রাস্তা দখল করতে হবে, সবাই তৈরি হয়ে যান : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৪১ পিএম, ২ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:১৪ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
রাজপথে নামার প্রস্তুতির ডাক দি্য়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি বিএনপি মহাসচিব এই আহবান জানান।
তিনি বলেন, ‘‘আপনারা রাস্তা দখল করতে রাজি আছেন? রাস্তায় না নামলে কিছু হবে, রাস্তা দখল করতে হবে। আপনারা সবাই রেডি হয়ে যান, তৈরি হয়ে যান।”
‘‘ আমরা এই ফ্যাসিস্ট কর্তৃত্ববাদী সরকারকে টেনে হিচড়ে নামাবো এবং আমরা জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করব-এটা হোক আজকে আমাদের শপথ।”
এই সময়ে কর্মীরা ‘হরতাল, হরতাল’ শ্লোগান দিতে থাকলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ হরতাল দিও। আগে রাস্তা দখল করো।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আর আমাদের কোনো সময় দেয়া চলবে না। এখন আমাদের দাবি একটাই- একদফা এক দাবি হাসিনা তুমি করে যাবে।”
‘‘ আসুন সেই এক দফা দাবি আদায় করার লক্ষ্যে, জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে, জনগনের প্রতিনিধিদেরকে পার্লামেন্টে পাঠানোর লক্ষ্যে, আমাদের গণতন্ত্রের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি আমাদেরকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এখন সুদূর ৮ হাজার মাইল দূর থেকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আমরা বিশ্বাস করি, তার সফল নেতৃত্বে এদেশের মানুষের আশা-আকাংখা প্রতিফলিত হবে এবং দেশকে অবশ্যই অবশ্যই মুক্ত করতে সক্ষম হবো।”
আগামী বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিটি অঙ্গসংগঠন বিক্ষোভ করবে জানিয়ে পরবর্তিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান ফখরুল।
‘জনগনই হারিকেন তুলে দেবে’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘অনেক কথা বলেন। বলেছেন যে, বিএনপির নেতাদের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেবেন।”
‘‘হারিকেন ধরানোর সময় শেষ আপনাদের। হারিকেন ধরানোর টাইম পাবেন না, পেছনের রাস্তায় দিয়ে যাওয়ারও সময় পাবেন না।এরকম বহু ঘটনা আছে। শ্রীলংকায় বাটোয়া রাজাপাকসে পালাতে গিয়েও সহজে পালাতে পারছিলো না, আর প্রধানমন্ত্রী তো পালাতেই পারেনি, মালদ্বীপে গিয়ে বসে আছে। পালাতে চাইলেও জনগন পালাতে দেয় না-সেই কথাগুলো মনে রাখবেন সেই কথাগুলো স্মরণ রাখবেন।”
তিনি বলেন, ‘‘গত ১৫ বছরে আপনারা এই বাংলাদেশকে একটা শ্মসানে পরিণত করেছেন, গত ১৫ বছরে এই বাংলাদেশকে একটা পুরোপুরি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। কোথায় সাফল্য আপনাদের? এই মেট্রোরেল দেখিয়ে বলেন, পদ্মাসেতু দেখিয়ে বলেন-এখানে নাকী ওদের সব সাফল্য।”
‘‘ আর সবচেয়ে বেশি মানুষ যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে, আমাদের মানুষ দুই বেলা খেতে পারে না, সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ তারা আজকে হাহাকার করছে।”
ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে ভোলায় পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল রহিম নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী এতে অংশ নেন।
ভোলার ঘটনা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ভোলায় ৩১ তারিখে আমাদের এক সহকর্মী খুন হয়ে গেছে। যে ভোলা বঙ্গোপসাগরের উপকুলে এক শান্তিপ্রিয় একটি জেলা। আমরা কখনো শুনেনি সেখানে রক্ত ঝরতে হয়েছে পুলিশের গুলিতে। সেই ভোলায় সম্পূর্ণ বিনা কারণে বিনা উস্কানিতে জনগনের দাবি নিয়ে সমাবেশ করছিলো সেখানে অতর্কিতে পুলিশ আক্রমন করে গুলি করে আবদুল রহিমকে হত্যা করে। গতকাল আমি গিয়েছিলাম আরেকজন সহকর্মীকে ভোলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরুল আলমকে হাসপাতালে দেখতে আইসিইউতে জীবন মৃত্যুর সঙ্গে সে লড়াই করছে।”
