সরকারকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে এই হত্যার জন্য দায়ী কে? : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৪ পিএম, ৩ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:২৪ পিএম, ১৩ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
নারায়নগঞ্জে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে পুলিশের গুলি করার বৈধ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এর তদন্ত দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে সরকারের এহেন অপকর্মের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
আজ শনিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ''আজকের এই সভা থেকে আমরা দাবি করছি যে, পত্র-পত্রিকায় এই যে ছবি (চাইনিজ রাইফেল তাঁক করা) এই ছবি তদন্ত করে আনুক এবং যিনি এই রাইফেল নিয়ে পয়েন্ট লাইনে গুলি করেছেন তার তদন্ত করে তাকে আইনের আওতায় এনে তাকে সাজা দিতে হবে। যদি না দেন। আমরাও বসে থাকবো না, বসে নাই। ভোলাতে মামলা করেছি, নারায়নগঞ্জের হত্যাকান্ডের মামলা করব। যত আইন ভঙ্গ করে বেআইনিভাবে, আমার ভাইদের ওপর অত্যাচার করবে ততবার মামলা হবে।"
চাইনিজ রাইফেলে গুলি করার এখতিয়ার পুলিশের আছে কিনা প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ''আমরা খুব পরিস্কার করে জানতে চাই যে, গত পরশু নারায়নগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কি কারণে সরকারের পেটুয়া বাহিনী, লেলিয়ে দেয়া বাহিনী তারা গুলি করেছে এবং আমরা পত্র-পত্রিকায় যা দেখছি খুব পরিস্কারভাবে সাংবাদিক ভাইয়েরা বলেছেন যে, এই গুলিতে করেছে নারায়নগঞ্জের পুলিশ কনক, পত্রিকায় ছবি দিয়ে ছাপিয়ে দিয়েছে যে, এখানে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করেন ডিবির এসআই কনক। বলা হচ্ছে, এই এসআই কনকের চাইনিজ রাইফেল রাখার কোনো এখতিয়ার ছিলো না। তাহলে এই চাইনিজ রাইফেলটা আসলো কোত্থেকে? কোন আদেশ বলে সে গুলি করলো আমার ভাইকে। পুলিশকে কি সেই এখতিয়ার দেয়া হয়েছে যে, একজন মানুষ বিনা কারণে পুলিশ গুলি করে হত্যা করবে? সরকারকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে এই হত্যার জন্য দায়ী কে?।"
গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তার চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার আলোকচিত্রসহ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব। গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে নারায়নগঞ্জে গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মাহফুজুর রহমান কনকের হাতের রাইফেল দিয়ে গুলি করলে যুব দল কর্মী শাওন প্রধান নিহত হন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ''সরকার বলতে পারেন মামলায় কি হবে? মামলায় হয়, মামলায় খুবই হয়। আজকে দেখুন আপনাদের (পুলিশের আইজি) প্রধান আমেরিকায় গেছেন এবং শর্তসাপেক্ষে গেছেন, শর্ত মেনে যেতে হয়েছে। সেখানে তাকে (আইজি বেনজির আহমেদ) বলা হয়েছে যে, সুনির্দিষ্ট এলাকা জাতিসংঘের ক্যাম্পাসের বাইরে তুমি যেতে পারবে না। এটা লজ্জ্বা আমাদের জন্য, একটা স্বাধীন সার্বেভৌম দেশের জন্য কত বড় লজ্জ্বার কখা যে, আজকে পুলিশ প্রধানকে শর্তসাপেক্ষে ভিসা নিয়ে বিদেশে যেতে হচ্ছে। কেউ রক্ষা করতে পারে না। আজকের পৃথিবীতে যারাই অত্যচার করেছে, নির্যাতন করেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তাদের কেউই রক্ষা পায় নাই। কিন্তু এদের তো লজ্জ্বা-শরম বলতে কিছু নেই। মিথ্যা কথা বলে ওদের কোনো ঝুড়ি নাই, গোয়েবেলসকেও হার মানায় এরা।"
