাকবে না। আমি আগেই বলেছি যে, এই সরকার একেবারের একটা নতজানু সরকার। এই সরকার তাদের বন্ধুদের সমর্থন ছাড়া টিকে থাকা কঠিন আছে এবং বন্দুক-পিস্তল নিয়ে তাদের টিকে থাকা কঠিন হবে। তারা চাইবে যে, সামনে নির্বাচনের আগে সেইটাকে যদি কোনো রকম আরো শক্তিশালী করতে পারে।"
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ''আমরা বিশ্বাস করি গোটা গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশের জনগনের যেটা মূল চাহিদা একটা গণতান্ত্রিক সরকার, একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন- সেই ব্যাপারে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশের সরকারগুলো তাদের ভুমিকা পালন করবে। আমরা বরাবরই বলে এসেছি যে, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রকামী মানুষ। বাংলাদেশের মানুষের কাছে গণতন্ত্র ছিলো এই আওয়ামী লীগ সরকার সেই গণতন্ত্র কেড়ে নিয়েছে এবং প্রতিদিন প্রতি মুহুর্তে এখানে গণতন্ত্রকে হত্যা, মানুষের অধিকারকে হত্যা করছে, তারা বিরোধী পক্ষকে হত্যা করছে। সেই সরকারের সমর্থনে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আসবে এটা আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি যে, সমস্ত গণতান্ত্রিক বিশ্ব জনগনের যে সংগ্রাম, মহান ঐতিহ্যবাহী যে সংগ্রাম গণতন্ত্রের পক্ষের যে সংগ্রাম তাকেই সমর্থন করবে"।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ''আমাদের দীর্ঘ ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি যে, এই সরকার যেহেতু জনগনের দ্বারা নির্বাচিত সরকার নয়, যেহেতু জনগনের ম্যান্ডেট নিয়ে তারা সরকারে আসে নাই। সুতরাং তাদের পক্ষে বর্হিবিশ্বে কোনো চুক্তি করা, বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের স্বার্থকে রক্ষা করা অত্যন্ত দুরহ কাজ। এটা আমরা লক্ষ্য করেছি মিয়ানমারের ক্ষেত্রে। এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে এই সরকার কোনো ব্রেক থ্রো করতে পারে নাই। আরো ভয়াবহ কান্ড হচ্ছে যে, মিয়ানমার বার বার বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে বিনষ্ট করে তারা মর্টার মারছে, গোলা মারছে। কিন্তু সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে একটি প্রতিক্রিয়া ছাড়া কোনো কিছু করার সাধ্য তাদের নেই।"
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ''এই নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। কারণ এই নির্বাচন কমিশনকে আমরা মানি না। আমরা বলেছি যে, এই কমিশনটাও ছিলো সম্পূর্ণ বেআইনি ও অনৈতিক। কারণ আমরা বার বার বলে এসেছি যে, নির্বাচন কমিশন দিয়ে নির্বাচন হবে না। নির্বাচন করতে হলে এখানে একটা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হবে। নির্বাচন কালীন সময়ে যদি নির্দলীয় সরকার না হয় তাহলে অতীতে যে সমস্ত নির্বাচন কমিশন কাজ করছে তাদের যে হাল হয়েছে এদের সেই একই হাল হবে। তারা কখনোই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। সেই কারণে এই নির্বাচন কমিশন কী বললেন না বললেন তাতে আমাদের জাতির খুব একটা যায় আসে না।"
তিনি বলেন, ''আমাদের লক্ষ্য একটাই এই ফ্যাসিবাদী বেআইনি জবর দখলকারী সরকারকে সরিয়ে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, সংসদ বিলোপ করা এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহনযোগ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা।"