‘‘ রহিম মা কালকে যখন মর্গ থেকে তার লাশ নিতে যায় সেখানে গিয়ে চিতকার করে বুক ফাটতে ফাটতে বলছেন, আমার ছেলেকে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও। বাংলাদেশে এটা নতুন নয়। আমরা ১৪/১৫ বছরে সেটাই দেখছি। গুম হয়ে যাওয়া ইলিয়াস আলীর মেয়ে এখনো দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে কখন তার বাবার বাসায় ফিরে আসবে, আমাদের ছাত্র দলের ছেলে-মেয়েরা এখনো বলে আমি আবার বাবার সঙ্গে ঈদ করতে চাই। ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা, আমাদের নেতা-কর্মীরা হাজিরা দিতে দিতে হয়রান হয়ে গেছে। এই হচ্ছে বাংলাদেশের চেহারা।”
তিনি বলেন, ‘‘আজকে দেখেন পুলিশ বাহিনী শুধু আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখার জন্য রাষ্ট্র যন্ত্রকে সম্পূর্ণ ব্যবহার করে তারা একতরফা হত্যা-নির্যাতন করে চলেছে। আমরা এই বাংলাদেশের মানুষ এভাবে নিরব হয়ে বসে থাকতে পারি না। আমাদের অতীত ঐতিহ্য স্মরণ করে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যেভাবে নব্বইতে গর্জে উঠেছিলো মানুষ, ৫২ সালে সালাম-বরকতের মধ্য দিয়ে গর্জে উঠেছিলো মানুষ, ৬৯‘ এর আসাদের শাহাতাতের মধ্য দিয়ে গর্জে উঠেছিলো মানুষ আজকেও শাহাদাতের মধ্য দিয়ে আমাদের সেইভাবে গর্জে উঠতে হবে।”
‘‘ আমাদেরকে দখল করে নিতে হবে রাস্তা-ঘাট, আমাদেরকে দখল করে নিতে হবে এই ক্ষমতাসীন যারা আজকে জোর করে রাষ্ট্র দখল করে রেখেছে তাদের তখতে-তাউস থেকে নামিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘এই সমাবেশ থেকে আমি আহবান জানাতে চাই, আমাদের টার্গেট এই স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ, লুটেরা সরকারকে হটাতে হবে, আমাদের টার্গেট আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পূর্ণ মুক্ত করতে হবে, আমাদের টার্গেট আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে কিছু হবে। নির্বাচন তো দূরের কথা আগামীতে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে আরো অনেক সংকটের মোকাবিলা করবে।”
‘‘ এখনো সময় সরকারকে বলব, পদত্যাগ করুন, সংসদ বাতিল করুন, নির্দলীয় সরকার গঠন করে আপনারা কেটে পড়ুন। তাই না হলে শ্রীলংকার মতো জনগণ রাস্তায় নেমে আপনাদের বিদায় করবে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ‘‘ ভোলার আবদুল রহিম দখলদার সরকারের গুলিতে মৃত্যবরণ করেছে। রহিম তুমি বিজয়ের চেতনা আগামীদিনে, রহিম তুমি মুক্তির চেতনা আগামীদিনের, রহিম তুমি গণতন্ত্রের চেতনা আগামী দিনের, রহিম তুমি স্বাধীনতার চেতনা আগামী দিনের। তোমার মৃত্যু আমরা বৃথা যেতে দেবো।”
‘‘ রহিমের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের মালিকানা ফিরে পাওয়ার আরেকটা শপথ আমাদের নিতে হবে। এটা বিএনপির যুদ্ধ নয়, এটা বাংলাদেশের জনগণের যুদ্ধ। এই যুদ্ধ আমাদের করতে হবে।”
মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির শামসুজ্জামান দুদু, আবদুস সালাম, আবদুস সালাম আজাদ, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মীর সরফত আলী সপু, সাইফুল আলম নিরব, ইকবাল হোসেন শ্যামল, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, ইউসুফ মৃধা, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, মহিলা দলের নিলোফার চৌধুরী মনি, হেলেন জেরিন খান, ওলামা দলের শাহ নেসারুল হক, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মতস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, ছাত্র দলের কাজী রওনা্কুল ইসলাম শ্রাবন ও সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।