জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের ‘উজ্জ্বল নক্ষত্র-মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০৬ এএম, ২০ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৫০ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ‘উজ্জ্বল নক্ষত্র’ অভিহিত করে তার অনুসৃত পথে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার বিকালে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র, মানুষের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, একদলীয় বাকশালী অন্ধকার থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের আদলের মধ্যে ঝুলিয়ে দেয়া-এগুলো ছিলো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে বড় কীর্তি। আমি মনে করি, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের সামনে সবসময় উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো থাকবেন। সেই উজ্জ্বল নক্ষত্রকে লক্ষ্য করেই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবো।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমরা একটা অত্যন্ত বিরূপ প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে আছি। এই বিরূপ প্রতিকূল অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ আমাদেরকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেখিয়েছেন এবং আমরা এখন দেখছি, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আজকে (গতকাল) যে বক্তব্য দিয়েছেন-এটা আমাদেরকে সেই দিক নির্দেশ করে, যে দিক নির্দেশের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে সক্ষম হবো, আমরা আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সক্ষম হবো এবং আমরা সত্যিকার অর্থেই একটি সুখি, সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, মানুষের বাংলাদেশ, আলোকিত বাংলাদেশ আমরা নির্মাণ করতে সক্ষম হবো। শুধু বলতে চাই, একটা কঠিন সময় আমরা পার করছি। একদিকে করোনাভাইরাসের আক্রমণ, অন্যদিকে একটা ফ্যাসিবাদী একনায়কতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী সরকারের রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেয়া, জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার যে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত- এটাকে প্রতিরোধ করে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে আবার সেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে স্বপ্ন ছিলো, সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে, তারেক রহমান যে স্বপ্ন দেখছেন তা বাস্তবায়ন করতে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দল-মত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের যে আদর্শ তাকে সামনে নিয়ে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মদিন তখনই সফল হবে, যদি আমরা তার অনুসৃত পথে এগিয়ে যেতে পারি। বিএনপির উদ্যোগে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সাড়ে ৫ ঘন্টা এই আলোচনা সভা হয়। ভার্চুয়াল এই আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। সারাদেশে মহানগর ও জেলা কার্যালয়ে নেতা-কর্মীরা সমবেত হয়ে এই ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নেয়।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে শুরু করে দেশ বিনির্মাণে যে যে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছে সেই সকল ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমান সফল। এর জন্য তারা জিয়াউর রহমান, তার পরিবার এবং তার প্রতিষ্ঠিত বিএনপিকে ভয় পায়। সেজন্য আপনারা দেখছেন, আওয়ামী লীগ গায়ের জোরে সরকারে আছে, তারা আজকে ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে আর ইতিহাসকে বিকৃত করছে। কেননা যদি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আজকের প্রজন্ম জানে, দেশের ৫০ বছরের ইতিহাস যদি জানে তাহলে আওয়ামী লীগের মুখ কোথাও থাকবে না। বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে বিএনপির নেতা-কর্মীদেরকে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা আজকে যে কথা বলতে পারছি তা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান, আজকে আওয়ামী লীগ যে কথা বলতে পারছে, রাজনীতি করতে পারছে- সেটাও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান। অথচ তারা অকৃতজ্ঞের মতো অস্বীকার করে শহীদ জিয়াউর রহমানের অবদান। তারা তার মুক্তিযুদ্ধের পদক ছিনিয়ে নিতে চায়। আরে মুক্তিযুদ্ধ যে শহীদ জিয়াউর রহমান করেছেন-এটা তো প্রতিষ্ঠিত সত্য। সেই পদক কীভাবে আপনারা ছিনিয়ে নেবেন, কিভাবে আপনারা মুক্তিযুদ্ধের সেই ইতিহাসকে মানুষের কাছ থেকে ভুলিয়ে দেবেন? জিয়াউর রহমান ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, ইতিহাসের নায়ক। সেই নায়ককে আপনারা সরাতে পারবেন না। একজন নায়কের অবস্থান সরাতে হলে আরেকজন নায়ক লাগবে। সেই নায়ক তো আপনাদের মাঝে নেই। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেটা তৈরি করেছেন হাজারো নায়ক যদি আসে কোনো লাভ হবে না। তিনি মানুষের হৃদয়ের স্থান করে নিয়েছেন। জিয়াউর রহমানকে ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জনক’ বলে অভিহিত করেন তিনি।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জিয়াউর রহমান আমাদের দৃশ্যের আড়ালে হলেও মনের আড়ালে নয়। আমি, আমরা, দেশ-বিদেশে গণতন্ত্রমনা মানুষ তাকে স্মরণ করে। তরুণরা শ্লোগান দেয়, জিয়া তোমায় মনে পড়ে। যতদিন গণতন্ত্র অন্ধকারে থাকবে, ততদিন গণতন্ত্র আলোর মুখ দেখবে না, ততদিন এদেশের মানুষ জিয়াকে মনে করবে।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বরিশাল মহানগরের মজিবুর রহমান সারোয়ার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, উত্তরের মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, চট্টগ্রাম মহানগরের আবুল হাশেম বক্কর, উত্তরের গোলাম আকবর খন্দকার, সিলেট মহানগরের নাসিম হোসাইন, কুমিল্লা মহানগরের হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াসীন, রাজশাহী মহানগরের মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, যশোরের অধ্যাপক নার্গিস বেগম, লালমনিরহাটের আসাদুল হাবিব দুলু বক্তব্য রাখেন। এছাড়া দলের অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সাইফুল ইসলাম নিরব, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন ও ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ।