সরকার দেশের গোটা সড়ক ব্যবস্থাকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:২৯ পিএম, ৩০ জুলাই,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৩০ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
সরকার দেশের গোটা সড়ক ব্যবস্থাকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় ট্রেনের ধাক্কায় দুর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোবাসের ১১ জন শিক্ষার্থীর নির্মমভাবে নিহত হওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ''আমাদের সেতু ও সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহের তিনি চমতকার সুট-কোট পড়ে খুব সুন্দর করে বলেন যে, আওয়ামী লীগ যেটা করছে সেটা অতীতে কখনো হয় নাই। আপনি তো আজকে গোটা সড়ক ব্যবস্থাকে একটা নৈরাজ্যের মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে। গতকালই দেখেছেন যে, আমাদের ছাত্ররা, এগারো জন ছাত্র তারা মাইক্রোবাসে করে যাচ্ছিল ট্রেন এসে মেরে দিয়ে তাদের সবাইকে হত্যা করেছে। এরকম অসংখ্য নজির প্রতিদিন আমরা দেখতে পাচ্ছি।"
মির্জা ফখরুল বলেন, ''আজকে এই সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে এই দেশের যে স্বপ্ন সেই স্বপ্ন ধবংস হয়ে যাবে। আমরা যারা এদেশের মানুষ যারা আজকে ৫০ বছর পরে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী পালন করি, আমরা আশা করেছিলাম গণতান্ত্রিক দেশ পাবো, আমরা আশা করেছিলাম যে এখানে একটা অর্খনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে। কিন্তু সব কিছুকে এই আওয়ামী লীগ তাদের চুরি, তাদের ডাকাতি, তাদের লোভ, সেই লোভের কারণে ধবংস করে দিয়েছে। এই কর্তৃত্বাবাদী শাসন গণতন্ত্রকে ধবংস করে দিয়েছে, বিচার ব্যবস্থাকে ধবংস করেছে, ব্যাংকিং ব্যবস্থা একদম রসাতলে চলে গেছে। এর থেকে দেশকে আমাদের টেনে তুলতে হবে। বিএনপি হচ্ছে- সেই দল যে দল জনগনের দল, বিএনপি হচ্ছে- সেই দল যে দল জনগনকে স্বপ্ন দেখায়। নিসন্দেহে জনগনের আন্দোলনে জয়লাভ করে যদি আমরা সরকার গঠন করতে পারি তাহলে অবশ্যই এসব সমস্যার সমাধান করব এবং এই দেশকে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগনের রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করব।"
দলের নেতা-কর্মী প্রতি আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ''আমাদেরকে আজ শপথ নিতে হবে যে আমরা সবাই এই ভয়াবহ দানবীয় ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের জন্য এক দফা, এক দাবি.... । বাংলা সাহিত্যে একটা খনার বচন আছে- 'রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট, প্রজা পায় কষ্ট'। এই যে আমরা কষ্ট পাচ্ছি এর জন্য দায়ী হচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার, এর দায়ী হচ্ছে এই সরকার।"
তিনি বলেন, 'হীরক রাজার দেশে' ছবিটি দেখেছেন। সেখানে কী বলেছে? ওই অত্যাচারি ফ্যাসিস্ট সরকারকে নামাতে হলে কী করতে হবে-'দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান'। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে সবাই দড়ি ধরে মারি টান,মারি ধাক্কা, শেখ হাসিনার পতন হবে, এই সরকারের পতন হবে।"
বিদ্যুতের লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে মহানগর দক্ষিন বিএনপিরি উদ্যোগে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদ জানাতে দক্ষিন মহানগনের নারী কর্মীরা হারিকেন নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ''এই বিদ্যুতে যখন তারা শুরু করল বিদ্যুত উতপাদন বাড়াবে এবং এখন যা হিসাব দেখায় তাতে দেখা যায় যে, প্রয়োজনের অনেক বেশি বিদ্যুত উতপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশ এখন তৈরি করেছে। কিন্তু আজকে লোড শেডিং কেনো? কারণ হচ্ছে-দুর্নীতি-চুরি, মেগা চুরি।"
