ইভিএম ভোট ডাকাতির মেশিন : ড. খন্দকার মোশাররফ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৮ পিএম, ৩ আগস্ট,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৩৫ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, নির্বাচন কমিশন সংলাপের নামে নাটক করেছে। আমরাসহ আরো কয়েকটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নেয়নি। তিনি বলেন, সংলাপে অংশ নেয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমের বিপরীতে মত দিয়েছে। আমরা তো চাই না। সুতরাং এটা তো এখানেই মীমাংসিত হওয়া উচিৎ।
তিনি বলেন, যে দেশের মানুষ নিজের হাতে ভোট দিতে পারে না। তারা কিভাবে মেশিনে ভোট দিবে? এই ব্যবস্থা তো বিশ্বে বাতিল করা হয়েছে। কারণ এটা মানুষের তৈরি। সেখানে পেপার ট্রেইল নাই। সুতরাং এটা দূরভিসন্ধিমূলক। এটা ভোট ডাকাতির মেশিন।
আজ বুধবার (০৩ আগস্ট) দুপুরে এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘সরকার ইভিএমে নির্বাচন করতে চায় কেন?’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম।
সংগঠনের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে ও সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বিলকিস ইসলাম, আনোয়ার হোসেন বুলু, শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, ইয়ুথ ফোরামের উপদেষ্টা মো: শুকুর মাহমুদ ববি, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বিপ্লব, সহ-সভাপতি আজিজুল হাই সোহাগ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভোটকেন্দ্রে গোপন কক্ষে কারা থাকে তারা তো সরকারের লোক। তারাই তো ইভিএমের বাটনে চাপ দিচ্ছে। তাছাড়া সেটা বাইরে থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রিসাইডিং অফিসারকে ২৫ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ফলে তিনি তার ইচ্ছে মতো তার থেকেও বেশি ভোট কাস্টিং করে। এটাকে তো ভোট বলে না। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে তারা আবারো নতুন পদ্ধতিতে ডাকাতি করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে পারে। কিন্তু এটা হতে দেয়া যায় না। কারণ যারা দিনের ভোট রাতেই ডাকাতি করতে পারে তারা কি না করতে পারে?
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর ভোট ডাকাতির সুযোগ দেয়া হবে না। লাখো শহীদের প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সেই লক্ষ্য ও চেতনা আজ ভুলুণ্ঠিত।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে। জনগণের প্রতি তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা মেগা উন্নয়নের নামে মেগা লুট করে দেশের রিজার্ভ শূন্য করেছে। তারা বিদ্যুত খাতের জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছে। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। কোনো বিদ্যুত উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে টাকা লুট করছে। তারা সবাই সরকারের ঘনিষ্ঠজন। আজকে দেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান না করে বিদেশ থেকে তেল গ্যাস ও বিদ্যুৎ আমদানি করছে। এভাবে দেশকে আমদানি নির্ভর করে দেশের রিজার্ভ শূন্য করেছে। এখন তারা রিজার্ভের হিসাব নিয়েও মিথ্যাচার করছে। আইএমএফের সাথে তাদের হিসেব মিলছে না। সরকার এখন আমদানি ব্যয় মেটাতে পারছে না।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন তিনি নাকি লোডশেডিং জাদুঘরে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আজকে ছয় থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এখন তিনি বিএনপিকে হারিকেন দেয়ার কথা বলছে। আরে সেটা করতেও চার থেকে পাঁচ কোটি হারিকেন কিনতে হবে সেই টাকাও তো তাদের নেই। আজকে সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রে সঙ্কট চলছে। শ্রীলঙ্কার যে সঙ্কট একই সঙ্কট বাংলাদেশেও। এটা তো বেশিদিন লুকিয়ে রাখা যায় না। সময় আসছে বাংলাদেশে সেই অবস্থা দেখবেন।
বিএনপির এই নীতি নির্ধারক বলেন, এখন শুধু রাস্তায় মানুষের ঢল নামা বাকি। আমরা রাস্তায় সঙ্কটের সমাধান করবো ইনশাআল্লাহ। সেই ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। ইয়াহিয়া খানের মতো শাসক টিকতে পারেনি। সুতরাং কারফিউ বা অন্য কোনোভাবেই ক্ষমতা রক্ষা করতে পারবেন না। রাস্তায় নামলে তদের পতন হবেই হবে।
ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ইভিএম কোনো কাজের জিনিস না। বিগত দুই নির্বাচন তারা ডাকাতি করেছে। সরকার এবার দিনের ভোট আগের রাতে ডাকাতি করতে পারবে না। আর তারা তো ক্ষমতা ছাড়তে পারছে না। কারণ তারা বাঘের পিঠে সওয়ার হয়েছে। তারা প্রশাসনকে গিলে ফেলেছে। লড়াই ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, বিশ্বের বহু দেশ ইভিএম বাদ দিয়েছে। ইভিএমের জারিজুরি চলবে না। কিন্তু সরকার তো সে পথেই যাচ্ছে। সেজন্য লড়াইয়ে যেতে হবে। এই আন্দোলন বিএনপি ছাড়া সম্ভব না। আজকে আওয়ামী লীগকে মানুষ থুথু দিচ্ছে। কোনো মানুষ তাদেরকে দেখতে পারে না। ফেয়ার নির্বাচন হলে তারা টিকতে পারবে না। পুলিশ ছাড়া টিকতে পারবে না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজপথ দখল হয়ে যাবে।