লাকসামে যুবদল নেতা সফিউল্লাহকে হত্যার উদ্যেশ্যে কুপিয়ে জখম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২৯ পিএম, ১১ জুলাই,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৫৫ পিএম, ১৪ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
লাকসাম পৌরসভা যুবদলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ও পৌরসভাধীন ৪নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি সফিউল্লাহকে হত্যার উদ্যেশ্যে এলোপাতারী কুপিয়ে এবং পিটিয়ে মারাত্বক জখম করে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের একটি সশস্ত্র গ্রুপ। এ অভিযোগ করেছেন সফিউল্লাহর ছোট ভাই রায়হান ও তার পরিবারের সদস্যরা। রায়হানের ভাষ্যমতে এই ঘটনার পর রায়হান লাকসাম উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও লাকসাম পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত আলীকে বিষয়টি অবহিত করেছেন।
ভাইস চেয়ারম্যান তখন আহত সফিউল্লাহর ছোট ভাই রায়হানকে বলেন, "বিষয়টি আমি অবগত নই, আমি কিছুই জানি না, কি হয়েছে আমি জেনে তারপর জানাবো"
সফিউল্লাহর ছোট ভাই রায়হান এবং কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা যায় গত ৯ জুলাই (শনিবার) দুপুরে নিজের খামারে পালিত দুটি গরু ও একটি ছাগল বিক্রি করতে লাকসাম দৌলতগঞ্জ গরু বাজারে যান সফিউল্লাহ। গরু ছাগল বিক্রি শেষে তিন লক্ষ বিশ হাজার টাকা নিয়ে গরু বাজারের পাশেই অবস্থিত তার বাড়ীর দিকে রওয়ানা হন সফিউল্লাহ। এসময় যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে তাকে এলোপাতারী কুপিয়ে এবং পিটিয়ে মারাত্বক জখম করে। গুরুতর আহত অবস্থায় সফিউল্লাহকে প্রথমেই ওই গরুবাজারের পাশে জেনারেল হসপিটালে ভর্তি করা হয়। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, সফিউল্লাহকে সেখানেও চিকিৎসা নিতে দেয়নি তার উপর হামলাকারীরা।
পরবর্তিতে গুরুতর আহত অবস্থায় সফিউল্লাহকে কুমিল্লা কুচাইতলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সফিউল্লাহর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার পা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন অংশে কোপের দাগ। পিটিয়ে থেতলে দেয়া হয়েছে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ।পরিবারের সদস্যরা তার পাশে বসে কাঁদছে। হামলার সময় তার গায়ে থাকা রক্তমাখা জামা দেখিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে তার ছেলে মেয়েরা। এসময় তার স্ত্রী বলেন "আমার স্বামীকে হত্যার উদ্যেশ্যেই এভাবে কোপানো হয়েছে, গরু বিক্রির টাকা সহ প্রায় ৪ লক্ষ টাকা এবং তার দুটি মোবাইলও নিয়ে গেছে তারা। আমরা এমন নারকীয় তান্ডবের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই"।
এ বিষয়ে জানতে লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফোন দিলে "কিশোর কুমার দে" নামের একজন সাবইনেসপেক্টর ফোন রিসিভ করেন, তিনি বলেন "এবিষয়ে আমরা কিছুই জানিনা এবং এ বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগও করেনি" বাজার ইজারাদার কাউছার আলম বলেন, "মারামারী হয়েছে এটা সত্য, তবে আমি যতটুকু জেনেছি তাদের মধ্যে টাকা পয়সার লেনদেন নিয়ে মারামারি হয়েছে। আর মারামারীটা গরু বাজারে হয়নি, হয়েছে বাজার থেকে একটু দুরে লাকসাম ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে" কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতে ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা আশপাশের বিল্ডিগুলোতে স্থাপিত সিসি ক্যামরার ফুটেজ নিতে পারলেই ঘটনার রহস্য সহজে উম্মোচন করা যাবে এবং কারা এই নারকীয় তান্ডবের সাথে জড়িত তাদেরও খুঁজে বের করা সহজ হবে।
যুবদল নেতা সফিউল্লাহর উপর হামলার খবর পেয়ে পরদিন রবিবার (ঈদের দিন) বিকালে যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি, কুমিল্লা দক্ষিন জেলা যুবদলের সভাপতি এবং বর্তমান কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান। এসময় ভিপি ওয়াসিমের সাথে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, লাকসাম পৌরসভা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক মনির আহমেদ, কুমিল্লা দক্ষিন জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি জহিরুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ও দপ্তর সম্পাদক মো. ইউসুফ।
এ সময় গুরুতর আহত অবস্থায় লাকসামের যুবদল নেতা সফিউল্লাহর করুণ পরিনতি দেখে ক্ষুদ্ধ ভিপি ওয়াসিম বলেন, "লাকসাম কি দেশের মধ্যে আরেকটি দেশ? লাকসামে কি আইনের শাসন বলতে কিছু আছে? দীর্ঘসময় থেকে এখানে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন হচ্ছে ! কিছুদিন আগেও ধারাবাহিক ভাবে সপ্তাহব্যাপী প্রতিটি রাতে বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর, তাদের বাড়ীঘর ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব নারকীয় তান্ডব কোনভাবেই আর মেনে নেয়া যায় না। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে ইস্পাত কঠিন তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমি অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যার উদ্যেশ্যে সফিউল্লাহর উপর হামলাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।