তিনি বলেন, ''ক্যাপাসিটি চার্জ। তারা(সরকার) এই কুইক রেন্টার পাওয়া প্ল্যান্ট ও অন্যান্য বিদ্যুত প্ল্যাটের চুক্তি করেছে-যে চুক্তিতে বলা হচ্ছে যে, বিদ্যুত উতপাদন না করলেও তাদেরকে টাকা দিতে হবে। সেই টাকার হিসাব শুনেন। সামিট গ্রুপ- এটা আজিজ খানে, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খানের বড় ভাই তিনি- এই গ্রুপ ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ৯ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। এগ্রিকো ইন্টার ন্যাশনাল ৬ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা, এরদা পাওয়ার হোল্ডিং ৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ ৪ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা, কেপিসিএল ৩ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, বাংলাক্যাট ৩ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা, ওরিয়ন গ্রুপ ৩ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা- এরকম ১০টা গ্রুপ হাজার হাজার কোটি টাকা আপনাদের(জনগন) পকেট থেকে বের করে নিয়ে গেছে।"
তিনি আরোও বলেন, '' শুধু তাই না, আজকের পত্রিকায় খবর আছে যা এলার্মিং। আমাদের সমুদ্র থেকে বা আমাদের দেশের মাটি থেকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য আমরা একটা সারজার্চ দেই, পয়সা দেই। তা দিয়ে একটা ফান্ড তৈরি করেছিলো। সেটার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা এই সরকার নিয়ে গিয়ে গ্যাস কেনার জন্য নিয়ে গেছে। এটা আরেক বাটপারি, আরেকটা ডাকাতি। একদিকে বিদ্যুত উতপাদনের নাম করে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে দেশের বাইরে। আরেকদিকে জ্বালানি হিসেবে এলএনজি-এলপিজি গ্যাস আমদানি করছে। কারা আমদানি করেছে? তারা আপনারা চিনেন। এরা সব আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ীরা। এভাবে তারা দেশের অর্থনীতিকে ধবংস করে দিচ্ছে।"
মির্জা ফখরুল বলেন, '' দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুরো অবকাঠামো তৈরির আগে শিক্ষার্থী ভর্তির কাজ শুরু হয়ে গেছে। আপনারা দেখেছেন চাঁদপুরের যে বিশ্ববিদ্যালয় (বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়) এর জন্য ভূমি অধিগ্রহনে দুর্নীতি হয়েছে। এই জমি অধিগ্রহনের বিষয়ে সেখানকার ডিসি নিজে চিঠি দিয়েছিলেন শিক্ষা ও ভূমি মন্ত্রণালয়ে যে, শিক্ষা মন্ত্রীর আত্বীয়-স্বজনরা তারা ৩৬৪ কোটি টাকা লুট করে গেছে। এটা সব খানে সর্বক্ষেত্রে। আজকে তারা চুরি-ডাকাতি-রাহাজানির সব কিছুর সঙ্গে জড়িত। তাদের একমাত্র লক্ষ্য যে, বাংলাদেশের মাটিতে একটা তারা পোঁড়ামাটির নীতি গ্রহন করেছে- সব কিছু তারা এখানে ধবংস করে দেবে।"
'তারা(সরকার) অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের নামে একটা ভাওতাবাজী জনগনের সামনে, বিশ্বের সামনে তুলে ধরে। আবার তারা কি বলে? উন্নয়নের রোল মডেল, উন্নয়নের মিথ। বিশ্বকে ভুল বুঝাতে থাকে যে, মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে। চতুর্দিকে টানেল, চ্যানেল, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল –এসব দেখাচ্ছে, এতে দেশের কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা অর্থনীতিবিদরা বুঝেন।' –অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-যুব সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, মহানগর দক্ষিণের নেতা ইশরাক হোসেন, তানভীর আহমেদ রবিন, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের মামুন হাসান, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করিম মজুমদার, মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন প্রমুখ।