গত ১ সেপ্টেম্বর নারায়নগঞ্জে পুলিশের গুলিতে যুব দলের কর্মী শাওন প্রধানের হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিনের যৌথ উদ্যোগে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। এদের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে অংশ নেয়। ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে নেতারা বক্তব্য রাখেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, '' গত ১০/১২ দিন যাবত আমরা প্রত্যেকটা সমাবেশ ও কর্মসূচি অত্যন্তপূর্ণ। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, চাল-ডাল-তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করছিলাম। সেখানে ভোলাতে তারা(পুলিশ) দুই জনকে হত্যা করেছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত তারা তিনজনকে হত্যা করেছে এবং মামলায় আসামী সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সেই আগের কায়দায়, গায়েবী মামলার কায়দায় এবং এই মামলা দিয়ে হামলা করে, আহত করে পঙ্গু করে আবার তা্রা বিরোধী দলকে মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে চায় এবং মাঠে থেকে তারা একাই নির্বাচন করতে চায়।"
জনগন কি তাদেরকে (সরকার) একা নির্বাচন করতে দেবে কিনা বিএনপি মহাসচিব নেতা-কর্মীদের কাছে প্রশ্ন রাখলে তারা 'না' সূচক শ্লোগান দিতে থাকে।
তিনি বলেন, ''আমরা কী এই ভাইয়ের (শাওন প্রধান) হত্যার প্রতিশোধ নেবো না? আমরা কী আমাদের ভাইদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, নির্যাতন করছে তার প্রতিশোধ নেবো না? অবশ্যই আমরা আমাদের অধিকারকে রক্ষার জন্য, আমার ভাইয়ের হত্যা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আমরা কোনোভাবেই এই ভয়াবহ দানবীয় ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদী সরকারকে একতরফা নির্বাচন করতে দেবো না।"
মির্জা ফখরুল বলেন, ''এখনো সময় আছে, জনগনের কাছে ক্ষমা নিয়ে পদত্যাগ করে আপনারা নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। সংসদ বাতিল করুন.. নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে জনগনের কাছে গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এদেশের জনগন আপনাদেরকে কোনো দিনই ক্ষমা করবে না।"
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ''সরকার জানে, কোনো পরিস্থিতিতেই এই সরকার আর ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। সুতরাং হত্যা করো, হত্যা করো। এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে তাদেরকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে। আমি পরিস্কার বলতে চাই, আজকেও কিশোরগঞ্জের পাকুদিয়া থানায় মিছিল হয়েছিলো সেখানে গুলি করেছে, শতাধিক আহত হয়েছে। সারা বাংলাদেশে এভাবে আমাদের নেতারা গুলি খেতে শিখেছে, মার খেতে শিখেছে, রক্ত দিতে শিখেছে। ইনশাল্লাহ শেখ হাসিনা টিকে থাকার ক্ষমতা নাই, টিকে থাকতে পারবে না।"
স্থায়ী কমিটি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ''প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো হচ্ছে। পুলিশ বাহিনীর সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে দেশের জনগনকে রক্ষা করা, পুলিশ বাহিনীর সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের জনগনকে নিরাপত্তা দেয়া, যাদের দায়িত্ব হচ্ছে জনগনের সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার সুরক্ষা করা। সেই পুলিশ বাহিনীর একটি অংশকে তারা (সরকার) ব্যবহার করে সেই জনগনের ওপর প্রতিনিয়ত গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। আমি নিশ্চিত যে, বাংলাদেশের পুলিশের মধ্যে নিজেদের বিবেকের কাছে তারা এখন প্রশ্ন করছে। তাদের দিয়ে যে কাজ করানো হচ্ছে এটা শুধু অসাংবিধানিকই নয়, এটা মানুষের সাধারণ ধর্মীয় চিন্তার দিক থেকে তারা নিজেদের বিবেকের কাছে দায়ী থাকছে।"
মহানগর বিএনপি দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, আবদুস সালাম আজাদ, শ্যামা ওবায়েদ, কামারুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মহানগর দক্ষিনের ইশরাক হোসেন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ,ছাত্র দলের কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, নারায়নগঞ্জ জেলার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি বক্তব্য রাখেন।