সরকার পতনের যুগপথ আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি-গণঅধিকার পরিষদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৩৮ পিএম, ৩ আগস্ট,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৪৭ পিএম, ১২ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
সরকার পতনের যুগপথ আন্দোলনে 'গণঅধিকার পরিষদ'কে পাশে পাবে বিএনপি।
আজ বুধবার (০৩ আগস্ট) সকালে রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদে সাথে দেড় ঘন্টা সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একথা জানান।
তিনি বলেন, ''আমরা আজকে গণঅধিকার পরিষদের সাথে আলোচনায় অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি, খুশি হয়েছি যে তারা আমাদের সঙ্গে সবগুলো বিষয়ে একইমত ধারণ করেন। বিশেষ করে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয় সেই ব্যাপারে একমত। আমরা এ বিষয়েও একমত হয়েছি যে, আর এই সরকারকে ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যায় না। কারণ এই সরকার অত্যন্ত সচুতরতার সঙ্গে এবং সচেতনভাবে বাংলাদেশের অর্জিত আমাদের যেসব অর্জন গুলো ছিলো আমাদের গণতন্ত্র, আমাদের বাক স্বাধীনতা, আমাদের কথা বলার স্বাধীনতা, সাম্য ও সামাজিক মূল্যবোধ সেই সঙ্গে ন্যায় বিচারের অধিকার –এগুলো সব ধবংস করে দিয়েছে। এই কারণে এই সরকারকে সরানোর জন্য জনগনকে সঙ্গে নিয়ে একটা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। আমরা একমত হয়েছি এই আন্দোলন আমরা যুগপত করব।"
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রভৃতি বিষয় গণঅধিকারের সাথে ঐক্যমত হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ''সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি জনগনের পার্লামেন্ট ও একটি সরকার গঠন করা যে সরকার সত্যিকার অর্থে জনগনের প্রতিনিধিত্ব করবে। তারপরে আমরা রাষ্ট্র মেরামতের জন্য সবাইকে নিয়ে আমরা একটি জাতীয় সরকার গঠন করব। এ বিষয়টি আলোচনা মধ্যে আছে। যে বিষয়গুলো আমরা মনে করি পরিবর্তন হওয়া দরকার, সংস্কার হওয়া দরকার মেরামত করার জন্য সে গুলো মেরামত করার জন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহন করব।"
ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ''আামি আপনাদেরকে জানাতে চাই, খুব ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে এবং আমরা অনেক ব্যাপারে দেখলাম যে, একমত। এখানকার দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর আমরা বুঝেছি যে, আমরা একই পথে, একই চিন্তায় আমরা আছি। ওয়ে অন দ্যা সেম পেইজ যেটা ইংরেজীতে বলে।আমাদের খুব বেশি ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই –এটা একটা খুশির খবর সব বিরোধী দলের জন্য এবং যারা বাংলাদেশে একটা পরিবর্তনের দিকে, পরিবর্তন চায় তাদের জন্য একটা সুখবর।"
তিনি বলেন, "আমরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই এবং আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয় আমরা সেটা মনে করি না। অনেক দলের সাথে আলোচনা হচ্ছে, আরো হবে। একটা জাতীয় ঐক্য এই ব্যাপারে তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমাদের দুই দলের অবস্থান খুব কাছাকাছি এবং আমরা একসঙ্গে কাজ করব এই স্বৈরাচার, দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্ট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে। যারা দেশে গণতন্ত্র চায় তারা সবাই একই ব্যানারে একসঙ্গে কাজ করব।"
নুরুল হক নূর বলেন, ''দেশের চলমান সংকটে রাজনৈতিক দলগুলোর করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চলমান সংকটকে যেভাবে আমরা দেখি তাতে বিএনপির সাথে আমাদের খুব একটা পার্থক্য নাই যে সংকট থেকে উত্তরণের আমাদের করনীয় নিয়ে। আজকের আলোচনায় আমাদের ১০টা বিষয় ছিল সেই ১০টা বিষয়ে আমরা একমত পোষন করেছি। ফ্যাসিবাদী সরকারকে হটাতে যুগপত কিংবা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে বিএনপির দাবির সাথে আমরাও একমত। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা, সংসদ বিলুপ্ত করা, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিকে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা এবং এই অন্তবর্তীকালীন সরকার একটা গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে বর্তমান নির্বাচন কমিশন পূনর্গঠন এবং ইভিএম বাতিল করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহনের ব্যবস্থা।"
'বাংলাদেশে প্রায় ৩৬ লক্ষ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মামলা দেয়া হয়েছে। আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ অনেক ধর্মীয় নেতা বরণ্যে ব্যক্তিদেরকে মিথ্যা অভিযোগে গ্র্রেফতার করে রাখা হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দিদের মুক্তি এবং ধর্মীয় নেতাদেন নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।' বলেন তিনি।
গত বছরের ২৬ অক্টোবর রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরকে সদস্য সচিব করে নতুন রাজনৈতিক দল 'গণঅধিকার পরিষদ' এর আত্মপ্রকাশ ঘটে।
পুরানা পল্টনের প্রতিম-জামান টাওয়ারে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির এই সংলাপ হয়। সকাল ১১টায় বিএনপি মহাসচিব ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ে আসেন।
প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মিডিয়া সেলের সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন।
সংলাপে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন সদস্য সচিব নুরুল হক নূর, যুগ্ম আহ্বায়ক মিয়া মশিউজ্জামান, হাবিবুর রহমান, রাশেদ খান, ফারুক হাসান ও জিসান মহসিন।
সরকার বিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম গড়তে তুলতে বিএনপি গত ২৪ মে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে। এই পর্যন্ত (আজকেসহ) ২২ টি দলের সাথে সংলাপ শেষ করল তারা।
এগুলো হচ্ছে : আসম আবদুর রবের জেএসডি, মোস্তফা মোহসিন মন্টুর গণফোরাম, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, সাইফুল হকের বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন।
২০ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে বিএনপি যাদের সাথে এই পর্যন্ত সংলাপ করেছে সেগুলো হলো : জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি(এলডিপি), ইসলামী ঐক্যজোট, কল্যাণ পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি(এনপিপি), লেবার পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি(জাগপা), জাতীয় দল, মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, সাম্যবাদী দল, ডেমোক্রেটিক দল(ডিএল), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি(এনডিপি), ইসলামিক পার্টি, পিপলস লীগ, ন্যাপ-ভাসানী ও বাংলাদেশ ন্যাপ।