শাওন হত্যায় এসআই কনকসহ ৪২ জনের নামে বিএনপির মামলার আবেদন খারিজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:২৪ পিএম, ৪ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৪১ পিএম, ১২ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে নিহত যুবদল কর্মী রাজ আহমেদ শাওন হত্যায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মাহফুজুর রহমান কনককে প্রধান আসামি করে ৪২ জনের নামে মামলার আবেদন করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। মামলার আবেদনে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলকে তিন নম্বর আসামি করা হয়েছে। বিকেলে আদালত মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন বলে কোর্ট ইন্সপেক্টও জানান।
আজ রবিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ইমরান মোল্লার আদালতে এ আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে পরে আদেশ দিবেন বলে জানান। মামলাটি ২০৩ ধারায় আদালত খারিজ করে দিয়েছেন বলে কোর্ট ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে এ প্রতিবেদককে জানান।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু। তিনি জানান, শাওন হত্যায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মামলা করেছেন। আদালত মামলাটি শুনানির জন্য রেখেছেন বলেও জানান তিনি।
মামলার প্রধান আসামি হলেন, নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মাহফুজুর রহমান কনক। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমানকে দুই নম্বর আসামি, জেলার নবাগত এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেলকে তিন নম্বর আসামি, ক-অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুলকে চার নস্বর আসামি, সদর মডেল থানার এসআই কামরুজ্জামান, ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমীর খসরু, কনস্টেবল শাহরুল আলম, মো: সোহাগ, মো: আরিফ দেওয়ান, ফেরদৌস দেওয়ান, সেলিম, রিপন, যুগল, মামুন, রিয়াজ, হাফিজ, এএসআই ইকবাল হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, সোহরাব, কনস্টেবল জাকির হোসেন, নাঈম, রাকিব, আনিস, সাইদুল, ইনজামামুল, রাসেল, খলিলুর রহমান, মোহসীন মিয়া, মোস্তাকিম, শাহাদাত হোসেন, ফখরুল ইসলাম, আরিফ দেওয়ান, দীপক সাহা, শাহীন, ফরিদ উদ্দিন, মুরাদুজ্জামান, শাহীন, কবির হোসেন, মান্নান, রুবেল, সোহাগসহ ৪২ জনের নামে, অজ্ঞাতপরিচয় ১৫০জন।
এদিকে, আদালত শুনানি শেষে পরে আদেশ দিবেন বলে জানান। এরপর সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। এসময় তার পক্ষে নারায়ণগঞ্জ আদালতের শতাধিক আইনজীবী ছিলেন। বেলা ১১টায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আদালত প্রাঙ্গন ত্যাগ করেন।
মালায় উল্লেখ করা হয়েছে, বিএনপির শান্তিপূন্য প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আসার পথে আসামিরা সরকারি দলের ইন্ধনে উদ্দেশ চারিতার্থ করার লক্ষে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। এক পর্যায়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী জড়ো হতে শুরু করলে তারা নিজেদের আইনগত দায়িত্ব ভুলে আগ্নেয়াস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে নেতাকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এসময় নেতাকর্মীরা তাদের বিরত থাকার অনুরোধ করলে তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে গুলি, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেন।
এ বিষয়ে মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ তালুকদার বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নম্বর রেলগেইট এলাকায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রায় পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় যুবদল কর্মী শাওন। মাহফুজুর রহমান কনক চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলিবর্ষণ করেছেন। কিন্তু তার নামে পিস্তল বরাদ্দ ছিল। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ একাকার হয়ে হত্যাযজ্ঞে অবতীর্ণ হয়ে লাশ উপহার দিয়েছে। আমাদের শাওন নামে যুবদল কর্মী নিহত হয়েছে। পুলিশের এই সন্ত্রাসীমূলক কার্যক্রমের প্রতিবাদে আমরা মামলার আবেদন করেছি। আশা করি আদালত মামলা গ্রহণ করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন।
এামলার পক্ষে আইনজীবী এড. একেএম ওমর ফারুক নয়ন জানান, এ বিষয়টি সকলেই জানেন নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং রেলগেইট এলাকায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রায় পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে শলাপরার্মশ করে অতর্কিতভাবে পেছন থেকে হামলা করে গুলিবর্ষণ করে। মাহফুজুর রহমান কনক চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলিবর্ষণ করেছে। কিন্তু তার নামে পিস্তল বরাদ্দ ছিল। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ একাকার হয়ে হত্যাযজ্ঞে অবতীর্ণ হয়ে মরদেহ উপহার দিয়েছে। আমাদের শাওন নামে যুবদল কর্মী নিহত হয়েছে। পুলিশের এই সন্ত্রাসীমূলক কার্যক্রমের প্রতিবাদে আমরা মামলার আবেদন করেছি। আশা করি আদালত মামলা গ্রহণ করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন।
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, গণতন্ত্রের যে অধিকার তা হরণ করা হয়েছে। এ সরকার একদলীয় শাসনতন্ত্র কায়েম করতে চাচ্ছে। যার বহিঃপ্রকাশ ১ সেপ্টেম্বর প্রমাণিত হয়েছে। তিনি এ (শাওন) হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।