মিথ্যা বলা আওয়ামী লীগের ডিএনএতে মিশে গেছে : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৭ পিএম, ১২ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০২:২৬ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাসান মাহমুদের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অষ্ট্রেলিয়াতে নাকি ১০ ঘণ্টা বা কোথাও কোথাও ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। অষ্ট্রেলিয়া থেকে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মাইল দূরে বাংলাদেশের এই মন্ত্রী এই উদ্ভট খবরটি পেলেন কী করে?
তিনি বলেন, সত্যি বিস্ময়কর যে, এই অবৈধ আওয়ামী সরকার বাংলাদেশকে ‘আবোল-তাবোলের’ দেশ বানাতে চাচ্ছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে। আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের কথাবার্তা শুনে মনে হয়, এরা জন্মগতভাবেই মিথ্যেবাদী একটি রাজনৈতিক দল। অসত্য কথা, মিথ্যাচার, অপবাদ, কুরুচিপূর্ণ কথার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা হলে সেখানে আওয়ামী লীগ চ্যাম্পিয়ান হবে।
আজ মঙ্গলবার (১২ জুলাই) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, একটি উন্নত গণতান্ত্রিক সুপরিচিত দেশ অষ্ট্রেলিয়া। অষ্ট্রেলিয়ায় বিদ্যুৎ কত ঘণ্টা থাকে না থাকে এটা বিশ্ববাসী জানে। আওয়ামী মন্ত্রীরা এ ধরনের টাটকা মিথ্যা কথা বলছে শুধুমাত্র বাংলাদেশের জনগণকে প্রতারণা করার জন্য। বর্তমান ভয়াবহ লোডশেডিংকে জায়েজ করার জন্য হরেক কিসিমের প্রতারণামূলক কথাবার্তা বলছেন আওয়ামী মন্ত্রীরা।
তিনি বলেন, জনগণের সমর্থন হারিয়ে অবৈধ আওয়ামী সরকার হিংসা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, হরিলুট, করোনাকালে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ, রেমিট্যান্স প্রবাহে বিপজ্জনক ধস, বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ সংকট, নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধি, আমদানি রফতানিতে হাজার হাজার কোটি ডলারের ভারসাম্যহীনতার মাধ্যমে আওয়ামী সরকার যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে সেজন্য দায়ী হচ্ছে তাদের নিজস্ব স্বার্থসর্বস্বতার উর্ধ্বে উঠতে না পারা। তাই মিথ্যা বলা এখন আওয়ামী লীগের ডিএনএতে মিশে গেছে। তবে এই কারণে দেশে অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক পরিণতি কী হবে তা বলা মুশকিল। গুম, খুন, ক্রসফায়ার, কণ্ঠরোধসহ গণতন্ত্রহীনতায় তারা মিথ্যার যে প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করেছে তাতে উৎকৃষ্ট রুচিশীলতা বিদায় নিয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে অবস্থা বিদ্যমান, শ্রীলঙ্কাতেও প্রথমে শুরু হয়েছিল বিদ্যুৎ সংকট, তারপর সেখানে কী ঘটেছে দেশবাসী তা জানেন। বাংলাদেশেও উন্নয়নের নামে হরিলুট করে দেশ থেকে লক্ষ-লক্ষ কোটি টাকা পাচার করে দেশকে ফোঁকলা করে দেয়া হয়েছে। নজিরবিহীনভাবে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে দিশেহারা মানুষ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম বাড়ানো হচ্ছে পাল্লা দিয়ে। বিদ্যুতের জন্য যে জ্বালানির প্রয়োজন সেটি একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, উৎপাদনের রাজনীতি না করে সরকার আমদানিমুখি হলে এই অবস্থায় হয়। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্যাস উত্তোলন না করেও তারা আমদানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। এখন কয়লা, গ্যাসসহ জ্বালানি সংকটে দেশে বিদ্যুৎ-সংকট ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
রিজভী বলেন, শ্রীলঙ্কায় একটি পরিবার ক্ষমতায় থেকে কিভাবে উন্নয়নের নামে দেশটিকে বিপজ্জনক খাদের কিনারে ঠেলে দিয়েছিল, এখন তাদেরকে প্রাসাদ ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। বাংলাদেশেও বেশ কয়েকবছর ধরে কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্ষমতায় রয়েছে যা মূলত একটি পরিবারের আধিপত্যই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। বিশেষ করে গত কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ কোনো অংশগ্রহণ করতে পারেনি।
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের সবকিছু লুটপাট করে দেশের সব টাকা সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিদেশী ব্যাংকে পাচার করার পর সরকারপ্রধান এখন জনগণকে সঞ্চয়ী হওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। এসব করে প্রতিনিয়ত তারা লোক হাসানোর পাত্র হচ্ছেন। এরা ক্ষমতায় থাকলে আগামী নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নিয়েও দেশবাসী শঙ্কিত। ভবিষ্যত নির্বাচনেও একতরফা নির্বাচন করবে সেজন্য তারা পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন চালাবে, তার আলামত ফুটে উঠছে। কিন্তু এবার তারা সফল হবে না।
তিনি বলেন, এবারের ঈদে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে দেশবাসীকে। সড়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মাঝে-মধ্যে মিডিয়ার সামনে এসে বিএনপিকে নিয়ে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন। কিন্তু ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ঈদের প্রাক্কালে ১০০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা গুনতে হয়েছে জনগণকে। সড়কে দুর্ভোগের সীমা ছিল না। ৫ ঘণ্টার পথ ৩০-৩২ ঘণ্টায়ও শেষ হয়নি। যাত্রীদেরকে দিনরাত কাটাতে হয়েছে সড়ক-মহাসড়কে।
এ সময় তিনি আরো বলেন, মন্ত্রীরা বলেছেন মহাসড়কে কোন যানজট নেই। অথচ অনেক মানুষকে ঈদ করতে হয়েছে রাস্তাতেই, কাউকে ঈদের দিন দুপুরে বাড়িতে পৌঁছতে হয়েছে। আওয়ামী নেতাদের মস্তিষ্ক কোষ থেকে সত্য হারিয়ে গেছে। ঘরমুখো মানুষকে ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে আর সেইসাথে সড়কে ছিল মৃত্যুর মিছিল। এর জন্য দায়ী আওয়ামী প্রশাসন ও সড়ক মন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম, সদস্য সচিব হাজী মুজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।