অর্থনীতির সকল নিয়ম কানুন ভঙ্গ করে রাষ্ট্রের ক্ষতি করে চলেছে সরকার : বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩৪ পিএম, ৫ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৪০ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
সরকার অর্থনীতির সকল নিয়ম কানুন ভঙ্গ করে, রিজার্ভের সকল বিধি বিধান ভঙ্গ করে শুধুমাত্রা নিজেদের ঘনিষ্ঠ এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লাভবান করার জন্য রাষ্ট্রের এই ভয়াবহ ক্ষতি করে চলেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। সোমবার রাতে জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় বক্তরা এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ^র চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সভায় নিম্নবর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়।
১। সভায় বিগত ২০ জুন অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়।
২। সভায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উজান থেকে নেমে আসা বন্যার ফলে লক্ষ লক্ষ বন্যা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিএনপির ত্রাণ কমিটির আহ্বায়ক, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু আহ্বান জানিয়ে বন্যা পরিস্থিতি, ত্রাণ কমিটির গৃহীত উদ্যোগ, বন্যাদুগর্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, সারা দেশের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ত্রাণ কাজে অংশ গ্রহণ এবং অর্থ সংগ্রহ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থান করেন। সভা এখন পর্যন্ত গৃহীত পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করে এবং বন্যা পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য বিশেষ করে বন্যাবাহিত রোগ, ডায়রিয়া রোগের ঔষধ ও চিকিৎসা প্রদানের জন্য ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ ত্রাণ কমিটির বৈঠকে আগামী ৫ জুলাই পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সভা মনে করে সরকার বন্যা কবলিত এলাকায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বানভাসি মানুষের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ করে বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন সরকারের কর্মকান্ড দৃশ্যমান নয়। অবিলম্বে দুর্গত মানুষের মাঝে খাদ্য, বস্ত্র, গৃহ নির্মাণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থার জোর দাবি জানানো হয়।
৩। সভায় ‘ইডিএফ’ নাম দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরকারের শীর্ষ মহলের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাড় ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রদানের ফলে প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩৪.০২ বিলিয়ন ডলার। ঐ ধরনের প্রায় সবটাই (ফোর্সডলোন অধিকাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের) পর্যবসিত হয়েছে। আই.এম.এফ এই ধরনের ঋণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অন্তর্ভুক্ত না করতে বলেছে। এই সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার অবয়বে আর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সরকার অর্থনীতির সকল নিয়ম কানুন ভঙ্গ করে, রিজার্ভের সকল বিধি বিধান ভঙ্গ করে শুধুমাত্রা নিজেদের ঘনিষ্ঠ এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লাভবান করার জন্য রাষ্ট্রের এই ভয়াবহ ক্ষতি করে চলেছে। ‘ইডিএফ’ ঋণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে বিদেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি, ব্যবসা, স্থাপনা তৈরি করে দেশের অর্থনীতির ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করছে। শুদূরপ্রসারী প্রভাব সামাজিক অর্থনীতি ও সমগ্র অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে ফেলবে বলে অর্থনীতিবিদরা আশংকা করছেন। সভায় এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৪। সভায় সম্প্রতি সাভারে স্কুল শিক্ষক হত্যার ঘটনা, নড়াইলে অধ্যক্ষকে অপমানসহ সারা দেশে সামাজিক নৈরাজ্যের চিত্রে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। সভা মনে করে, এই অনির্বাচিত সরকারের কোনও দায়বদ্ধতা না থাকায়, সমাজের সকল পর্যায়ে নীতি নৈতিকতার চরম অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। সভা মনে করে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্ট এবং সরকার গঠনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সমাজ সৃষ্টি করলেই সমাজে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসতে পারে।
৫। সভায় দেশজুড়ে ‘জনশুমারী’ ও গৃহ গণনার কাজ সঠিকভাবে হয়নি বলে পরিকল্পনামন্ত্রীর স্বীকারোক্তিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। জনশুমারী প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এই সরকারের আমলে সব ধরনের সমীক্ষা জরিপ এবং তথ্য সংগ্রহের কাজ সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী হওয়ায় প্রকৃত তথ্য কখনই পাওয়া সম্ভব হয়নি। জনগণকে এবং বিশ^জনমতকে বিভ্রান্ত করার জন্য, দেশের উন্নয়ন সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করার জন্যই সরকার এই ধরনের নীতি বিবর্জিত কার্যকলাপ করে চলেছে। ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের সকল তথ্যের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। সভা এ বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। সঠিক পদ্ধতিতে প্রকৃত জনশুমারী ও গৃহ গণনার ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানায়।
৬। সভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫০তম অধিবেশনে উত্থাপিত ডিজিটাল যুগে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা জোরদার শীর্ষক প্রতিবেদনে ‘বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে’ সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। প্রমাণিত হয়েছে যে, এই সরকার সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করে গণতন্ত্রকে হরণ করছে।