খুলনায় বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে স্মরণকালের বৃহত্তম র্যালী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৪৯ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৫২ পিএম, ৯ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে খুলনায় স্মরণকালের বৃহত্তম র্যালী করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। বিএনপির মহানগর ও জেলার অর্ন্তগত সকল থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন এবং ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষক দল, শ্রমিক দলসহ সকল অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অন্তত ২০ হাজার কর্মী র্যালীতে অংশ নেন। দুপুরের পর থেকেই মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় খুলনা। মূল র্যালীটি যখন শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সে সময় এক প্রকার অচল হয়ে পড়ে নগরী। রাস্তার দুধারে দাঁড়ানো হাজারো জনতা, পথচারী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানরতরা করতালির মাধ্যমে মিছিলকে স্বাগত জানায়।
দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নেতৃবৃন্দ ঘোষণা দেন, নারায়নগঞ্জে যুবদল নেতা শাওনকে হত্যার মাধ্যমে সরকার তার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছে। এই ফ্যাসিস্ট, জালেম, লুটেরা, তাবেদার ও ভোট চোর সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত নেতাকর্মীরা আর ঘরে ফিরে যাবেনা।
বিকেল ৪টার দিকে কে ডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী মঞ্চে আনুষ্ঠনিকভাবে র্যালী পূর্ব সমাবেশের কাজ শুরু হয়। তবে দুপুর থেকেই এই স্থানসহ আশেপাশের সকল স্থান ছিল কার্যত পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য দ্বারা অবরুদ্ধ। দলীয় কার্যলয়ে যাওয়ার বিভিন্ন প্রবেশ পথ ছিল তাদের কড়া নজরদারি ও সতর্ক উপস্থিতি। তবে একের পর এক মিছিল আসতে থাকলে তা নেতাকর্মীদের দখলে চলে আসে।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহানগর বিএনপির সম্মানিত সদস্য রকিবুল ইসলাম বকুল। বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির আহবায়ক আমির এজাজ খান, নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আবু হোসেন বাবু। দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোঃ তারিকুল ইসলাম জহির। দোয়ায় গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি এবং ফ্যাসিবাদী শাসকের জুলম নির্যাতন থেকে মুক্তির জন্য রাব্বুল আলামিনের সাহায্য কামনা করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আজিজুল বারী হেলাল বলেন, প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বিএনপি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্ত এই খুলনায় গত কয়েকদিনে বিএনপির কর্মসূচিতে বারবার ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটেছে। সোনাডাঙ্গা, খালিশপুর, দিঘলিয়া, খানজাহান আলী থানায় বিএনপির কর্মীদের কুপিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। আজ নারায়ানগঞ্জে যুবদল নেতা শাওনকে হত্যা করে সরকারের বিদায় ঘন্টা বেজেছে। তিনি অবিলম্বে গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানান।
বিশেষ অতিথি রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, এ জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দেশের সকল সংকট ও দূর্বিপাকের কালে বিএনপি জনগনের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। ভোলায় নূরে আলম, আব্দুর রহমান এবং আজ নারায়ানগঞ্জে শাওন হত্যাকান্ডের তিব্র নিন্দা জানিয়ে বকুল বলেন, এই সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। পতন নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমার আর ঘরে ফিরে যাবোনা। তিনি বলেন, ব্যর্থ অযোগ্য লুটেরা সরকার দেশকে শ্রীলংকার পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্ত আমার চাই না দেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হোক। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে সরকার একটি নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুক। কিন্ত তা না করে যদি আবারও একটি মধ্যরাতের নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করা হয়, তবে বিএনপি সেই নির্বাচনে তো যাবেই না, এমনকি সেই নির্বাচন হতে দেবেনা। দেশনায়ক তারেক রহমানের বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যাবে কোন পথে ফয়সাল হবে রাজপথে। দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত আন্দোলনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়বে। সেই আগুণে শেখ হাসিনার ময়ুর সিংহাসন পুড়ে যাবে।
বিকেল ৫ টার দিকে থানার মোড় থেকে র্যালী শুরু হয়। র্যালীতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমানের বিশালাকৃতির পোট্রেট, জাতীয় ও দলীয় পতাকা, ফেস্টুন, ব্যানার, প্লাকার্ড বহন করা হয়। এ সময় সরকারের পতন দাবি করে নেতাকর্মীরা শ্লোগান দেন।